বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ফাল্গুন ২৮ ১৪৩১, ১২ রমজান ১৪৪৬

রাজনীতি

ছাত্রদলের দাবি

কুয়েটে হামলায় সাধারণের ব্যানারে ‘বৈষম্যবিরোধী, গুপ্ত ও নিষিদ্ধরা’

 প্রকাশিত: ১৮:৫৫, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কুয়েটে হামলায় সাধারণের ব্যানারে ‘বৈষম্যবিরোধী, গুপ্ত ও নিষিদ্ধরা’

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী ছাত্র শিবির ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সমর্থকদের দায়ী করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

ঘটনার একদিন বাদে কুয়েট ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিরি মধ্যে বুধবার খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন ছাত্রদল নেতারা।

এ সময় লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া বলেন, “জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্দীপ্ত শিক্ষার্থীসহ আরও কিছু শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করার উদ্দেশ্যে চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত করে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে গোপনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রশিবিরের গুপ্ত কর্মীরা এবং ক্যাম্পাসে রয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীরা।

“ছাত্রদল কুয়েট ক্যাম্পাসে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন না করলেও এসব গুপ্ত সংগঠনের ইন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে মব-মিছিলের পূর্বে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়ে দাবি জানানো হয়। এবং মিছিল থেকে বিরাট উসকানিতে ছাত্রদলের উপর হামলা চালানো হয়েছে।”

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে; এতে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।

একপর্যায়ে সংঘর্ষ ক্যাম্পাসের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। তারপর থেকেই ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

বুধবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসের ফটকের চারপাশে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। টহল দিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনীকেও। তবে কোনও ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। দুপুরে প্রশাসনিক, অ্যাকাডেমিকসহ সব ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

এর মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে এসে লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদলের নেতা আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া বলেন, “মঙ্গলবার বিকেলে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) একটি চরম অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। পাল্টাপাল্টি হামলায় মারাত্মকভাবে হতাহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দা। আমরা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এখানে সরেজমিনে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে এসেছি।

“আমরা আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করার সাথে সাথে উক্ত সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এসব ন্যাক্কারজনক হামলাতে ও এসবের উসকানিতে জড়িত যেই হোক না কেন, সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক তাদের সকলকে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।”

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের নামে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে অভিযোগ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “ইতিমধ্যে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বয়ান, সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন ও ছবি-ভিডিও প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, সে অনুযায়ী গতকালকের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি মিছিল থেকে রাহুল জাবেদ (২০২১-২২ সেশন), ইফাজ (২০২২-২৩ সেশন) ও ইউসুফ (২০২২-২৩ সেশন) নামের তিনজন ছাত্রদল সমর্থকের ওপর অতর্কিত হামলার মধ্য দিয়ে।

“সেই মিছিল থেকে ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যায় যে, যখন ভুক্তভোগী সেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে অতি সাধারণভাবেই মিছিলটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন কতিপয় মিছিলকারী তাদের দিকে অতর্কিতে তেড়ে গিয়ে হামলার সূচনা করে।”

আবু আফসান বলেন, “ভুক্তভোগীদের বয়ান অনুযায়ী, তাদের ধাওয়া দিয়ে ও মারধর করে কুয়েট গেইটের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং গেইটের কাছে একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেই দোকানদারকেও হেনস্তা করা হয়। যার জবাবে সেই দোকানমালিকের পরিচিত কিছু স্থানীয় লোকজন সশস্ত্র হামলা চালায় সেই মিছিলকারীদের ওপর। দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে, কুয়েটের গেইট হয়ে ওঠে এক রণক্ষেত্র। ঘণ্টাখানেক ধরে সেই এলাকায় চলে ন্যক্কারজনক সহিংসতা।”

তিনি বলেন, “সেই সহিংসতায় জড়িত কতিপয় স্থানীয় দলীয় কর্মীকে ইতোমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে আমরা দেখেছি। তবে তাদের কেউই ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত নন এবং ছাত্রদলের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর কোনো কারণও তাদের নেই।”

পরে ছাত্রদল নেতা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।