মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মাঘ ২৯ ১৪৩১, ১২ শা'বান ১৪৪৬

ব্রেকিং

সাড়ে ১৬ হাজার ‘গায়েবি মামলা’ প্রত্যাহার হচ্ছে: আসিফ নজরুল আশুলিয়ায় স্বামী-স্ত্রীসহ ৩ পোশাক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার জুলাই অভ্যুত্থানের নৃশংসতা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন বুধবার কোনো অপরাধীকে ‘বাইরে’ দেখতে চান না স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ডিসেম্বরকে টার্গেট করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি ইতিহাসের সেরা নির্বাচন হবে এবার: ইউএনডিপি বইমেলার স্টলে হট্টগোলের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা, দোষীদের বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ গণহত্যার আসামির জামিনে বিচারকদের ‘সতর্ক’ থাকতে বললেন আইন উপদেষ্টা দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১৪তম ‘সাগর-রুনি হত্যায় যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তারা মুখ খুলেছেন’ সাগর-রুনি হত্যার ১৩ বছর: তদন্ত নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় পরিবার জুনের মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাচ্ছেন সৌদিতে থাকা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা ‘আরাকান আর্মির হাতে’ ৪ বাংলাদেশি জেলে অপহৃত জিম্মি মুক্তি না দিলে গাজায় যুদ্ধবিরতি বাতিল হওয়া উচিত: ট্রাম্প ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি স্থগিত করেছে হামাস

স্পেশাল

শাহিনার হাতের মেহেদি শুকানোর আগেই স্বামী হলেন শহিদ

 প্রকাশিত: ০৯:১৬, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শাহিনার হাতের মেহেদি শুকানোর আগেই স্বামী হলেন শহিদ

হাতের মেহেদি শুকানোর আগেই বিধবা হলেন শাহিনা আক্তার। ভালোবেসে তোফাজ্জলকে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের ৪০ দিন পেরুতে না পেরুতেই স্বামী তোফাজ্জল শহিদ হয়েছেন। স্বামীকে হারিয়ে শাহিনা বাপের বাড়ি চলে গেছেন। সদ্য বিয়ে করা স্বামীকে হারিয়ে হতভম্ভ শাহিনা এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন। আর পুত্রকে হারিয়ে শোকে কাতর গর্ভধারিণী মা হেনা বেগম। ছেলের ছবি বুকে নিয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চান তিনি। 

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) কে শহিদ তোফাজ্জল হোসেনের মা হেনা বেগম এমন কথাই  জানিয়েছেন।
শহিদ তোফাজ্জল হোসেনের বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর। পেশায় ছিলেন একজন রংমিস্ত্রী। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তোফাজ্জল চতুর্থ ছিলেন। 

স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্ট সকালে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বানিয়াচং শহরে বের হয়। এ সময় মিছিলটি থানা মোড় হয়ে আসার সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তোফাজ্জল হোসেন। তিনি জেলার বানিয়াচং উপজেলার জাতুকর্ণপাড়া গ্রামের আব্দুর রউফ মিয়ার ছেলে। 

শহিদ তোফাজ্জল হোসেনের মা জানান, তোফাজ্জল শহিদ হওয়ার মাত্র ৪০ দিন আগে ভালবেসে পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে একই গ্রামের শাহিনা আক্তারকে। 

তিনি বলেন, বিয়ের মেহেদি শুকানোর আগেই স্ত্রীকে বিধবা এবং মায়ের বুক খালি করে তোফাজ্জলকে চলে যেতে হবে এ কথা আমরা কেউ ভাবেনি। তাদের ভালবাসা আর পূর্ণতা পেলো না। 

তিনি বলেন, ‘আমি ছেলের ছবি বুকে নিয়েই বেঁচে আছি শোকে আর দুঃখে। মাঝে মধ্যে ছেলে হারানোর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে কাঁদি। ছেলের পছন্দের কোন কিছু দেখলেই বুকটা ভেঙে যায়।’ এই বলে তিনি কাঁদতে শুরু করেন।

বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছেলে হত্যার বিচার প্রত্যেক মায়েই চায়। আমিও আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। ছেলে হত্যার বিচার পেলে নিজেকে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দিতে পারবো। 

তোফাজ্জল হোসেনের বাবা আব্দুর রউফ মিয়া একজন দিনমজুর। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারে উপার্জনের অন্যতম ব্যক্তি ছিল তোফাজ্জল হোসেন। স্থানীয় বাজারে একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতো। সহপাঠীদের সাথে আন্দোলনে গিয়ে শহিদ হলো।’ 

তিনি বলেন, ছেলেকে হারিয়ে এখন আয় রোজগার নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, তার বড় ছেলে এমএ পাশ। কিন্তু চাকুরি হয়নি। যদি তার একটা চাকুরির ব্যবস্থা হয় তাহলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। না হয় জীবনযুদ্ধে হেরে যেতে হবে।   

শহিদ তোফাজ্জল হোসেনের শাশুড়ি সাজেদা বেগম বাসসকে জানান, তোফাজ্জল স্ত্রীকে না জানিয়েই আন্দোলনে চলে যায়। শাহিনা তাকে বার বার নিষেধ করেছিল। কিন্তু কথা শোনেনি। তোফাজ্জলের মরদেহ শাশুড়ি নিজে গিয়ে হাসপাতালে শনাক্ত করেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

তিনি জানান, শাহিনা এখন তাদের সাথেই রয়েছেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন খোঁজখবর নেয় না। তবে সরকারি সহযোগিতার টাকা উভয় পরিবার ভাগ করে নিয়েছেন বলে তিনি জানান।  

তোফাজ্জলের শ্বশুরের নাম আব্দুল গণি। বয়স হবে প্রায় ৫০ বছর। শারীরিক অসুস্থতার কারণে চলাফেরা করতে পারেন না। 

এদিকে তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী শাহিনা আক্তার(২০) শোকে কাতর থাকায় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন। 

ইতোমধ্যে শহিদ তোফাজ্জল হোসেনের পরিবারকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ একাধিক সংস্থা আর্থিক অনুদান দিয়েছে। 

এরমধ্যে রয়েছে জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে ২ লাখ, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ডা: সাখাওয়াত হাসান জীবনের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার ও হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে। 

সর্বশেষ জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেও পরিবারটি ৫ লাখ টাকা পেয়েছে।