বৃহস্পতিবার ০৩ এপ্রিল ২০২৫, চৈত্র ১৯ ১৪৩১, ০৪ শাওয়াল ১৪৪৬

স্পেশাল

ছেলে হত্যার বিচার চান শহীদ মাহমুদুলের মা-বাবা

 প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ২৩ মার্চ ২০২৫

ছেলে হত্যার বিচার চান শহীদ মাহমুদুলের মা-বাবা

বাবা জামাল উদ্দিনের সাথে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভী

‘আমার ছেলের কী অপরাধ ছিল? আমাকে কেন সন্তানহারা হতে হলো? কারা আমার ছেলেকে হত্যা করল? আমার বুকের মানিক কারা কেড়ে নিলো? আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। সুষ্ঠু বিচার চাই।’ 

কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে রাজধানী ঢাকার উত্তরায় ১৮ জুলাই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া তরুণ মাহমুদুল হাসান রিজভীর (২০) মা ফরিদা ইয়াসমিন (৪০)।

মাহমুদুল হাসানের বাড়ি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার হাতিয়া পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের চর কৈলাশ এলাকায়। তবে তার লাশ দাফন করা হয়েছে উপজেলার হরণী ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর (বয়ারচর) গ্রামে অবস্থিত তার নানার বাড়িতে।

মাহমুদুলের বাড়ি হাতিয়ায় হলেও তার পরিবার জেলা শহর মাইজদীর বার্লিংটন মোড় এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে মাহমুদুল সবার বড়।

মাহমুদুল এসএসসি পাস করেন মাইজদীর পৌর কল্যাণ উচ্চবিদ্যালয় থেকে। 

তার ছোট ভাই একই শহরের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে এবং ছোট বোন স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।

মাহমুদুল হাসানের মা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ১৮ জুলাই দুপুরে ছেলের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় তার। ছেলে জানিয়েছিলেন, মেসে মাছ-তরকারি কিছুই নেই। তিন দিন ধরে মেস থেকে বের হতে পারছেন না। পরিস্থিতি দেখে সন্ধ্যায় নোয়াখালীর উদ্দেশে রওনা দেবেন। 

মুঠোফোনে কথা বলার কয়েক ঘণ্টা না যেতেই ছেলের এক সহপাঠী ফোন দিয়ে বলেন, মাহমুদুল অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দ্রুত তাকে ঢাকা যেতে হবে।

ফরিদা ইয়াসমিন আরও বলেন, ‘আমি ছেলের অসুস্থতার কথা শুনে ঢাকায় ছুটে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি, আমার ছেলের লাশ। আমি তো লাশ আনতে ঢাকা যাইনি। আমি তো গেছি ছেলেকে সুস্থ করতে। আমার ছেলে তো বাড়ি আসবে বলে কথা দিয়েছিল। এখন আমি কীভাবে আমার ছেলেকে ছাড়া থাকব?’

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেক্ট্রনিক্স বিষয়ে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা শেষ করে জুলাই মাসেই ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে বাস্তব প্রশিক্ষণ শুরু করেন মাহমুদুল। ২ জুলাই মা ফরিদা ইয়াসমিন তাকে মেসে তুলে দিয়ে আসেন। মেসে তিন সহপাঠীসহ থাকতেন মাহমুদুল।

মাহমুদুলের বাবা মো. জামাল উদ্দিন (৪৫) একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা। তিনি বলেন, মাহমুদুল কোনো ঝামেলায় জড়াতেন না। পড়ালেখার প্রতিই তার আগ্রহ ছিল বেশি। তার স্বপ্ন ছিল বাস্তব প্রশিক্ষণ শেষে চাকরি শুরু করে পরিবারের হাল ধরবেন। কিন্তু একটি গুলির আঘাত তার সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে।

মাহমুদুল হাসানের বন্ধু সৌরভ হাসান বলেন, ১৮ জুলাই সন্ধ্যা আনুমানিক ছয়টার দিকে তারা চার বন্ধু নাশতা করার উদ্দেশ্যে মেস থেকে বের হন। উত্তরার রাজলক্ষ্মীর দিকে যেতেই হঠাৎ গুলির শব্দ। তারা দৌড়ে পালাতেই একটি গুলি এসে পড়ে মাহমুদুলের মাথায়। 

কে, কোত্থেকে গুলি করেছে, সেটিও বুঝে উঠতে পারেননি। গুরুতর আহত অবস্থায় মাহমুদুলকে তারা স্থানীয় ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকেরা কিছুক্ষণ পর তাদের জানান, মাহমুদুলের মৃত্যু হয়েছে।

আমার ছেলের জীবনের বিনিময়ে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে মাহমুদুলের বাবা জানান, এ যাবত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামান্য কিছু সহযোগিতা পেয়েছি। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ অব্যাহত আছে।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ইতোমধ্যে গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সরকারিভাবে তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর যে সকল নির্দেশনা আসে তা মেনে তাদের সহযোগিতা করা হবে।