শিগগিরই প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দিতে পারবে এআই
মানুষ, প্রাণী ও লোকালয়ের ক্ষতি করতে পারে হারিকেন, ভূমিকম্প ও বন্যার মতো বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এসব ঘটনা মোকাবেলায় অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এগুলো কখন ও কোথায় ঘটবে তা আগে থেকে জানতে পারা।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বা এআইয়ের সাম্প্রতিক বিভিন্ন অগ্রগতি আগে থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়াকে সম্ভব করে তুলছে। ফলে এসব বিপর্যয়কর ঘটনার প্রভাব কমিয়ে আনা ও প্রস্তুত হওয়ার জন্য আরও সময় পাচ্ছে মানুষ।
এআই-এর মূল শক্তি হলো বিপুল পরিমাণে তথ্য দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ ও তা বিশ্লেষণের সক্ষমতা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস নির্ভর করে আবহাওয়ার পরিবর্তন, ভূমির গতিবিধি বা পানির স্তর পরিবর্তনের মতো নানাবিধ বিষয়ের উপর, যার থেকে মিলতে পারে আসন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইঙ্গিত।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব তথ্যের জটিলতা নিয়ে কাজ করতে পারে না প্রচলিত বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলার পদ্ধতি। তবে এআইয়ের মাধ্যমে দুর্যোগের বিভিন্ন সতর্কতামূলক লক্ষণের খোঁজ মিলতে পারে, যা মানুষের পক্ষে ধরতে পারা কঠিন। যেমন– মেশিন লার্নিং, এটি এমন এক ধরনের এআই, যা ডেটা থেকে শেখার মাধ্যমে উন্নতি করে। এটি কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় তৈরির পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে ঐতিহাসিক আবহাওয়ার ধরন বিশ্লেষণ করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন বিষয়। তবে ভূমিকম্পের কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করতে এআই ব্যবহারের নতুন উপায় খুঁজে পাচ্ছেন গবেষকরা।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার কমিউনিকেশনস ২০২১’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিস্ময়করভাবে নির্ভুলতার সঙ্গে বড় ভূমিকম্পের কারণ এমন ছোট ভূ-কম্পনের পূর্বাভাস দিতে পারে এআইয়ের বিভিন্ন মেশিন লার্নিং মডেল।
ঘূর্ণিঝড় ও টাইফুন আরেকটি ক্ষেত্র, যেখানে বড় প্রভাব ফেলছে এআই। বিভিন্ন স্যাটেলাইটের ছবি, সমুদ্রের তাপমাত্রা ও বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বিশ্লেষণ করতে এআই ব্যবহার করছেন বিজ্ঞানীরা।
২০২২ সালে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রচলিত পূর্বাভাস পদ্ধতির চেয়ে বিভিন্ন এআই মডেল ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতার পূর্বাভাস দেওয়ার বেলায় ৪০ শতাংশ বেশি সঠিক। এআইয়ের এমন উন্নতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ঝড় কতটা শক্তিশালী হবে তা জানা উদ্ধারকারীদের জন্য জরুরি। ফলে এটি তাদের দুর্যোগ মোকাবেলায় আরও ভালভাবে প্রস্তুত হতে ও সম্পদ মজুদ করতে সাহায্য করে।
বন্যার পূর্বাভাসেও বড় অগ্রগতি দেখাচ্ছে এআই। কখন ও কোথায় বন্যা হবে এর পূর্বাভাস দিতে নদী, বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে প্রাপ্ত ডেটা একসঙ্গে করতে ব্যবহার হচ্ছে এআইয়ের। যেমন– ২০২০ সালে এআইচালিত এক বন্যা পূর্বাভাস ব্যবস্থা চালু করেছে গুগল, যেটি এখন কাজে আসছে নানা দেশে।
২০২৩ সালে হওয়া ভারতের কিছু অংশে মারাত্মক বন্যার সঠিক পূর্বাভাস আগে থেকে দিয়েছিল গুগলের এ এআই সিস্টেমটি। ফলে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া ও তাদের জিনিসপত্র রক্ষার জন্য দরকারি সময় পেয়েছিল তারা। বিভিন্ন প্রতিবেদনেে উঠে এসেছে, আগের চেয়ে এখন আরও সুনির্দিষ্ট সতর্কবার্তা দিয়ে প্রাণ বাঁচাচ্ছে এআইভিত্তিক বিভিন্ন বন্যার পূর্বাভাস।
দাবানলের ক্ষেত্রেও সহায়তা করছে এআই, যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে আরও ঘন ঘন হচ্ছে। স্যাটেলাইটের ছবি, বাতাসের ধরন ও গাছপালার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দাবানলের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন অঞ্চল শনাক্ত করতে এবং রিয়েল টাইমে আগুন পর্যবেক্ষণ করছে এআই।
কীভাবে দাবানল ছড়িয়ে পড়বে এর পূর্বাভাস দিতে ক্যালিফোর্নিয়ায় ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন এআই সিস্টেম, যা দমকলকর্মীদের আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে সহায়তা করছে।
২০২২ সালে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটার্স’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দাবানলে সাড়া দেওয়ার সময় ২৫ শতাংশ কমিয়ে এনেছে বিভিন্ন এআই সিস্টেম, যার ফলে কমেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি।
এআইয়ের এতোসব অগ্রগতির পরও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আগে থেকে টের পাওয়ার বিষয়টি বিস্ময়করভাবে জটিল এবং বিভিন্ন এআই মডেল সবসময় নির্ভূল হয় না। এগুলো উচ্চমানের তথ্যের উপর নির্ভর করে, যা সবসময় পাওয়া যায় না, বিশেষ করে প্রত্যন্ত বা অনুন্নত অঞ্চলের বেলায়।
এ ছাড়াও, কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন– পানির নিচে ভূমিকম্পের মাধ্যমে তৈরি সুনামি সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন। তবে আরও ডেটা একসঙ্গে করে ও বিভিন্ন অ্যালগরিদম পরিমার্জন করে এআই সিস্টেম উন্নতির কাজ অব্যাহত রেখেছেন গবেষকরা।