শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, বৈশাখ ৬ ১৪৩২, ২০ শাওয়াল ১৪৪৬

ব্রেকিং

হবিগঞ্জে ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষে দুই নারীসহ ৪ জন নিহত টাকা পাচার বন্ধে ব্যাংক রেজোল্যুশন অধ্যাদেশ পাস বিএনপির সঙ্গে বিরোধ? এটা কোনো বিরোধই না: জামায়াত আমির সংস্কারে একমত না হলে নির্বাচন পেছাবে: জামায়াত আমির সংস্কারে সিরিয়াস বিএনপি: সালাহউদ্দিন হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞার হুমকি ট্রাম্প প্রশাসনের বাংলাদেশের মন্তব্যকে ‌‘অপ্রয়োজনীয় ও লোক দেখানো’ বললো ভারত প্রায় ১৫ বছর পর ঢাকা ও ইসলামাবাদের এফওসি’র আয়োজন ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটে ‘বিভ্রান্ত’ বিএনপি ১২ অঞ্চলের নদীবন্দরে সতর্ক সংকেত আপিল বিভাগের নতুন দুই বিচারপতির সংবর্ধনা রোববার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি গ্যাসের দামে ভেদাভেদ: ‘পিছিয়ে পড়বেন’ নতুন উদ্যোক্তারা রাশিয়ার কাছে কেন মার্কিন যুদ্ধবিমান হারাচ্ছে ইউক্রেন? মেয়ের জন্য চাকরি চান শহীদ বাচ্চুর স্ত্রী লাইলি বেগম

স্পেশাল

মেয়ের জন্য চাকরি চান শহীদ বাচ্চুর স্ত্রী লাইলি বেগম

 আপডেট: ১১:২১, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

মেয়ের জন্য চাকরি চান শহীদ বাচ্চুর স্ত্রী লাইলি বেগম

রাজধানী ঢাকার আদাবর থানার সামনে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয় মিছিলে পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন পটুয়াখালীর মো. বাচ্চু (৪৭)। তিনি পটুয়াখালী সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের শারিকখালী গ্রামের মৃত আবদুল মজিদ হাওলাদারের পুত্র ও মৃত মাতা মানিক বরুর সন্তান।

সরেজমিনে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর প্রতিবেদকের সাথে স্বামী হারানোর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শহীদ বাচ্চুর স্ত্রী লাইলি বেগম (৩৫) বলেন, ৫ আগস্টের ঘটনা। খুনি হাসিনার বিদায়ে আনন্দ মিছিল চলছে ঢাকাজুড়ে। তিনটার দিকে তিনি আমাকে বলেছেন, আমাকে ভাত দাও, আমি মিছিলে যাব।

‘হাসিনা পালিয়েছে, আজ দেশ স্বাধীন’

আমি বললাম, মিছিলে যাওয়ার দরকার নেই। গোলাগুলি হতে পারে। সে বলল, না, আজ গোলাগুলি হবে না। হাসিনা পালিয়েছে। আজ দেশ স্বাধীন। দেশে খুনি হাসিনা নেই। পরে ভাত খেয়ে বের হয়ে আনন্দ মিছিলে যোগ দেয়। ঠিক বিকেল ছয়টার দিকে তার বন্ধু এসে বলল, ভাবী বাচ্চু কোথায়? তাড়াতাড়ি বোরকা পরেন, মেডিকেলে যেতে হবে।

পরে বাচ্চুর বন্ধুকে জানতে চাইলাম আমার স্বামীর কী হইছে? জবাবে সে বলল, গুলি খেয়ে আহত হয়েছে। ভয়ের কিছু নাই। বাচ্চু সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার স্বামী আর নেই। একটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। আমাকে বলা হলো, বাচ্চু পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার পরে পপুলার হাসপাতালে নেয়া হয়।

‘আমার বন্ধু হেলালকে ফোন দাও’

পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে সোহরাওয়ার্দীতে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই মারা যায় আমার স্বামী। গুলিবিদ্ধ আহত অবস্থায় ফোনের লক খুলে শুধু পথচারীকে একটা কথাই বলেছে, আমার বন্ধু হেলালকে ফোন দাও। এটুকুই ছিলো আমার স্বামীর শেষ কথা। পরে হেলাল ভাইয়ের মাধ্যমে মেডিকেলে গিয়ে লাশ বুঝে পেয়েছি।

লাইলি বেগম বলেন, পরে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে এনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন দিয়েছি। আমরা থাকতাম মিরপুর ১ এর ভাড়া বাসায়। আমার স্বামী গুলি খেয়েছে আদাবর থানার সামনে। তিনি পেশায় ছিলেন টেইলার মাস্টার।

শহীদ বাচ্চুর মেয়ে নির্জনার দাবি

দশম শ্রেণীর ছাত্রী শহীদ বাচ্চুর মেয়ে নির্জনা (১৪) বলেন, আমার আব্বুকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই। আমাদের সংসারটি চালিয়ে রাখতেন আব্বু। এখন আব্বু নেই স্বাভাবিকভাবেই চলতে কষ্ট হচ্ছে। তাই আমাদের আর্থিক সঙ্কট বিবেচনা করে সরকার যেন আমার বিএ পাস বোনটাকে একটি সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। এটাই শহীদেও মেয়ে হিসেবে সরকারের কাছে আমার দাবি।

 

শহীদ বাচ্চুর স্ত্রী লাইলি বেগম -ছবি : বাসস

শহীদ বাচ্চুর স্ত্রী লাইলি বেগম -ছবি : বাসস

বিচার চান শহীদের স্ত্রী

শহীদের স্ত্রী  লাইলি বেগম বলেন, সরকার এখনও আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার করতেছে না। বুঝতেছি না। আদৌ কিছু হবে কি না। আমরা সঠিক তদন্তপূর্বক বিচার চাই। আমরা খুনি হাসিনাকে প্রধান করে রাজধানীর আদাবর থানায় হত্যা মামলা করেছি। দ্রুত আমার স্বামী হত্যাকারীর কঠোর বিচার চাই।

আর্থিক সহায়তা

লাইলি বেগম বলেন, সর্বপ্রথম আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটি আমাকে দুই লাখ টাকা দিয়েছে। আর জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আমাকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এতে আমার কিছুই হচ্ছে না। আমার সন্তানদের নিয়ে সংসার চলছে না। খুবই কষ্টে আছি। আমাকে যেন একটা সরকারি ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।

সন্তানদের জন্য চাওয়া

লাইলি বেগম আরও বলেন, আমার দুইটি মেয়ে ও একটা ছেলে। ছেলেটা গার্মেন্টেসে চাকরি করে। ওর বাবা থাকলে চাকরিতে দিতাম না। জীবন চালাতে বাধ্য হয়ে কাজে দিয়েছি। আমার সন্তানদের ভবিষ্যতে কে দেখভাল  করবে। আমি চাই আমার একটা মেয়েকে সরকার যেন সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। এছাড়া আমার ঘর নাই। সরকারের কাছে একটা ঘর করে দেয়ার অনুরোধ রইল।