ইসি ও বিএনপির অভিন্ন আপত্তি: নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা নিয়ে সংস্কার কমিশনের সুপারিশে দ্বিমত

সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশে স্বাধীনতা খর্ব হবে মনে করছে নির্বাচন কমিশন ও বিএনপি
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ করতে কিছু সুপারিশ দিয়েছিল নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তবে এসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে কমিশনের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে বলে মত দিয়েছে ইসি। একই ধরনের আপত্তি জানিয়েছে বিএনপিও। ফলে এ বিষয়ে দুটি পক্ষের অবস্থান প্রায় অভিন্ন।
গত অক্টোবর মাসে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের একটি ছিল বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তারা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ১৬টি খাতে দুই শতাধিক সুপারিশ জমা দেয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা নিয়ে সুপারিশ।
দায়বদ্ধতা বাড়ানোর প্রস্তাবে আপত্তি
সংস্কার কমিশন প্রস্তাব দেয়, ইসির বাজেট ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের সুপারিশ সংসদের স্পিকারের নেতৃত্বাধীন সর্বদলীয় কমিটির মাধ্যমে যাচাই হোক। এ ছাড়া, কমিশনারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত এবং মেয়াদ-পরবর্তী সময়ে ব্যর্থতা বা শপথভঙ্গের অভিযোগ তদন্তে সংসদীয় কমিটিকে ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাবও ছিল।
ইসি এই প্রস্তাবগুলোকে স্বাধীনতাবিরোধী বলে মনে করে। তাদের মতে, সংসদীয় কমিটিকে তদন্তের ক্ষমতা দিলে রাজনৈতিক প্রভাব বাড়বে এবং কমিশনের স্বায়ত্তশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অর্থ বরাদ্দ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত সংসদীয় কমিটির কাজ নয় বলেও মন্তব্য করে ইসি।
বিএনপির মিল পাওয়া অবস্থান
বিএনপিও এই সুপারিশগুলোর বিরোধিতা করেছে। দলটির মতে, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান—তাদের নতুন করে সংসদীয় কমিটির কাছে দায়বদ্ধ করা অনুচিত। এছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে আলাদা কমিশন গঠনের প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেছে তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংসদীয় কমিটিকে ক্ষমতা দেওয়া হলে ইসির স্বাধীন সত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া সীমানা নির্ধারণ ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব—এ দায়িত্ব অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে দেওয়া মানে একসঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, যা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।
'সার্টিফিকেশন' প্রস্তাবেও আপত্তি
সংস্কার কমিশন প্রস্তাব দিয়েছিল, নির্বাচন শেষে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমিশনকে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে 'সার্টিফিকেশন' দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। তবে ইসি বলেছে, তারা সন্তুষ্ট হয়েই গেজেট প্রকাশ করে, অতিরিক্ত সত্যায়নের বিধান অপ্রয়োজনীয় এবং বিতর্ক তৈরি করতে পারে।
বিএনপিও এই সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, প্রিসাইডিং ও রিটার্নিং কর্মকর্তারা যথাযথ ফলাফল প্রকাশ করেন এবং কমিশন গেজেটের মাধ্যমে তা চূড়ান্ত করে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলকে আপিলের সুযোগ দিলে নির্বাচনী কার্যক্রম জটিল হয়ে পড়বে।
সংস্কার কমিশনের যুক্তি
সংস্কার কমিশনের সূত্র জানিয়েছে, অতীতের জাতীয় নির্বাচনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ইসি প্রায়ই রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ওপর দায় চাপিয়ে পার পেয়ে গেছে। দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে 'সার্টিফিকেশন' ও সংসদীয় তদন্তের প্রস্তাব আনা হয়েছে। কমিশন বিশ্বাস করে, কোনো প্রতিষ্ঠানই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দায়বদ্ধতার ঊর্ধ্বে নয়।
ইসি ও বিএনপির মিল থাকা অবস্থান নিয়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, "নির্বাচন কমিশনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে, তারা নিজেরাই এসব বিষয় বুঝে এবং চর্চা করে। তাই বিএনপি নিজস্ব বিশ্লেষণেই এই অবস্থানে এসেছে, অন্য কোনো কারণে নয়।"