বৃহস্পতিবার ০৩ এপ্রিল ২০২৫, চৈত্র ১৯ ১৪৩১, ০৪ শাওয়াল ১৪৪৬

খেলা

হতশ্রী ব্রাজিলকে নিয়ে ছেলেখেলা করল আর্জেন্টিনা

 প্রকাশিত: ০৯:৩২, ২৬ মার্চ ২০২৫

হতশ্রী ব্রাজিলকে নিয়ে ছেলেখেলা করল আর্জেন্টিনা

ভিনিসিউস-রদ্রিগোকে সেভাবে খুঁজেই পাওয়া গেল না, রাফিনিয়া মাঝেমধ্যে কেবল একটু ঝলক দেখালেন, মাঠের সবখানেই এমন বর্ণহীন হয়ে রইল ব্রাজিল। বিপরীতে, চোটজর্জর দল নিয়েও আত্মবিশ্বাসী পারফরম্যান্স উপহার দিল আর্জেন্টিনা। দলগত ফুটবলে পুরোটা সময় আধিপত্য করে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের উড়িয়ে দিল লিওনেল স্কালোনির দল।

বুয়েনস আইরেসের মনুমেন্তালে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকালে ৪-১ গোলে জিতেছে স্বাগতিকরা। তাদের চার গোলদাতা হলেন- হুলিয়ান আলভারেস, এনসো ফের্নান্দেস, আলেক্সিস মাক আলিস্তের ও জুলিয়ানো সিমেওনে।

লিওনেল মেসি, লাউতারো মার্তিনেস, পাওলো দিবালাসহ নিয়মিত একাদশের আরও কয়েকজনকে ছাড়া বিশ্বকাপ বাছাইয়ের এই পর্বের দুই ম্যাচ খেলতে হলো আর্জেন্টিনাকে। চার দিন আগে উরুগুয়ের বিপক্ষে জিততে কষ্ট হলেও, ঘরের মাঠে আরও বড় চ্যালেঞ্জে নেমে হেসেখেলেই জয় তুলে নিল স্কালোনির দল।

মাঠে নামার আগেই বিশ্বকাপের টিকেট পাওয়ার সুখবর পায় আর্জেন্টিনা। এদিনই আগের ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে বলিভিয়া গোলশূন্য ড্র করলে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ ছয়ে জায়গা পাকা হয়ে যায় তাদের।

উপলক্ষটা দুর্দান্ত জয়ে রাঙাল তারা। পুরো ম্যাচে প্রায় ৫৫ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ১২টি শট নিয়ে সাতটি লক্ষ্যে রাখতে পারে আর্জেন্টিনা। সেখানে ব্রাজিল নিতে পারে মোটে তিনটি শট, ওই একটিই ছিল লক্ষ্যে।

১৪ ম্যাচে ১০ জয় ও ১ ড্রয়ে আর্জেন্টিনার পয়েন্ট ৩১।

আরেক ম্যাচে চিলির সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করা একুয়েডর ২৩ পয়েন্ট নিয়ে আছে দ্বিতীয় স্থানে। সমান ২১ পয়েন্ট নিয়ে পরের তিনটি স্থানে আছে যথাক্রমে উরুগুয়ে, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে।

চেনা আঙিনায় ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ পেয়েই আঘাত হানে আর্জেন্টিনা। তিয়াগো আলমাদার বাড়ানো বল বক্সে পেয়ে হারাতে বসেছিলেন আলভারেস; তবে ভাগ্য তার সহায় হয়। দুই ডিফেন্ডার গিয়ের্মে আরানা ও মুরিলোর মাঝ দিয়ে এগোনোর পথে আরানার পায়ে লেগে আসা বল নিচু শটে জালে পাঠান ম্যানচেস্টার সিটি তারকা।

ওই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই দ্বিতীয় গোল হজম করে ব্রাজিল। নিজেদের সীমানা থেকে ছোট ছোট পাসে আক্রমণে উঠে নাহুয়েল মোলিনা ডান দিক থেকে ব্রাজিলের বক্সে পাস বাড়ান, মাঝপথে প্রতিপক্ষের একজনের পায়ে লেগে আসা বল ছয় গজ বক্সে পেয়ে জালে ঠেলে দিতে ভুল করেননি চেলসি মিডফিল্ডার এনসো ফের্নান্দেস।

শুরু থেকে বল দখলেও অনেক পিছিয়ে থাকা ব্রাজিল ২৬তম মিনিটে গোলের জন্য প্রথম শট নিয়েই সাফল্য পায়। গোলটির পেছনে অবশ্য পুরো দায় ক্রিস্তিয়ান রোমেরোর। ডি-বক্সের বাইরে বল অনেক্ষণ পায়ে রাখেন এই ডিফেন্ডার, সেই সুযোগে ছুটে গিয়ে তার থেকে বল কেড়ে নিয়ে নিচু শটে গোলটি করেন উলভসের ফরোয়ার্ড মাথেউস কুইয়া।

পুরো ম্যাচে গোলের উদ্দেশ্যে এই একটি শটই নিতে পারে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের খুঁজে ফেরা ব্রাজিল।

৩৬তম মিনিটে আবার দুই গোলে এগিয়ে যেতে পারতো আর্জেন্টিনা। তবে এই যাত্রায় আলমাদার জোরাল শট অসাধারণ নৈপুণ্যে ঝাঁপিয়ে আটকান গোলরক্ষক বেন্তো।

যদিও পরের মিনিটেই স্কোরলাইন ৩-১ করে স্বাগতিকরা। এনসো ফের্নান্দেসের দারুণ ক্রস বক্সে পেয়ে চমৎকার ভলিতে আগুয়ান গোলরক্ষকের ওপর দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন মাক আলিস্তের।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন আনেন ব্রাজিল কোচ। মুরিলো, জোয়েলিনতন ও রদ্রিগোকে তুলে নিয়ে মাঠে নামান ওরচিজ, জোয়াও গোমেজ ও এন্দ্রিককে।

তবে এতে ব্রাজিলের সাদামাটা পারফরম্যান্সে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বরং আর্জেন্টিনাই বারবার আক্রমণে উঠছিল। ৪৭তম মিনিটে আলভারেসের হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া শটে বল ক্রসবার ঘেঁষে জালে জড়াতে যাচ্ছিল, শেষ মুহূর্তে একহাত দিয়ে ঠেকিয়ে ব্যবধান বাড়তে দেননি বেন্তো।

৬৮তম মিনিটে মিডফিল্ডার আলমাদাকে তুলে ফরোয়ার্ড জুলিয়ানো সিমেওনেকে নামান কোচ স্কালোনি। মাঠে নামার তিন মিনিটের মধ্যে দৃষ্টিনন্দন গোল উপহার দেন আতলেতিকো মাদ্রিদের এই ফরোয়ার্ড; নিকোলাস তাগলিয়াফিকোর পাস বক্সে পেয়ে কোনাকুনি শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন সিমেওনে।

ছয় মিনিট পর দারুণ এক গোলের সম্ভাবনা জাগিয়েও হতাশ হতে হয় রাফিনিয়াকে। অনেক দূর থেকে নেওয়া তার ফ্রি কিকে বল ক্রসবারের ওপরের অংশে লাগে। বাকি সময়ে আর কোনো সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি তারা।

আর্জেন্টিনার বিপক্ষে এই নিয়ে ব্রাজিলের জয় খরা বেড়ে হলো পাঁচ ম্যাচ, এর মধ্যে চারটিই হেরেছে তারা। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা সবশেষ জিতেছিল সেই ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকায়।