সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ফাল্গুন ২৫ ১৪৩১, ১০ রমজান ১৪৪৬

ব্রেকিং

মব জাস্টিস-বিশৃঙ্খলাকারীদের জায়গা থেকেই গ্রেপ্তার: তথ্য উপদেষ্টা ধর্ষণ মামলায় জামিন পাওয়ার অধিকার আমরা রাখবো না: আইন উপদেষ্টা তারেক রহমানের উদ্যোগে মাগুরার সেই শিশুর জন্য আইনজীবী প্যানেল ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঈদের আগেই চলতি মাসের বেতন পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের বিচার করতে হবে: আইন উপদেষ্টা মাগুরার শিশুকে ধর্ষণ: ১৮০ দিনে বিচার শেষ করার নির্দেশ মাগুরার সেই শিশুর সব ছবি ইন্টারনেট থেকে অপসারণের নির্দেশ মাগুরার শিশুটিকে দেখলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বললেন ‘সরকার তৎপর’ কেরাণীগঞ্জে অন্তঃসত্ত্বা তরুণীকে ‘দলবেঁধে ধর্ষণ’, গ্রেপ্তার ২ ঈদের ট্রেনের আগাম টিকেট ১৪ মার্চ থেকে ধর্ষণের অভিযোগ, বাবা গ্রেপ্তার মাগুরায় শিশু ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে আদালত চত্বর ঘেরাও ছাত্র-জনতার গাজীপুরে শিশুকে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ, যুবক গ্রেপ্তার যৌন নিপীড়ন: নরসিংদীতে পিটুনি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘চুনকালি’ সীমান্তে গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের লাশ হস্তান্তর করেছে বিএসএফ গাজায় ২০ লাখের বেশি মানুষের খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই : আল জাজিরা বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বদলাতে পারে: ভারতীয় সেনাপ্রধান

প্রযুক্তি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যালগরিদমের ১০টি প্রধান সমস্যা

 প্রকাশিত: ১১:৪৭, ৩ মার্চ ২০২৫

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যালগরিদমের ১০টি প্রধান সমস্যা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম আমাদের কী ধরনের কনটেন্ট দেখা উচিত তা নির্ধারণ করে, যা আমাদের মতামত, আচরণ এবং আবেগকে প্রভাবিত করে। যদিও এই অ্যালগরিদমগুলো ব্যবহারকারীদের সম্পৃক্ততা (এনগেজমেন্ট) বাড়ানোর জন্য ডিজাইন করা, তবে এগুলোর কিছু গুরুতর নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। নিচে ১০টি প্রধান সমস্যা এবং প্রতিটির বিস্তারিত বিশ্লেষণ দেওয়া হলো—

১. ইকো চেম্বার ইফেক্ট (কনফার্মেশন বায়াস)
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম ব্যবহারকারীর আগ্রহ অনুযায়ী কনটেন্ট দেখায়, ফলে সে বারবার একই ধরনের মতামতের মুখোমুখি হয়। এতে গড়ে ওঠে ইকো চেম্বার, যেখানে ভিন্নমতের কনটেন্ট কমই দেখা যায়। সময়ের সাথে সাথে সমালোচনামূলক চিন্তার অভাব তৈরি হয়, সমাজে বিভাজন বাড়ে। যেমন, কেউ যদি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুসরণ করে, তাহলে সে শুধু সেই মতাদর্শের সমর্থনকারী পোস্টই বেশি দেখে। এতে ভিন্নমতের প্রতি অন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা চিন্তাভাবনাকে একপেশে করে তোলে।

২. ভুয়া খবর ও ভুল তথ্যের বিস্তার
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম সাধারণত বেশি লাইক, শেয়ার, কমেন্ট পাওয়া কনটেন্টকে অগ্রাধিকার দেয়, যার ফলে ভুয়া বা ভুল তথ্যযুক্ত পোস্ট অনেক সময় সত্যের চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এতে ব্যবহারকারীরা বিভ্রান্ত হয় এবং ভুল ধারণা গড়ে ওঠে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব প্ল্যাটফর্ম ভুল তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, যার ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও বেড়ে যায়। বিশেষ করে নির্বাচনের সময়, যখন মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে জনমত প্রভাবিত করা হয়, যা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফলের ওপরও প্রভাব ফেলে।

৩. অ্যালগরিদমিক আসক্তি (ডোপামিন লুপ)
ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারকারীদের বেশি সময় ধরে রাখার জন্য বিশেষ অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। ইনফিনিট স্ক্রলিং, নোটিফিকেশন ও ব্যক্তিগতকৃত রেকমেন্ডেশন ব্যবহারকারীর মস্তিষ্কে ডোপামিন ক্ষরণ বাড়ায়, যা আসক্তির সৃষ্টি করে। এতে ব্যক্তিগত সময়ের অপচয় হয় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

যেমন, কেউ মাত্র ৫ মিনিটের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে চাইলে, অ্যালগরিদমের চক্রে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রলিং করে সময় নষ্ট করে ফেলে।

৪. মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব (উদ্বেগ, বিষণ্নতা, আত্মবিশ্বাস হ্রাস)
সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম সাধারণত আবেগপ্রবণ কনটেন্টকে বেশি গুরুত্ব দেয়, বিশেষ করে ভয়, রাগ, বা হীনমন্যতা সৃষ্টিকারী পোস্টগুলোর প্রচার বাড়ায়। ফিল্টার করা, অতিরঞ্জিত ও সাজানো জীবনধারার কনটেন্ট দেখে ব্যবহারকারীরা নিজেদের জীবন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বাড়ায়।

যেমন, ইনস্টাগ্রামে নিখুঁতভাবে ফটোশপ করা ইনফ্লুয়েন্সারদের ছবি দেখে অনেক ব্যবহারকারী নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ মনে করে, যা তাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৫. ব্যবহারকারীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করা
সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম বিজ্ঞাপন, রাজনৈতিক প্রচারণা ও জনমত গঠনে বিশাল ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন কোম্পানি ও রাজনৈতিক দল এই অ্যালগরিদমকে কাজে লাগিয়ে নির্দিষ্ট বার্তা ছড়িয়ে দিতে ও জনমত পরিবর্তন করতে পারে। ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা প্রমাণ করেছে, কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলা সম্ভব।

যেমন, অনলাইন শপিংয়ের ক্ষেত্রে, আমাদের ব্রাউজিং ডাটা ব্যবহার করে নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন দেখানো হয়, যা আমাদের কেনাকাটার অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করে।

৬. ঘৃণাত্মক বক্তব্য ও নেতিবাচকতার বিস্তার
বিতর্কিত ও চরমপন্থী কনটেন্ট সাধারণত বেশি এনগেজমেন্ট পায়, যার ফলে অ্যালগরিদম এগুলোকে আরও বেশি প্রচার করে। এই কারণে ঘৃণাত্মক মন্তব্য, সাইবার বুলিং এবং উগ্রবাদী কনটেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যদিও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো মাঝে মাঝে এসব কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, তবে তারা পুরোপুরি সফল হয় না।

উদাহরণস্বরূপ, অনেক চরমপন্থী গোষ্ঠী সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে তাদের মতবাদ প্রচার করে এবং নতুন অনুসারী সংগ্রহ করে।

৭. গোপনীয়তা লঙ্ঘন ও তথ্যের অপব্যবহার
সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে এবং তা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে। লোকেশন, ব্রাউজিং হিস্ট্রি, লাইক ও ইন্টারঅ্যাকশন পর্যবেক্ষণ করে ব্যবহারকারীর একটি বিশদ প্রোফাইল তৈরি করা হয়। অনেক সময় এই তথ্য তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করা হয়, যা ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে।

উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি গুগলে একটি পণ্যের সন্ধান করেন, তবে কিছু মিনিটের মধ্যে ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকে সেই পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখতে পারেন, যা এই তথ্য সংগ্রহের একটি উদাহরণ।

৮. বৈষম্যমূলক কনটেন্ট দৃশ্যমানতা (অ্যালগরিদমিক পক্ষপাত)
সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম কিছু নির্দিষ্ট কনটেন্টকে বেশি প্রচার করে, যা বিদ্যমান বৈষম্য ও পক্ষপাত আরও দৃঢ় করে। অনেক ছোট নির্মাতা (ক্রিয়েটর) বা সংখ্যালঘু গোষ্ঠী কম দৃশ্যমানতা পান, যার ফলে তাদের কাজের প্রভাব সীমিত হয়ে যায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালগরিদম নির্দিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর কনটেন্ট দমন করে।

উদাহরণস্বরূপ, ইনস্টাগ্রামের অ্যালগরিদম নির্দিষ্ট শরীরের গঠনের ছবি বেশি দেখায়, যা অবাস্তব সৌন্দর্যের মানদণ্ড তৈরি করে এবং ব্যবহারকারীদের মধ্যে শারীরিক বৈষম্যের অনুভূতি সৃষ্টি করে।

৯. অর্গানিক রিচ কমে যাওয়া (বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরতা)
আগে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে বিনামূল্যে কনটেন্ট ছড়িয়ে দেওয়া যেত, কিন্তু এখন পেইড বিজ্ঞাপন ছাড়া কনটেন্ট দেখা কঠিন হয়ে পড়েছে। ছোট ব্যবসা ও স্বাধীন নির্মাতারা তাদের দর্শক পৌঁছানোর জন্য বিজ্ঞাপনে টাকা খরচ করতে বাধ্য হন।

উদাহরণস্বরূপ, ফেসবুকে এখন ৫% এরও কম অনুসারী একটি পেজের পোস্ট স্বাভাবিকভাবে দেখতে পান, এবং বাকি কনটেন্ট বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভর করে, যার ফলে ছোট ব্যবসাগুলোর জন্য অর্গানিক রিচ সীমিত হয়ে যায়।

১০. নিম্নমানের ও ক্লিকবেইট কনটেন্টের আধিক্য
অ্যালগরিদম সাধারণত এনগেজমেন্ট বেশি পাওয়া কনটেন্টকে বাড়তি গুরুত্ব দেয়, যার ফলে মানহীন, বিভ্রান্তিকর ও ক্লিকবেইট কনটেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এটি দীর্ঘ, অর্থবহ আলোচনার পরিবর্তে সস্তা, ভাইরাল কনটেন্টের প্রচার বাড়ায়, যা ব্যবহারকারীদের কাছে কম মানের কনটেন্ট পৌঁছে দেয়।

উদাহরণস্বরূপ, অনেক ইউটিউব ক্রিয়েটর বিভ্রান্তিকর থাম্বনেইল ও অতিরঞ্জিত শিরোনাম ব্যবহার করে, যাতে তারা বেশি ক্লিক পায়, এমনকি কনটেন্টের মান কম থাকলেও।