মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫, চৈত্র ৪ ১৪৩১, ১৮ রমজান ১৪৪৬

ব্রেকিং

গুম তদন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়ল ৩০ জুন পর্যন্ত চাঁদপুরে যুবককে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা আন্দোলনে হামলা: জাবির ২৮৯ জনকে বহিষ্কার, ৯ শিক্ষক বরখাস্ত তাজা ফল আমদানিতে শুল্ক-কর কমাল সরকার গাইবান্ধায় ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বৃদ্ধ গ্রেপ্তার যশোরে বাড়ির সামনে যুবককে গুলি করে হত্যা ৪ অঞ্চলে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে যুদ্ধবিরতি বাড়ার আশা ভেস্তে দিয়ে গাজায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত ২৩২ ভূমি ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে হবে ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাল সরকার বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ মার্কিন উদ্বেগের ‘বড় জায়গা’: তুলসী গ্যাবার্ড চাকরি করতে ঢাকা এসে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল কিশোর ওমর ফারুক

স্পেশাল

চাকরি করতে ঢাকা এসে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল কিশোর ওমর ফারুক

 প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ১৮ মার্চ ২০২৫

চাকরি করতে ঢাকা এসে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল কিশোর ওমর ফারুক

জুলাই-আগস্টের উত্তাল দিনগুলোতে যেসব তাজা প্রাণ অকালে ঝরে গেছে, ১৭ বছরের কিশোর মো. ওমর ফারুক তাদেরই একজন। ১৯ জুলাই দুপুরের খাবার খেতে কারখানা থেকে বের হওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর ২ আগস্ট শুক্রবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোর ওমর সংসারের অভাবের কারণে প্রায় ৩ বছর আগে বাড়ি ছেড়ে কাজের সন্ধানে ঢাকায় পাড়ি জমায়। সেখানে গিয়ে রায়েরবাগ এলাকার একটি কয়েল ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেয়।

ওমর ফারুক ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই কারখানা থেকে দুপুরের খাবার খেতে বের হওয়ার পথে ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় তার শরীরে দুটি গুলি লাগে—একটি ফুসফুসে এবং অপরটি বগলের নিচে। এরপর তাকে উদ্ধার করে মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধী ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের বেডে ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২ আগস্ট শুক্রবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে কিশোর ওমর ফারুক মারা যায়। পরদিন ৩ আগস্ট শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজনরা তার মরদেহ নিয়ে ভোলার গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করেন।

শহীদ ওমর ফারুক ভোলার লালমোহন উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাহাদুর চৌমুহনী এলাকার ফয়েজউল্লাহ মুন্সির ছেলে। বাবা ও বড় ভাই এমরানসহ তারা তিনজন ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।

ওমর ফারুকের বাবা ফয়েজউল্লাহ রায়েরবাগ এলাকার একটি মসজিদের খাদেম এবং বড় ভাই দর্জির কাজ করতেন। ওমর ফারুক সেখানেই একটি কয়েল ফ্যাক্টরিতে মাসে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন। তাদের দুই ভাই ও দুই বোন ছিলেন।

ওমর ফারুকের বড় ভাই এমরান জানান, সংসারের অভাবের কারণে ওমর ফারুক বেশি লেখাপড়া করতে পারেনি। প্রায় ৩ বছর আগে ঢাকায় এসে একটি কয়েল ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেয় সে। সে আন্দোলনকারী ছিল না। তবে ১৯ জুলাই আন্দোলনকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ চলার সময় ফ্যাক্টরি থেকে দুপুরের খাবার খেতে বাসায় যাওয়ার পথে হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়।

পরে খবর পেয়ে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধী ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় স্বজনদের অনেককেই টানা ১৩ দিন সেখানে কাটাতে হয়েছে। তবে ওমর ফারুককে আর রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যায় সে।

শুক্রবার ভোরে মারা গেলেও আইনি জটিলতার কারণে হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। এরপর ওমর ফারুককে গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয়।

পারিবারিক সূত্র জানায়, ওমর ফারুকের মৃত্যুর পর এখনো কেউ তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। প্রশাসন কিংবা কোনো সংগঠন থেকেও ওই পরিবারকে কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বাসসকে জানান, সরকার অন্যান্য জেলার মতো ভোলার শহীদ ও আহতদের তালিকা তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছে। সে অনুযায়ী পরিবারগুলোকে খুব দ্রুতই সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।