‘আগের চেয়ে ভালো’ আছেন খালেদা জিয়া: ফখরুল
লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘আগের চেয়ে ভালো’ আছেন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আপনারাও পত্র-পত্রিকায় খবর দিচ্ছেন, আমরাও খবর নিয়েছি। উনি (বেগম খালেদা জিয়া) মানসিক দিক দিয়ে, শারীরিক দিক দিয়ে… আলহামদুলিল্লাহ আগের চাইতে অনেকটা বেটার।”
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।
উন্নত চিকিৎসকার জন্য গত ৮ জানুয়ারি তাকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে লন্ডনে নিয়ে যেতে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি নিজের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠান, সেই উড়োজাহাজে খালেদা জিয়া লন্ডনে যান।
সেখানকার চিকিৎসকরা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া চিকিৎসকদের সঙ্গে বসে খালেদা জিয়ার লিভার, কিডনি, হৃদযন্ত্রসহ বিভিন্ন রোগের তথ্য জেনেছেন এবং বাংলাদেশে যেসব চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে অবহিত হয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, “ম্যাডাম আগের চেয়ে ভালো আছেন। রুটিন বিভিন্ন পরীক্ষাগুলো ডাক্তাররা করছেন। যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে তার রিপোর্টের ফলাফল দেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এখানে উনার চিকিৎসার ধরনে কিছুটা পরিবর্তনও আনা হয়েছে।”
তিনি জানান, খালেদা জিয়ার জন্য তার ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসা থেকে রান্না করা খাবার হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল-দুপুর-বিকাল-সন্ধ্যায় এই খাবার হাসপাতালে নিয়ে যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান নিজে।
খালেদা জিয়া তার দুই ছেলের তিন মেয়ে (তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান, আরাফাত রহমান কোকোর মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান) সার্বক্ষণিক নানির সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন বলে জানান জাহিদ।
তিনি বলেন, “ম্যাডাম নাতনিদের দীর্ঘদিন পর পাশে পেয়ে মানসিকভাবে খুবই খুশি ও উৎফুল্ল বোধ করছেন।”
দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে যেতে হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ২০২০ সালে তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পেলেও তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি হয়নি।
এরপর চার বছরে তাকে কয়েক দফা ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা ঢাকায় এসে খালেদা জিয়ার যকৃতে ‘ট্র্যান্সজাগুলার ইন্ট্রাহেপেটিক পোরটোসিসটেমিক শান্ট (টিপস)’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুই রক্তনালীর মধ্যে একটি নতুন সংযোগ তৈরি করে দিয়ে যান।
তখন থেকেই বলা হচ্ছিল, বিদেশে নিয়ে খালেদা জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা দরকার। গত অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করে খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্তি দিলে সেই সুযোগ তৈরি হয়।
এজেডএম জাহিদ হোসেন আগেই জানিয়েছিলেন, লন্ডনের চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হলে খালেদা জিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিও তাদের আছে।