বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫, বৈশাখ ৩ ১৪৩২, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৬

প্রযুক্তি

ট্রাম্পের চিপস নীতি: এশিয়ার সঙ্গে টেক প্রতিযোগিতায় চ্যালেঞ্জের মুখে যুক্তরাষ্ট্র

ওএনপি২৪ নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: ১২:২৩, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

ট্রাম্পের চিপস নীতি: এশিয়ার সঙ্গে টেক প্রতিযোগিতায় চ্যালেঞ্জের মুখে যুক্তরাষ্ট্র

"যুক্তরাষ্ট্রে চিপস উৎপাদনের স্বপ্ন - ট্রাম্পের নীতি কি এশিয়ার সঙ্গে টেক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে?"

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে মাইক্রোচিপ উৎপাদনে পিছিয়ে পড়েছে — ২০২১ সালে তৎকালীন মার্কিন বাণিজ্য সচিব জিনা রাইমন্ডো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "আমরা বলটি ফেলে দিয়েছি।" চার বছর পরেও চিপস-কে ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রযুক্তিগত আধিপত্যের প্রতিযোগিতা তীব্রতর হয়েছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই জটিল ও বহু দশক ধরে গড়ে ওঠা উৎপাদন প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার দাবি, শুল্কনীতি মার্কিন অর্থনীতিকে মুক্ত করবে এবং দেশীয় কর্মসংস্থান বাড়াবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি এবং নিম্নমানের উৎপাদনের মতো সমস্যায় ভুগছে অনেক বড় কোম্পানি।

এশিয়ার 'সিক্রেট সস' এবং যুক্তরাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ
মাইক্রোচিপ এখন শুধু মোবাইল ফোন বা গাড়িতে নয়, মিলিটারি জেট থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক যানবাহন পর্যন্ত সবকিছুতেই অপরিহার্য। এই চিপস প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবিত হলেও বর্তমানে এশিয়ার দেশগুলো—বিশেষত তাইওয়ান, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া—বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত চিপ তৈরি করছে।

একটি সাধারণ আইফোনেও ব্যবহার হওয়া চিপ ডিজাইন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে, উৎপাদিত হয় তাইওয়ান বা কোরিয়ায়, প্রক্রিয়াজাত হয় ভিয়েতনামে, এবং চূড়ান্তভাবে একত্রিত ও পরীক্ষিত হয় চীনে—এবং শেষে পাঠানো হয় মার্কিন বাজারে।

ট্রাম্পের হুমকি ও বিনিয়োগ
ট্রাম্প একদিকে চিপ শিল্পকে প্রশংসা করছেন, অন্যদিকে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (TSMC)-কে হুমকি দিয়েছেন, যে তারা যদি যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা না করে তবে ১০০% শুল্ক দিতে হবে।

বাইডেন প্রশাসনের পাস করা CHIPS and Science Act-এর আওতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও কিছু বড় কোম্পানি যেমন TSMC ও Samsung, বিশাল অঙ্কের অনুদান ও ঋণ পেয়েছে। TSMC আরিজোনায় তিনটি প্লান্টের জন্য $৬.৬ বিলিয়ন অনুদান পেয়েছে, এবং Samsung টেক্সাসে একটি ফ্যাক্টরির জন্য প্রায় $৬ বিলিয়ন পেয়েছে।

তবে চ্যালেঞ্জ এখানেই শেষ নয়—এই কোম্পানিগুলো খরচ বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকট, নির্মাণ বিলম্ব এবং স্থানীয় ইউনিয়নের প্রতিবাদে ভুগছে।

টেক প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র কতটা প্রস্তুত?
TSMC'র মতে, তাদের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির চিপস এখনো তাইওয়ানেই তৈরি হবে। লেখক ক্রিস মিলার বলেছেন, "আমেরিকার প্লান্টগুলো এখনো তাইওয়ানের তুলনায় এক প্রজন্ম পিছিয়ে।"

বিশ্লেষক মার্ক আইনস্টাইনের মতে, "যুক্তরাষ্ট্র চিপস তৈরি করতে পারবে, কিন্তু তারা কি এক ন্যানোমিটার পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে? সম্ভবত না।"

তার মতে, ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিও বড় বাধা। চীন ও ভারত থেকে আসা দক্ষ পিএইচডি প্রকৌশলীদের আগমনে বাঁধা সৃষ্টি হলে প্রযুক্তিতে অগ্রগতি থেমে যেতে পারে।

বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্প চিপস খাতে জাতীয় নিরাপত্তা-ভিত্তিক শুল্ক তদন্ত চালু করেছেন। এতে জাপানসহ অনেক দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় প্রভাব পড়তে পারে, যেখানে চিপস উৎপাদন ছিল কেন্দ্রীয় ভূমিকায়।

চীন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র এখন নিজ নিজ দেশে চিপস উৎপাদন বাড়াতে চাচ্ছে। পাশাপাশি নতুন বাজার খুঁজছে চীনের হুয়াওয়ে, যেমন—থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, এবং আফ্রিকার দেশগুলো।

চিপস নিয়ে দর-কষাকষি?
চিপ নির্মাতারা শুধু শুল্কের উপর নির্ভর করছে না। অ্যাপল, মাইক্রোসফট, সিসকোর মতো কোম্পানির উপর নির্ভরতা ট্রাম্প প্রশাসনকে চাপে ফেলতে পারে। বলা হচ্ছে, অ্যাপল সিইও টিম কুকের লবির ফলেই কিছু ইলেকট্রনিক পণ্যে শুল্ক ছাড় দেয়া হয়েছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প TSMC-কে ইন্টেলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাধ্য করতে চাচ্ছেন—একটি অংশীদারিত্বমূলক চুক্তির মাধ্যমে যেন মার্কিন কোম্পানিও লাভবান হয়।

উপসংহার
ট্রাম্পের সুরক্ষামূলক নীতিতে চিপ ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করা খুব সহজ নয়। এশিয়ার দেশগুলো বহু দশক ধরে পারস্পরিক সহযোগিতা ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই খাতকে এতটা শক্তিশালী করেছে। তাই আধুনিক, দক্ষ এবং বড় পরিসরে চিপস উৎপাদন করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকেও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পথে হাঁটতে হবে।