বাংলাদেশের হয়ে আর খেলবেন না তামিম ইকবাল
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিম ইকবালের পথচলা থমকে ছিল অনেক দিন ধরেই। এবার তা পুরোপুরিই থামিয়ে দিলেন তিনি। বাংলাদেশের জার্সিতে আর দেখা যাবে না দেশের সফলতম ওপেনারকে।
সামাজিক মাধ্যমে শুক্রবার রাতে বিদায়ের এই ঘোষণা জানান তামিম।
আগামী মাসে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তামিমকে দলে পেতে বুধবার সিলেটে তার সঙ্গে দুই দফায় বৈঠক করে নির্বাচক কমিটি। পরে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন জানান, সিদ্ধান্ত জানাতে সময় নিয়েছেন অভিজ্ঞ এই ওপেনার।
বিপিএলে সিলেট পর্বে ফরচুন বরিশালের খেলা শেষে শুক্রবার সকালে ঢাকায় ফেরেন তামিম। বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, রাতেই তিনি বোর্ডকে জানিয়ে দেন নিজের সিদ্ধান্ত।
বিদায়ী বার্তায় তামিম লিখেছেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে দলের মনোযাগ বিঘ্ন করার কারণ হতে চান না তিনি।
"আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে আছি অনেক দিন ধরেই। সেই দূরত্ব আর ঘুচবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অধ্যায় শেষ।"
"অনেক দিন ধরেই এটা নিয়ে ভাবছিলাম। এখন যেহেতু সামনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় একটি আসর সামনে, আমি চাই না আমাকে ঘিরে আবার অলোচনা হোক এবং দলের মনোযোগ ব্যাহত হোক।"
তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩৯১ ম্যাচ আর ১৫ হাজার ২৪৯ রান নিয়ে শেষ হলো তামিমের ক্যারিয়ার। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আন্তজার্তিক ক্রিকেটে তিনি দ্বিতীয় সফলতম। ১৫ হাজার ৩০০ রান নিয়ে সবার ওপরে মুশফিকুর রহিম। এছাড়াও অনেক রেকর্ড-অর্জন ধরা দিয়েছে দার গৌরবময় পথচলায়, ব্যাটিং মাইলফলকের অনেকগুলোতে তিনি ছিলেন দেশের প্রথম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত দেশকে উপহার দিয়েছে তার ব্যাট।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের জার্সিতে শেষবার মাঠে নেমেছেন তিনি। ওই সিরিজের পর ওয়ানডে বিশ্বকাপের দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি। এরপর তার আর ফেরা হলো না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।
টেস্ট ক্রিকেটে তিনি শেষবার খেলেছেন ২০২৩ সালের এপ্রিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায়ের ঘোষণা জানিয়ে দেন তিনি ২০২২ সালের জুলাইয়ে।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে জাতীয় দল থেকে সরে দাঁড়ানোর পর শুধু ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও বিপিএল খেলছিলেন তামিম। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি। তার পরও তার দলে ফেরা বা অবসর নিয়ে আলোচনা ছিল নিত্য। বিদায় বেলায় সেটি নিয়ে অনুযোগও করলেন তামিম।
"অনেক আগে নিজেকে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছি। যদিও অনেকেই বলেছেন, অনেক সময় মিডিয়ায় এসেছে, আমিই নাকি ব্যাপারটি ঝুলিয়ে রেখেছি। কিন্তু বিসিবির কোনো ধরনের চুক্তিতে যে নেই, এক বছরের বেশি সময় আগে যে নিজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, তাকে পরিকল্পনায় রাখা বা তাকে নিয়ে আলোচনারও তো কিছু নেই। তার পরও অযথা আলোচনা হয়েছে। অবসর নেওয়া বা খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত একজন ক্রিকেটার বা যে কোনো পেশাদার ক্রীড়াবিদের নিজের অধিকার। আমি নিজেকে সময় দিয়েছি। এখন মনে হয়েছে, সময়টা এসে গেছে।"
নির্বাচক কমিটির সঙ্গে বৈঠকের আগের রাতে তামিমের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলে তাকে দলে ফেরার অনুরোধ জানান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। গত দুই দিনেও অধিনায়ক চেষ্টা করেছেন পূর্বসূরীকে রাজি করাতে। তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তামিম।
"অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আন্তরিকভাবেই আমাকে ফেরার জন্য বলেছে। নির্বাচক কমিটির সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আমাকে এখনও উপযুক্ত মনে করার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তবে আমি নিজের মনের কথা শুনেছি।"
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগের অভিজ্ঞতায় হৃদয়ে যে চোট লেগেছিল তামিমের, সেই ক্ষত সারেনি এখনও। তার পরও ভক্তদের ভালোবাসা আর নিজের ছেলের চাওয়ার কথা ভেবেছেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদলাননি।
"২০২৩ বিশ্বকাপের আগে যা হয়েছে, আমার জন্য তা বড় ধাক্কা ছিল, যেহেতু ক্রিকেটীয় কারণে আমি দলের বাইরে যাইনি। তার পরও আমি যেখানেই গিয়েছি, ক্রিকেট ভক্তদের অনেকে বলেছেন, আমাকে আবার জাতীয় দলে দেখতে চান। তাদের ভালোবাসার কথা ভেবেছি আমি। আমার ঘরেও একজন অনুরাগী আছে। আমার ছেলে কখনও আমাকে সরাসরি বলেনি, কিন্তু তার মাকে বারবার বলেছে, বাবাকে আবার দেশের জার্সিতে খেলতে দেখতে চায়।
"ভক্তদের হতাশ করার জন্য আমি দুঃখিত। ছেলেকে বলছি, ‘তুমি যেদিন বড় হবে, সেদিন বাবাকে বুঝতে পারবে।’