বৃহস্পতিবার ০৩ এপ্রিল ২০২৫, চৈত্র ১৯ ১৪৩১, ০৪ শাওয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

সড়ক সংস্কারের অভাবে পর্যটক হারাচ্ছে বাঁশখালী ইকো পার্ক

 প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ২৩ মার্চ ২০২৫

সড়ক সংস্কারের অভাবে পর্যটক হারাচ্ছে বাঁশখালী ইকো পার্ক

চট্টগ্রামের অন্যমত পর্যটন স্পট বাঁশখালী ইকো পার্ক। পাহাড়, লেক, সবুজ প্রকৃতি এবং বনজ প্রাণীর অভয়ারণ্য নিয়ে ২০০৩ সালে গড়ে তোলা হয় এই ইকো পার্ক। অথচ সড়ক সংস্কারের অভাবে পর্যটক হারাচ্ছে বাঁশখালী ইকো পার্ক। 

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার এই ইকো পার্ক বিনোদন ও পর্যটন প্রেমীদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে প্রতিদিন। কিন্তু এই ইকো পার্কে যাবার সড়কের বেহাল অবস্থা পর্যটকদের বিনোদনের চেয়ে যন্ত্রণা দেয় বেশী। বাঁশখালী উপজেলার মূল সড়ক থেকে ইকো পার্কের দূরত্ব ৪.৩৯ কিলোমিটার। এইটুকু পথ পাড়ি দিতে পোহাতে হয় নানা ঝক্কি ঝামেলা। যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয়নি। যার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় পর্যটক থেকে শুরু থেকে স্থানীয়দের।

স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে অবশেষে ইকো পার্ক সড়কের সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ শুরু হলেও শেষ করা যায়নি। কখন শেষ হবে সে কথাও নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছে না। শুধু আশ্বাসেই থেকে যায়-দ্রুত শেষ হবে। 

সম্প্রতি ৪.৩৯ কিলোমিটার ইকো পার্ক সড়কের মধ্যে প্রথম ধাপে ৩ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হয়। ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সড়কের বাকি ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ বাকি থাকলেও তা কখন বরাদ্দ হবে তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে শুরু হওয়া ৩.৩৪ কিলোমিটারের কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের বাঁশখালী উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফাহাদ বিন মাহমুদ।

বাঁশখালী ইকো পার্কের অফিসার ইনচার্জ ইসরাঈল হক জানান, ২০০৩ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বাঁশখালী ইকো পার্ক। যাত্রার পর থেকে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয় পার্কটি। কিন্ত ২০০৮ সালে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ছড়ার বাঁধ ভেঙে ইকো পার্কের বেশ কিছু স্থাপনা ও হাইড্রো-ইলেক্ট্রনিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি তছনছ হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় আশানুরূপ উন্নয়ন বন্ধ থাকা এবং অধিকাংশ স্থাপনা সংস্কারহীন হয়ে পড়ায় পর্যটকরা বিমুখ হয়ে পড়ে।

পার্কে আসার একমাত্র সড়কটিরও ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় বড় ধরনের কোন গাড়ি বর্তমানে পার্কে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে জৌলুসহীন হয়ে পড়েছে পার্কটি। অথচ একসময় পাখির কিচিরমিচির শব্দ, নানান প্রজাতির পশু-পাখির বিচরণে মুখরিত থাকত পার্কটি। এলোমেলো অসংখ্য লেক, আঁকাবাঁকা রাস্তা, দুইটি ঝুলন্ত ব্রিজ, তিনটি পর্যটন টাওয়ার হতে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখার জন্য পর্যটকেরা প্রতিনিয়ত ভিড় করতো এ পার্কে।

তিনি বলেন, পার্কের বামের ছড়া ও ডানের ছড়ার পানি দিয়ে কয়েক শ’ একরজুড়ে হয়ে থাকে বোরো চাষ। সেটা রক্ষণাবেক্ষণ এবং লেকের পানিতে মাছ চাষ করে অনেক টাকা উপার্জন করার সুযোগ রয়েছে। শুধু প্রবেশ পথের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গাটি সরকারিভাবে লিজ দিয়ে প্রতিবছর আয় হচ্ছে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। ইকো পার্কে আসার একমাত্র সড়ক শীলকূপ মন ছুরিয়া বাজার থেকে ইকো পার্ক পর্যন্ত সরু সড়কটি বর্তমানে ১০ ফুট প্রসস্ত করে সংস্কার কাজ শুরু হলেও স্থানীয় জনগণ পার্কের বিভিন্ন স্থাপনার সংস্কারে উদ্যোগ নিতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। স্থানীয়রা পার্কটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বন বিভাগ ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

বাঁশখালী ইকো পার্কের সাবেক কর্মকর্তা ও জলদি অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জমান শেখ বাসসকে বলেন, বাঁশখালী ইকো পার্ককে যথাযথভাবে উন্নয়ন ও পর্যটন উপযোগী করা প্রয়োজন। তাতে করে সরকার আরো বেশি রাজস্ব পেত। তিনি জানান, পার্কের উন্নয়নে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এবং সেটি বাস্তবায়ন হলে পার্কটি পূর্বের অবস্থা ফিরে পাবে। একই কথা বললেন ইকো পার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ইসরাঈল হক। তিনি বলেন, পার্কের উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

বাঁশখালী উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফাহাদ বিন মাহমুদ বাসসকে বলেন, বাঁশখালী ইকো পার্কে ২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১০ ফুট প্রসস্ত করে ৩ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। বাকি আরো ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার সংস্কার কাজ কখন বরাদ্দ হবে নিশ্চিত বলা না গেলেও শুরু হওয়া কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে।