বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্রেকিং

নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান দায়িত্ব নিলেন নতুন আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার প্রাথমিকের জন্য ৫ কোটি ৩২ লাখ বইয়ের অনুমোদন পরমাণু বোমা ইরানের হাতের নাগালে আমরা এক পরিবার, কেউ কারো শত্রু হবো না: প্রধান উপদেষ্টা ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের বিক্ষোভে পথে পথে জট, ট্রেন বন্ধ বিচারের শুদ্ধতায় অধ্যাদেশে আপিলের বিধান খুব সীমাবদ্ধ : আইন উপদেষ্টা সশস্ত্র বাহিনীর বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা রাষ্ট্রপতির ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শকের দায়িত্বে টবি ক্যাডম্যান যুক্তরাষ্ট্রে ঘুষের মামলায় অভিযুক্ত গৌতম আদানি গাজা চুক্তিতে ফের ভেটো যুক্তরাষ্ট্রের

স্পেশাল

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বগুড়ার শিশু রাতুল

 প্রকাশিত: ১১:০০, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বগুড়ার শিশু রাতুল

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে টানা ৩৮ দিন ধরে জীবন-মৃত্যুর   সাথে লড়াই করছে বগুড়া উপশহরের পথ বিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থী  ষষ্ঠ শ্রেনীর শিশু রাতুল।

রাজধানীর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরো সায়েন্সসে হাসপাতালের বিছানায়  শুয়ে রাতুল এখন জীবন-মৃত্যু সন্ধিক্ষণে। মাথায় গুলিবিদ্ধ ছেলের শিয়রে ঘুম ঘুম চোখে জেগে আছেন মা রোকেয়া। হাসপাতলের বিছানায় রাতুলের শিয়রে বসে  মা বলছেন,  গত ৫ আগষ্ট  বাড়ি থেকে আন্দোলনে যাবার আগে তাকে বলেছিলাম, “বাবা বিকালের নাস্তা খেয়ে যাও।” জবাবে ছেলে বলেছিল, “দেখি স্বৈরাচার হাসিনার শেষ পরিণতি কি হয়। শুধু দোয়া করো যেন সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসতে পারি।”

সুস্থ অবস্থায় ফিরতে পারেনি রাতুল। সেদিন রাতুলের মাথা ও শরীরে গুলি লেগেছিল। গুলিতে তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। গত ৩৮ দিন ধরে অজ্ঞান হয়ে হাসপাতালের আইসিইউ’র বেডে শুয়ে থাকা জুনায়েদ ইসলাম রাতুল এ পর্যন্ত একটি কথাও বলেনি। সেদিন থেকে  মা রোকেয়া বেগম ছেলের শিয়রে বসে রাতদিন দুই চেখের পাতা এক করতে পারেন নি। মা ভাবছেন, এইবুঝি ছেলে রাতুল মা বলে ডেকে উঠবে। বুকের ভেতর মুখ লুকাবে।  কিন্তু মায়ের অপেক্ষা আর ফুরোয় না। ছেলের শিয়রে বসে তার সুস্থতার জন্য একের পর এক মানত করে করে চলেছেন তিনি। কিন্তু কি করলে আল্লাহ তার কথা শুনবেন, ছোট্ট রাতুল কথা বলে উঠবে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।

গত ৫ আগষ্ট বিকালে নাস্তা না করে  মায়ের বারণ সত্ত্বেও রাতুল তার বোন বগুড়া মুজিবর রহমান মহিলা কলেজের স্নাতক শিক্ষার্থী জেরিন ও রাতুলের ভগ্নিপতি আমির হামজার সাথে চলে যায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। অন্যদের মত গগন বিদারি স্লোগান দিতে দিতে বগুড়া সদর থানার অদুরে বড়গোলার কাছে পৌঁছায়। বড়বোন জেরিন জানান, তার পাশেই ছিল রাতুল। হঠাৎ পুলিশের আক্রমণ। রাতুলের মাথায় ৪টি ছররা গুলি লাগে।  এরমধ্যে একটি গুলি রাতুলের বাম চোখের মধ্যদিয়ে মাথার মগজে ঢুকে যায়। এর পর পর আরো  অসংখ্য গুলি লাগে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। অজ্ঞান অবস্থায় তার বোন জেরিন ও তার ভগ্নিপতি  তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নিয়ে যায়। চিকিৎসকরা তাকে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরো সায়েন্সসে হাসপাতলে নিতে বলেন।  

ঢাকায় আনার পর তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। মগজের ভেতর থেকে একটি গুলি বের করেন চিকিৎসকরা। ভগ্নিপতি হামজা জানান, রাতুলের জন্যে কৃত্রিমভাবে শ্বাস নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুদির দোকানি বাবা জিয়াউর রহমান জানান, তিনি তার সর্বস্ব বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করছেন। ঢাকায় দুই জন লোকের থাকা,খাওয়া, গাড়ি ভাড়া, ছেলের ওষুধ-পথ্য সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত তার পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

তিনি বলেন,খরচ হোক, তবু ছেলে সুস্থ হয়ে উঠুক। ছেলে যেন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে মনেপ্রাণে তিনি তাই চান। ছেলে রাতুলের সুস্থতার জন্যে তিনি সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী।

বাবা জিয়াউর রহমান জানান, রাতুলের স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের সাধ্যমত আর্থিক সহায়তা করেছেন। আরো দুএকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও এগিয়ে এসেছে।

যদিও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। রাতুলের জন্য এগিয়ে আসতে পারেন আপনিও।