`মৌলিক সংস্কার` বলতে কী বোঝাতে চাইছে জাতীয় নাগরিক পার্টি

সংবিধান সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়—ক্ষমতার ভারসাম্য ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে এনসিপির দৃঢ় অবস্থান
বিএনপি যখন নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসেছে, ঠিক একই দিন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে, মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপি যেখানে জরুরি কিছু সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে, সেখানে এনসিপি চাইছে পুরো ক্ষমতাকাঠামোর মৌলিক পরিবর্তন।
জুলাই মাসের গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের গঠিত এই দলের নেতাদের ভাষায়, রাষ্ট্রের বর্তমান ক্ষমতাকাঠামো ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এ ব্যবস্থাই সংবিধানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সরকার ফ্যাসিবাদী রূপ নিয়েছে। তাই তাঁদের দাবি, শুধুমাত্র কিছু আনুষঙ্গিক সংস্কার নয়, দরকার মৌলিক, গুণগত পরিবর্তন।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, "ন্যূনতম সংস্কার বলে কিছু নেই। সংস্কার মানেই মৌলিক পরিবর্তন। এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য জরুরি।"
দলের পক্ষ থেকে যে সংস্কারগুলোর কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলের প্রধান ও সংসদ নেতা হতে পারবেন না; প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের সীমা; রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদের নিয়োগে সরকার ও বিরোধী দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন; দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ চালু; এবং সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার।
এনসিপির নেতারা মনে করেন, এসব সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে সেটি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবে না। দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি ও নিয়ন্ত্রণ ছাড়া মৌলিক কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই এসব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই অধ্যাদেশের মাধ্যমে শুরু হওয়া উচিত।”
বিএনপি কিছু সংস্কারের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হলেও মনে করে, যেমন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ—এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। তবে দলটি সংবিধান সংশোধনের মতো সংস্কার নির্বাচনের পর নির্বাচিত সংসদের উপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে।
এনসিপির সংস্কার সমন্বয়ক সারোয়ার তুষার বলেন, "বর্তমান এককেন্দ্রিক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা ভেঙে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়াই আমাদের লক্ষ্য। আমরা জামায়াত বা ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আলাদা করে ঐকমত্য করিনি, তবে সব দলের সঙ্গেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।"
এনসিপির দাবি, সরকার সংস্কারের পথনকশা এবং জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার দৃশ্যমান করুক। দলটি স্পষ্ট করেছে, এসব মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
এদিকে, জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও এনসিপির মতো মৌলিক সংস্কারের দাবি জানিয়েছে। জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান নির্বাচনের জন্য 'দৃশ্যমান ও গ্রহণযোগ্য মৌলিক সংস্কার'-এর ওপর জোর দিয়েছেন। চরমোনাই পীরের দলও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন না করার আহ্বান জানিয়েছে।
তবে বিএনপি এখনও ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চায় এবং বলছে, ন্যূনতম ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন দিতে হবে।
শেষ পর্যন্ত, এনসিপি যে অবস্থানে ছিল, এখনো সেই একই জায়গায় রয়েছে—সংবিধান সংস্কার, গণপরিষদ নির্বাচন, এবং জুলাই অভ্যুত্থানের বিচার। তাঁদের মতে, বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে নয়, নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের ভিত্তিতে নির্বাচনই হতে হবে ভবিষ্যতের পথনকশা।