কেবল সরকার বদলে জনকল্যাণ সম্ভব নয়: নাহিদ

সাম্যের বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি কাজ করবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেছেন, “কেবল সরকার পরিবর্তন করেই- আমরা কিন্তু আমাদের জনগণের যেই কল্যাণ, সেটি সম্ভব নয়; প্রকৃত গণতন্ত্র বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
“সেজন্য আমরা বলছি যে, আমরা যেহেতু এই ’২৪ সালে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, ছাত্রজনতা রক্ত দিয়েছে- আমরা কেবল সরকার পরিবর্তন নয়; বরং শাসন কাঠামোসহ পুরা সাংবিধানিক পরিবর্তন করে নতুন একটি বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করতে চাই, যেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র, ইনসাফ এবং সাম্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”
এনসিপি প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কর্মসূচি হিসেবে মঙ্গলবার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর এ মন্তব্য করেন নাহিদ।
তিনি বলেন, “আমাদের এই ভূখণ্ডের জনপদের মানুষের যে লড়াইয়ের ইতিহাস রয়েছে- ১৯৪৭ সালের সালের আজাদির লড়াই থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ২০২৪ সালের সালের ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থান, এই সকল লড়াইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেই আমরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করব এবং সেই লক্ষ্যেই এনসিপি কাজ করে যাচ্ছে।
“আমরা বলেছি যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেলেও আমাদের যে সার্বভৌমত্ব সেই সার্বভৌমত্ব বারবার মুখে পড়েছে; আমাদের যে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বারবার ভেঙে পড়েছে। আমরা একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান গড়ে তুলতে পারিনি।”
৩৬ দিনের যে আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন, তার অগ্রভাগে ছিলেন নাহিদ ইসলাম। তখন তিনি ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টার যে দায়িত্ব নিয়েছিলেন, দল গড়তে তিনি সেই দায়িত্ব ছাড়েন গত ২৫ ফেব্রুয়ারি।
নাহিদ বলেন, “একটি একদলীয় সংবিধানের মাধ্যমে ফ্যাসিজম এবং একদলীয় স্বৈরতন্ত্রের বীজ বপন করা হয়েছিল। ফলে আমরা বলেছি যে, একটি নতুন প্রজাতন্ত্র আমাদের গড়তে হবে এবং তার জন্য একটি নতুন সংবিধান এবং গণপরিষদ নির্বাচনের প্রয়োজন।
“সেই জায়গা থেকে আমরা সেকেন্ড রিপাবলিকের কথা বলেছি এবং আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। পরদিন ২১৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন হয়।
দলটির প্রধান নাহিদ বলেন, “জাতীয় নাগরিক পার্টি- এই মুহূর্তে তার প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে, তার সাংগঠনিকভাবে কার্যক্রম বিস্তৃত করা, তৃণমূলে সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তৃত করা। এবং নিবন্ধন নিতে যেই ধরনের শর্তাবলি পূরণ করতে হয়, সে শর্তাবলি পূরণ করার দ্রুত সময়ের মধ্যে পূরণ করে আমরা নিবন্ধন কার্যক্রম আগাব।
“এ মাসের মধ্যে আমরা আমাদের গঠনতন্ত্র যে প্রণয়নের কাজ, সেই প্রণয়নের কাজটি আমরা শুরু করব এবং আমাদের আজকের এই স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের পরে আমরা রায়েরবাজার যাব। সেখানে আমাদের জুলাই অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছে, সেই শহীদদেরকে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করব; আমাদের যে একাত্তরের শহীদ এবং জুলাইয়ের শহীদ, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে- তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করেই আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করছি।”
এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, “আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংগঠিত যে গণহত্যা, সে গণহত্যার বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর দেখতে চাই এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ফয়সালা- এই বাংলার মাটিতে করতে হবে।
“এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল যে- যারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত এবং যারা গত ১৫ বছরে নানা ধরনের জুলুম করেছে, তাদের বিচার এই বাংলার মাটিতে হতে হবে এবং আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে- দ্রুত সময়ের মধ্যেই এই বিচার বাংলাদেশের মানুষ দেখতে চায় এবং বিচারের পরে যে সংস্কার কার্যক্রম, জাতীয় ঐকমত্য যে কমিশন রয়েছে, দ্রুত জাতীয় সংলাপে গিয়ে আমাদের যে জুলাই সনদ এবং যে জুলাই ঘোষণাপত্র- তার দ্রুত বাস্তবায়ন আমরা দেখতে চাই।”
পরে রায়েরবাজারে শহীদদের কবর জিয়ারত করেন এনসিপি নেতৃবৃন্দ। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ।