সরকার লক্ষ্য থেকে ‘কিছুটা হলেও বিচ্যুত হচ্ছে’: তারেক রহমান

অন্তবর্তীকালীন সরকার তাদের লক্ষ্য থেকে ‘কিছুটা হলেও বিচ্যুত হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপিরি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তির বক্তব্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে এবং এতে মানুষ বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রোববার ঢাকা বার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই মন্তব্য করেন।
সংস্কার উদ্যোগ ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে বক্তব্য আসছে।
সরকারের উপদেষ্টারা সংস্কারের পর নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে। অন্যদিকে বিএনপি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন চায়।
সংস্কার উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রথম ধাপের ছয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এক দফা বৈঠক করেছে।
লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি যে, সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তির কথা-বার্তা থেকে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, তারা এবং বিভিন্ন ব্যক্তির আলোচনা থেকেও ফুটে উঠছে যে, তারা (অন্তবর্তীকালীন সরকার) সম্ভবত তাদের লক্ষ্য থেকে কিছুটা হলেও বিচ্যুত হচ্ছেন ক্ষেত্রে বিশেষে।
“বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন স্ট্যাটমেন্ট থেকে বিভিন্ন রকম কনফিউশন তৈরি হচ্ছে… মানুষ বিভিন্নভাবে কনফিউজড হচ্ছে।”
রাজনীতিতে যখন বিভ্রান্তি থাকবে তখন অস্থিরতা দেখা দেবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমাদের এই অস্থিরতার কারণে দেশের প্রত্যেকটি মানুষ সমস্যার সম্মুখীন হবে। কারণ যখনই রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকবে… রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যদি আমরা এনসিউর করতে না পারি, তাহলে আমরা যে যত সংস্কারই ঘোষণা করি না কেন, যে যত নীতি গ্রহণ করি না কেন, কোনোটাই সাকসেসফুল হবে না।”
তারেক মনে করেন, রাজনীতি অস্থির হলে তা অর্থীতিকে প্রভাব ফেলবে এবং অর্থনীতি প্রভাব ফেলবে সব কিছুতে।
যারা আইন পেশায় আছেন তাদের পেশায়ও রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়বে তুল ধরে তিনি বলেন, “একজন ক্ষুদ্র মুদির দোকানদার বলি, একজন রিকশা চালক বলি, একজন সিএনজি চালক বলি, একজন মাঝারি ব্যবসায়ী বলি, যে কারো কথাই বলি না কেন, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে অ্যাফেক্ট করবে এবং প্রতিটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
গণআন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এর পর মাত্র সাড়ে ছয় মাসের মাথায় বিলুপ্ত করা হয় দ্বাদশ সংসদ।
‘সংসদ কার্যকরে বিলম্ব হলে অস্থিরতা বাড়বে’
যত দ্রুত সম্ভব দেশকে স্থিতিশীল অবস্থা আনা অন্তবর্তীকালীন সরকারসহ প্রতিটি মানুষের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
“সারা পৃথিবীতে যেটি গ্রহণযোগ্য বিষয় যে রাজনৈতিক অস্থিরতা বলুন বা রাজনৈতিক আলোচনা বলুন, রাজনৈতিক তর্ক-বির্তক বলুন সেটিকে সংসদের মধ্যে নিয়ে আসা। সংসদই হচ্ছে সবচেয়ে মূল জায়গা যেখানে আলোচনা, সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন সেটি সংসদের ভেতরে হয়ে থাকে।”
তারেক রহমান বলেন, “আমরা একটি সংসদকে কার্য্কর করতে দেরি করলে এই অস্থিরতা, এই তর্ক-বিতর্ক সবকিছু সংসদের বাইরে চারদিকে ছড়াতে থাকবে।
“সংসদের বাইরে যত বেশি এটি ছড়াবে ততই সব জায়গায় বিভিন্নভাবে অর্থনীতি থেকে শুরু করে, সামাজিক অবস্থা থেকে শুরু করে সকল জায়গায় অস্থিরতা দেখা দেবে, যা সামগ্রিকভাবে দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”
এদিন বিকালে ঢাকা বার সমিতি ভবনের মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পক্তি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
‘দেশে স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের ভূমিকা’ আহ্বান করে তিনি বলেন, “এটি আগে করব, নাকি ওটি আগে করব, ওটি আগে করব, নাকি এটি আগে করব… এই তর্ক-বিতর্ক যদি চলতে থাকে তাহলে সামগ্রিকভাবে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আরও বেশি। দেশ তো ক্ষতিগ্রস্থ হবেই এবং বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেবে।”
“সেজন্য আমরা বিএনপির অবস্থান থেকে মনে করি, রাজনৈতিক দল হিসেবে, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মনে করি, দেশে যত দ্রুত সম্ভব একটি স্থিতি অবস্থা আনা সম্ভব হবে, তত দ্রুত দেশকে ধ্বংসের কিনারা থেকে ধীরে ধীরে বের করে, সরিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব।”
নির্বাচন হলে কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে- কারো কারো এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তারেক বলেন, “নির্বাচন হলেই কি সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে? সে কথাটি এভাবে না বলে আমরা চিন্তা করতে পারি, নির্বাচন হলে দেশে একটি স্থিতি অবস্থা আসবে। ধীরে ধীরে রিফর্মের কাজগুলো শুরু হবে, সমস্যাগুলোর তীব্রতা ধীরে ধীরে কমা শুরু করবে।”
“নির্বাচন হলে সমস্যাগুলোর সমাধান কিভাবে করা যায় এটি দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন বিভিন্ন মানুষ, যখন দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন স্বাভাবিকভাবে তারা বসবেন, আলোচনা করবেন, তারা কাজ করবেন। এক দিনে কোনো কিছুই হবে না। কিন্তু সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা শুরু হবে।”
বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংবাদমাধ্যমে বিভিন্নজনের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির ভাপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা মনে করি, দেশের মানুষ যে সিদ্ধান্ত নিতে চায় সেই সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করা এবং দেশের মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করা, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে তাদের সহযোগিতা করার ব্যবস্থা করা, এটি হওয়া উচিত তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) মূল লক্ষ্য।”
“যারা সংস্কারের কথা বলছেন… ওইসব সংস্কারের বাস্তবায়নে সংসদের প্রয়োজন হবে।”
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বার শাখার আহ্বায়ক অ্যাডভোভেট খোরশেদ আলমের কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন।
সেখানে বক্তব্য রাখেন- ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, বিএনপি মিডিয়া সেলের মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ঢাকা বারের অ্যাডভেকেট খোরশেদ মিয়া, অ্যাডভোকেট সৈয়দ নজরুল ইসলাম।