শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ফাল্গুন ১০ ১৪৩১, ২৩ শা'বান ১৪৪৬

রাজনীতি

ক্ষমতায় গেলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে: তারেক রহমান

 প্রকাশিত: ২০:৫০, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ক্ষমতায় গেলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে: তারেক রহমান

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল -বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তাঁর দল ক্ষমতায় গেলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।

পতিত স্বৈরাচার ভারতের কাছ থেকে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘এ কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলে তিস্তা পাড়ের পুরো এলাকা আজ মরুভূমিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে জাতিসংঘের কাছে যাবে এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।’ 

তারেক রহমান আজ মঙ্গলবার বিকেলে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’র উদ্যোগে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে আহুত ৪৮ ঘন্টার লাগাতার কর্মসূচির শেষ দিনে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। 

লন্ডন থেকে ‘ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে’ প্রদত্ত তাঁর এই বক্তব্য একই সাথে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা পাড়ের পৃথক ১১ টি স্থানে অয়োজিত সমাবেশে প্রচারা করা হয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের তিস্তা পাড়ের পানি বঞ্চিত মানুষ আজ সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চায়, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে, ৫৪টি অভিন্ন নদী রযেছে, ওইসব নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তি কারও করুণার বিষয় নয়। এটা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রাপ্য, বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রাপ্য। অথচ আমরা কী দেখছি? আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য আজকে আমাদেরকে আন্দোলন করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষকে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মানুষকে আজ আন্দোলন করতে হচ্ছে।’

শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ৫ আগস্ট যে স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী ভারতে পালিয়ে গেছে, সেই খুনি প্রায়ই বলতো ভারতকে যা দিয়েছি ভারত তা কোনোদিন ভুলতে পারবে না। আজ ভারত শেখ হাসিনাকে ঠিকই ভুলে যায়নি। ভারতের সম্পর্ক ছিল শেখ হাসিনার সাথে, বাংলাদেশের আপামর মানুষের সাথে নয়। 

তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে দু’একজন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছেন। সে কারণে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন ফ্যাসিবাদ আবার পুনরায় প্রতিষ্ঠিত না হয়। তাছাড়া, সরকার কোন হটকারী সিদ্ধান্ত যেন না নিতে পারে সে বিষয়েও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আন্তজার্তিক আইনের বিধান অনুযায়ী তিস্তার পানি পাওয়া আমাদের অধিকার। প্রতিবেশি দেশের অপ্রতিবেশীসুলভ আচারণের কারণে আজ আমরা আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। আজ ৫০ বছর হলো ফারাক্কায় আমাদের পানির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে তিস্তাসহ অনেক নদী এখন ধু-ধু বালুচর, এতে দেশে প্রতি বছর যেমন ৩/৪ বার বন্যা হয়, তেমনি কোটি কোটি টাকার ফসল বিনষ্ট হয়।’

‘গত ১৬ বছরে নদী কমিশনকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে প্রতিবেশী ভারতের স্বার্থে’-উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরাও প্রতিবেশী দেশের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখতে চাই, তবে সেই সম্পর্ক হবে দেশের স্বার্থে। ভারত যদি আমাদের পানির ন্যায্য অধিকার না দেয় তাহলে দেশের সবাইকে সাথে নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করবো এবং জাতিসংঘের কাছে যাবো।’

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবীতে উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা পাড়ের ১১টি পয়েন্টে দু’দিনব্যাপী ‘জনতার সমাবেশ’ কর্মসূচি পালন করে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন। এসব সমাবেশে লাখ-লাখ  মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।

‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’র প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু। দুই দিনব্যাপী এ কর্মসূচি গতকাল শুরু হয়। সোমবার দুপুরে (১৭ ফেব্রুয়ারি) এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাঁচটি জেলায় পৃথক ১১ টি স্থানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বীর বিক্রম, দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় পার্টি’র (জেপি) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।