বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, মাঘ ২ ১৪৩১, ১৫ রজব ১৪৪৬

খেলা

ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের সর্বোচ্চ সম্মাননা পেলেন ক্লাইভ লয়েড

 প্রকাশিত: ১২:০৬, ৩১ জুলাই ২০২৪

ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের সর্বোচ্চ সম্মাননা পেলেন ক্লাইভ লয়েড

ক্রিকেটের ইতিহাসে ক্লাইভ লয়েড অমর হয়ে থাকবেন কিংবদন্তি হিসেবে। তবে তার আবেদন তো স্রেফ ক্রিকেটে সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বমঞ্চে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের উজ্জ্বল এক প্রতিনিধিও তিনি। সেই স্বীকৃতিই এবার আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হলো তাকে। দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী প্রথম অধিনায়ক পেলেন অর্ডার অব দা ক্যারিবিয়ান কমিউনিটি (ওসিসি) পুরস্কার। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের সর্বোচ্চ সম্মাননা এটিই।

কনফারেন্স অব দা হেডস অব দা ক্যারিবিয়ান কমিউনিটি-ক্যারিকমের ৪৭তম নিয়মিত সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।

১৯৬৬ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১১০ টেস্টে ১৯ সেঞ্চুরিতে ৪৬.৬৭ গড়ে ৭ হাজার ৫১৫ রান করেছেন লয়েড। ৮৭ ওয়ানডে খেলে রান ৩৯.৫৪ গড়ে ১ হাজার ৯৭৭। দারুণ আগ্রাসী ব্যাটসম্যান ছিলেন, বোলারদের গুঁড়িয়ে দিতে তার জুড়ি ছিল না। ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি গ্রেট, তবে ক্রিকেটে তিনি সবচেয়ে বেশিশ ছাপ রেখেছেন অধিনায়ক হিসেবে।

বিশ্ব ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাথা তুলে দাঁড়ানো ও সেরা হয়ে ওঠার মূল নায়ক মনে করা হয় তাকেই। অধিনায়ক হিসেবে যেমন দুর্দান্ত কৌশলী ছিলেন, তেমনি ক্যারিবিয়ানের বিভিন্ন অঞ্চলের খ্যাপাটে-প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের এক সুতোয় গেঁথে একই মন্ত্রে উজ্জীবিত করার কাজটি তিনি করেছিলেন নিখুঁতভাবে।

তার নেতৃত্বেই ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ বিশ্বকাপ জয় করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথমটির ফাইনালে ৮২ বলের বিধ্বংসী ইনিংসে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেন তিনি, এখনও যেটিকে মনে করা হয় ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ইনিংসগুলির একটি। তার সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে রাজত্ব করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এক পর্যায়ে টানা ১১ সিরিজ জয় ও টানা ২৭ সিরিজে অপরাজেয় থাকার অসাধারণ কীর্তি গড়ে ক্যারিবিয়ানরা। ক্রিকেট ইতিহাসেরই সেরা অধিনায়কদের একজন মনে করা হয় তাকে।

খেলোয়াড়ি জীবন ছাড়ার পরও ক্রিকেট ছেড়ে যাননি লয়েড। ‘সুপার ক্যাট’ নামে পরিচিত তারকা পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যানেজার হয়েছে, কোচ হয়েছেন, নির্বাচক হিসেবে কাজ করেছেন। আইসিসির ম্যাচ রেফারি হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। নিজ দেশ গায়ানার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও কাজ করেছেন। ২০০৯ সালে আইসিসির হল অব ফেম-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাকে। ২০২২ সালে দেওয়া হয় ‘নাইটহুড’ উপাধি। এখনও ক্রিকেটের বিভিন্ন বিশ্ব আসরে তাকে দেখা যায় দূত হিসেবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সম্মাননা নিয়ে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান ৭৯ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি।

“আপনাদের মাঝে উপস্থিত থাকতে পেরে এবং আমাকে অর্ডার অব দা ক্যারিবিয়ান কমিউনিটির যোগ্য হিসেবে বিবেচনায় করায় আমি সম্মানিত বোধ করছি। এই অঞ্চলের প্রতি আমার কাজের জন্য এই স্বীকৃতি দেওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ।

ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের সভাপতি কিশোর শ্যালো উপস্থিত ছিলেন এই আয়োজনে। তার কথায় ফুটে ওঠে, ক্রিকেট ও ক্যারিবিয়ানের জন্য লয়েডের অবস্থান কোন উচ্চতায়।

“এই সম্মান তার জন্য খুবই উপযুক্ত, যিনি শুধু ক্রিকেট মাঠেই উৎকর্ষের চূড়ান্ত উদাহরণ মেলে ধরেননি, বরং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ও গোটা বিশ্বের জন্যই প্রেরণা ও নেতৃত্বের অটুট এক স্তম্ভ। ক্রিকেটের প্রতি স্যার ক্লাইভের নিবেদন ও খেলাটির উন্নতিতে তার অবদান অতুলনীয়।”

“স্যার ক্লাইভের লিগ্যাসি অনুরণিত হয় প্রতিটি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানের মধে। সত্যিকারের একজন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মানদণ্ডকে তুলে ধরে তার নেতৃত্ব, প্রতিজ্ঞা এবং স্পোর্টসম্যানশিপ। আমাদের অঞ্চলে ও ক্রিকেট খেলাটায় তার চিরস্থায়ী প্রভাবের প্রমাণ এই স্বীকৃতি। তার সঙ্গে এই মুহূর্তটি উপভোগ করতে পেরে আমরা সম্মানিত।”