আমাকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল : ডা. শফিকুর রহমান

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান অভিযোগ করেছেন, তাকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, কুলাউড়ার মানুষকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু কেউ সাক্ষ্য দেয়নি।
তিনি জানান, ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল মাত্র সাড়ে ১২ বছর। তিনি আরও বলেন, “জামায়াত বা শিবির করার আগে যে ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, এখন সেই সংগঠনের নাম নিতে লজ্জা হয়।”
ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন এক দেশ দেখতে চাই, যেখানে চোর, ডাকাত, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হবে না। দেশের মানুষ ঘরে, রাস্তায় ও কর্মস্থলে নিরাপদ থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “আল্লাহ যতদিন আমাদের তৌফিক দেবেন, ততদিন আমরা লড়াই চালিয়ে যাবো। আমরা চাই একটি দুর্নীতিমুক্ত ও মানবিক বাংলাদেশ।”
চা শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, “আমরা শুরু থেকেই চা শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবি তুলেছিলাম, যাতে মালিক ও শ্রমিক উভয়ই লাভবান হয়। শ্রমিকরা যদি উপযুক্ত শ্রমের মূল্য পায়, তাহলে তারা আনন্দের সঙ্গে কাজ করবে এবং মালিকের লাভও বৃদ্ধি পাবে।”
শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে জামায়াত আমির বলেন, “আমরা চাই না যে শিক্ষাব্যবস্থা এমন হোক, যেখানে শিক্ষিত হয়ে কেউ ডাকাতে পরিণত হয়। আমরা এমন শিক্ষাব্যবস্থা চাই, যেখানে মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকবে। যাদের অন্তরে মানুষের প্রতি মমত্ববোধ নেই, এমন ডাক্তার, শিক্ষক বা আইনজীবী আমরা চাই না।”
তিনি অভিযোগ করেন, “দিশাহারা গত সরকার আমাদের নিষিদ্ধ করেছিল। তখন আমি দোয়া করেছিলাম, যারা হকের ওপর আছে, আল্লাহ যেন তাদের সহযোগিতা করেন, আর যারা হকের ওপর নেই, তাদের ধ্বংস করে দেন।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই বিপ্লবের আগে শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। দেশে তারা জমিদার ছিল, আমরা ছিলাম প্রজা।”
কুলাউড়া উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আব্দুল মুনতাজিমের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি বেলাল আহমদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর আমির মো. ফখরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব, মৌলভীবাজার জেলার ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলী, মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুর রব, মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলাম।
এছাড়া বক্তব্য দেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মৌলভীবাজার সভাপতি আলাউদ্দিন শাহ, ঢাকা পল্টন থানা আমির শাহীন আহমদ খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, খেলাফত মজলিসের জেলা সহসভাপতি মাওলানা আলতাফুর রহমান, কুলাউড়া উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মো. আব্দুল হামিদ খান, মাস্টার আব্দুল বারী, খন্দকার আব্দুস সোবহান, মৌলভীবাজার পৌর জামায়াতের আমির হাফেজ তাজুল ইসলাম, রাজনগর উপজেলা আমির মোহাম্মদ আবু রাইয়ান শাহীন, জুড়ী উপজেলা আমির আব্দুল হাই হেলাল, বড়লেখা উপজেলা আমির মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম, ছাত্রশিবির মৌলভীবাজার শহর শাখার সভাপতি তারেক আজিজ, জেলা সভাপতি মো. নিজামুদ্দিন ও কুলাউড়া উপজেলা শিবির সভাপতি আতিকুর রহমান তারেক।
ঈদ পুনর্মিলনী শেষে জামায়াত আমির কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।