সরকারের চেয়ে রাজপথে বেশি ভূমিকা রাখতে পারব: নাহিদ

আজ মঙ্গলবার পদত্যাগ করার পর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।
দেশে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সরকারে থাকার চেয়ে রাজপথে থাকলে বেশি ভূমিকা রাখা যাবে বলে মনে করছেন উপদেষ্টার পদ থেকে সদ্য ইস্তফা দেওয়া নাহিদ ইসলাম।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় বাসভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে এসে বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
নতুন রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নিতে সরকারের পদে ইস্তফা দেওয়া এই তরুণ নেতা বলেন, “একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের জন্য আমার রাজপথে থাকা প্রয়োজন; ছাত্রজনতার কাতারে থাকা প্রয়োজন।
“আমরা যে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করি, সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য এবং গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শক্তিকে সংহত করতে আমি মনে করেছি যে, সরকারের চেয়ে রাজপথে ভূমিকা বেশি হবে। বাইরে যে সহযোদ্ধারা রয়েছে, তারাও একই চিন্তা করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমি আজকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।”
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে যে তিনজনকে ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্বে এনেছেন, নাহিদ তাদের একজন।
আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম। তখন তিনি ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক।
গতবছর ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে উপদেষ্টা পরিষদে প্রথমে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান নাহিদ ইসলাম। এরপর তাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। শেষ দিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত একটি কমিটির দায়িত্বেও এসেছিলেন তিনি।
সেই কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “গত ছয় মাসে আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করেছি কাজ করে যাওয়ার। দুটি মন্ত্রণালয়ের বাইরেও অনেক অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোতে আমি কিছু কাজ করেছি। ছয় মাস খুবই কম সময়, তারপরও আমি চেষ্টা করেছি। সেই কাজের ফলাফল হয়ত জনগণ পাবে। আজকে থেকে আমি সরকারের দায়িত্বে নেই।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে যে নতুন রাজনৈতিক দল আসতে যাচ্ছে, তাতে যোগ দিচ্ছেন নাহিদ ইসলাম। আগামী শুক্রবার এ দলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে, আর আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদের নামই শোনা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, “নতুন রাজনৈতিক শক্তি ও দল গঠন হচ্ছে, আমার সেখানে অংশ নেওয়ার অভিপ্রায় আছে। জনগণের সাথে মিশে আবারও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং গণঅভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি বাস্তাবায়নে মাঠে থেকে কাজ করার লক্ষ্যে আমি পদত্যাগ করেছি।”
ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্বে আসা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং মাহফুজ আলমও একই পথ অনুসরণ করবেন কি না, সেই প্রশ্নে নাহিদ বলেন, “আমি মনে করেছি আমার বাইরে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এখনও গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা তো বাস্তবায়িত হয়নি। বিচার এবং সংস্কারের যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে এই সরকার গঠন হয়েছিল সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে দুইজন রয়েছে।
“তারা মনে করেছে তাদের সরকারে থেকে জনগণকে সার্ভ করা উচিত। তারা যদি রাজনীতি করার প্রয়োজন বোধ করে তখন হয়তো সরকার ছেড়ে দেবে।”
দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা আছে কিনা– এমন প্রশ্নে এই তরুণ নেতা বলেন, “আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। সেই সীমাবদ্ধতা কাটানোর চেষ্টা করেছি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছিল। আমরা এসে পুলিশকে পেয়েছি তাদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে।
“জুলাইয়ের গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের বিষয়টি রয়েছে। জনপ্রশাসন কমিটির একটা দায়িত্বে দুই সপ্তাহের মত ছিলাম। এই সময়ে যারা ২০১৮ সালের নির্বাচনে ডিসি ছিল এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের সরানোর দায়িত্ব নিয়েছি।”
নাহিদ বলেন, “আমি আশা করব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবে। এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রবমূল্য নিয়ন্ত্রণে সফলতা দেখাতে পারবে।”