জুলাই ঘোষণাপত্রের ব্যাপারে সবাই একমত: আইন উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠন ‘ঐকমত্য পোষণ করেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি বলেছেন, “স্পষ্টভাবে বললে, এই ঘোষণাপত্র অভ্যুত্থানের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দল, শক্তি, ছাত্র-জনতার বিভিন্ন ফোরামের সাথে আরও নিবিড় আলোচনার মাধ্যমে তৈরি করতে হবে। সর্বসম্মতিক্রমে এটা তৈরি করতে হবে।”
অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নতুন প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটি নিজেরাই জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার ঘোষণা দিলে অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়। তার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
১৬টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ২৭ জন প্রতিনিধি এদিন রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে বৈঠকে অংশ নেন।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, খেলাফত আন্দোলন, জেএসডি, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও গণ ফ্রন্টের প্রতিনিধিরা বৈঠকে ছিলেন।
আরো ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, নেজামে ইসলামী, বাসদ (মার্কসবাদী), জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্রের ব্যাপারে সবাই একমত পোষণ করেছে। এ ধরনের একটি ঘোষণাপত্রের দরকার আছে।”
তবে এর পদ্ধতিগত বিষয়ে কিছু পরামর্শ এসেছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “অনেকগুলো সাজেশন এসেছে। মোটাদাগে বলতে গেলে, অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সবার অবদান বলতে হবে, ঘোষণাপত্রের ধারাবাহিকতা উল্লেখ করতে হবে। ঘোষণাপত্রের পলিটিক্যাল এবং লিগ্যাল নেচার কী হবে তা স্পষ্ট করতে হবে।”
সর্বসম্মতিক্রমে এ ঘোষণাপত্র তৈরির ওপর জোর দিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, এটা করতে গিয়ে বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হলেও সরকারকে সেটা নেওয়ারও ‘পরামর্শ এসেছে’ দলগুলোর তরফে।
“সেটার (এটা প্রণয়নে) জন্য যতটা সময় প্রয়োজন ততটাই নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন অযথা কালক্ষেপণ না হয়।
“সবাই এখানে একমত হয়েছেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা জুলাই আন্দোলনের ঘোষণাপত্র তৈরি করতে পারব। যেই ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার সরকারের পতন আমরা ঘটিয়েছি সেই জাতীয় ঐক্যের ন্যারেটিভ আমরা একত্রে দিতে পারব।”
ঘোষণাপত্র করতে গিয়ে দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হল কিনা জানতে চাইলে আসিফ নজরুল ‘দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি’ বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, “কোনো দ্বিমত বা দূরত্ব নেই। শুধুমাত্র এটার প্রসেস কীভাবে হবে তা নিয়ে সবার মতামত আছে। এতে আমরা অনৈক্যের সুর দেখি না। বরং সবাই মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করা যায়। সবার মতামতের যেন প্রতিফলন ঘটে। সবাই যেন মনে করে জুলাই ঘোষণাপত্রের মালিকানা তাদের আছে। সে ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত আসছে। এসব মতামত ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করবে।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। গত ২৯ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনে তারা। বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর ওই ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচিও দেয় তারা।
এ বিষয়ে ২৯ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নাৎসি বাহিনীর মত অপ্রাসঙ্গিক এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের ‘কবর’ রচনা করা হবে।”
প্রথমে সরকার এর সঙ্গে যুক্ত না হলেও পরে এ প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানায়। তখন ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচি বদল করে সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
পরে সরকার ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ শুরু করে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা শুরুর কথা বলেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর দিক থেকে এ নিয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখা যায়নি।