২০২৫ সালের জন্য টেক ইন্ড্রাস্ট্রিতে সর্বাধিক চাহিদার ১০টি পেশা

প্রযুক্তি খাতের দ্রুত পরিবর্তন এবং উদ্ভাবনের কারণে বিশ্বজুড়ে এই সব সেক্টরে কর্মসংস্থানের চাহিদা খুব দ্রুত গতিতে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী বছরগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ডেটা বিশ্লেষণ, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং সাইবার নিরাপত্তার মতো প্রযুক্তিগত দক্ষতাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ২০২৫ সাল হবে প্রযুক্তি কর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর, যেখানে দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের জন্য অসংখ্য সুযোগ তৈরি হবে।
প্রযুক্তি খাতের বর্তমান পরিস্থিতি ও কর্মসংস্থানের প্রবণতা
গত কয়েক বছরে প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তি খাত প্রথমবারের মতো ১.১ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্য অতিক্রম করেছে, যা এটিকে ইউরোপের বৃহত্তম এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম প্রযুক্তি ইকোসিস্টেমে পরিণত করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তি শিল্পে ডিজিটাল স্কিল গ্যাপ বা দক্ষতার অভাব দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে।
২০২৫ সালের জন্য বিশেষজ্ঞরা যে ১০টি প্রযুক্তি পেশাকে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
১. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও মেশিন লার্নিং প্রকৌশলী
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং বর্তমানে বিশ্বের প্রযুক্তি খাতকে পুনর্গঠিত করছে। ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা, স্বয়ংক্রিয় যানবাহন, ই-কমার্সসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২০২৫ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞদের চাহিদা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি হবে।
২. ডেটা বিজ্ঞানী ও ডেটা বিশ্লেষক
প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তথ্য-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্ব দিচ্ছে। ডেটা বিজ্ঞানী এবং বিশ্লেষকরা বিশাল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করেন। উন্নত বিশ্লেষণ, পূর্বাভাসমূলক মডেল তৈরি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই পেশার গুরুত্ব বেড়েই চলেছে।
৩. সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ
সাইবার অপরাধ ও তথ্য চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্পোরেট সংস্থা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
৪. ক্লাউড ইঞ্জিনিয়ার
প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ক্লাউড-ভিত্তিক অবকাঠামো ব্যবহার করছে, যেখানে ক্লাউড কম্পিউটিং প্রযুক্তির গুরুত্ব প্রতিনিয়ত বাড়ছে। অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস (AWS), গুগল ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম (GCP) এবং মাইক্রোসফট আজুর (Azure)-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ায় দক্ষ ক্লাউড ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বাড়ছে।
৫. ডেভঅপস (DevOps) ইঞ্জিনিয়ার
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও অপারেশনস একীভূত করে DevOps পদ্ধতি সফটওয়্যার উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি করে এবং স্বয়ংক্রিয়তার মাধ্যমে নির্ভরযোগ্যতা বাড়ায়। DevOps ইঞ্জিনিয়াররা সফটওয়্যার ডেলিভারির প্রতিটি ধাপ সহজ ও কার্যকর করতে সাহায্য করেন।
৬. ফুল স্ট্যাক ডেভেলপার
ফ্রন্টএন্ড (ইউজার ইন্টারফেস) এবং ব্যাকএন্ড (সার্ভার ও ডাটাবেস) উভয় ক্ষেত্রেই কাজ করতে পারা ডেভেলপারদের চাহিদা বাড়ছে। ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে এই দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
৭. ব্লকচেইন ইঞ্জিনিয়ার
ব্লকচেইন কেবল ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্যই ব্যবহৃত হয় না; এটি এখন ব্যাংকিং, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, স্মার্ট কন্ট্রাক্ট এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ব্লকচেইন প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে দক্ষ ব্লকচেইন ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
৮. UX/UI ডিজাইনার
ডিজিটাল পণ্যের ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করা এবং আকর্ষণীয় ডিজাইন তৈরি করা UX/UI ডিজাইনারদের মূল কাজ। প্রযুক্তি খাতে প্রতিযোগিতা বাড়ার কারণে ওয়েবসাইট ও অ্যাপ ডিজাইনে দক্ষ ডিজাইনারদের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৯. প্রোডাক্ট ম্যানেজার
একটি প্রযুক্তি পণ্যের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও বাজারজাতকরণে প্রোডাক্ট ম্যানেজাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোতে নতুন পণ্য তৈরি ও উন্নত করার ক্ষেত্রে এই পেশার গুরুত্ব বেড়েই চলেছে।
১০. নেটওয়ার্ক ও সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর
প্রতিষ্ঠানগুলোর আইটি অবকাঠামো পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ নেটওয়ার্ক ও সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের প্রয়োজন হয়। ডাটা সেন্টার, কর্পোরেট নেটওয়ার্ক এবং সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই পেশার গুরুত্ব অপরিসীম।
ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রযুক্তি খাতে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহীদের জন্য AI, ডেটা বিজ্ঞান, ক্লাউড কম্পিউটিং, সাইবার নিরাপত্তা, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও ব্লকচেইন প্রযুক্তি শেখার উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি শিল্পের অগ্রগতি এবং ডিজিটাল রূপান্তরের ফলে ২০২৫ সালে এই পেশাগুলোর চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দক্ষতা উন্নয়নে যারা সময় বিনিয়োগ করবেন, তারা ভবিষ্যতের প্রযুক্তি খাতে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারবেন।