ভ্যাট অধ্যাদেশ প্রত্যাহার, টিসিবির ট্রাক সেল চালু চায় নাগরিক কমিটি
ওষুধ, এলপি গ্যাস, গুঁড়া দুধ, মোবাইলে ফোনের সিম ব্যবহারের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবাসহ শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক, কর, ভ্যাট বাড়িয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের জারি করা দুটি অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
একই সঙ্গে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রক্রিয়া ফের শুরু করার কথাও বলছে দলটি।
এছাড়া আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চুক্তির শর্ত পুনর্বিবেচনা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর বাংলা মটরে কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
গত ১০ জানুয়ারি বিস্কুট, ওষুধ, পোশাক কেনাকাটা, মিষ্টি, বেশ কয়েক ধররেনর টিস্যু, মোটর গাড়ির গ্যারেজ, এলপি গ্যাস, ওষুধ, মোবাইলে ফোনের সিম ব্যবহারের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবাসহ শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক, কর, ভ্যাট বাড়িয়ে দুটি অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।
চলতি অর্থবছরের মাঝপথে এসে আইএমএফের চাপে এসব পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট, সম্পূরক ও আবগারি শুল্ক বাড়ানোর ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, "মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর জন্য দুটো অধ্যাদেশ জারি করার ফলে মূল্যস্থীতি ও ব্যবসায়ের খরচ বাড়বে যা সাধারণ মানুষের জীবনমানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
"সরকার তার রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য করের আওতা বাড়াবে এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কিন্তু কর বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারকে স্মরণ রাখতে হবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান যাতে নেমে না যায় ও তাদের ভোগান্তি যাতে না বাড়ে।"
বিগত সরকারকে 'অবৈধ' ও তার অর্থনৈতিক নীতিকে 'গণবিরোধী লুটেরা' আখ্যায়িত করে তিনি বলেছেন, এমনিতেই মানুষের জীবনযাত্রা ‘নাজুক’ অবস্থায় আছে।
"এ অবস্থায় বিগত অবৈধ সরকার আইএমএফ কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আপনারা জানেন যেকোন দেশের জন্য আইএমএফের লোন হল, লোন প্রাপ্তির সর্বশেষ আশ্রয়। এই কঠিন ঋণের শর্ত হিসেবে কয়েকটি ধাপে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তের অংশ হিসবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্প্রতি এ অধ্যাদেশগুলো জারি করেছে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, "গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট সরকারের কাছে আমাদের প্রশ্ন অবৈধ সরকারের ঋণের এই শর্ত বর্তমান সরকার পুনর্বিবেচনার জন্য আইএমএফকে আহবান জানিয়েছে কি? তারা একটি অবৈধ সরকারের চুক্তির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে জনগণের দূর্ভোগ বাড়াতে পারে না।"
সম্প্রতি টিসিবির মাধ্যমে ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে জানিয়ে এ প্রক্রিয়া 'অবমাননাকর' বলে মন্তব্য করেন কমিটির সদস্য সচিব।
তিনি বলেন, "আমরা দেখেছি এই দেশের নাগরিক কিভাবে ট্রাকের পিছনে ৫ টাকা ১০ টাকা কমে চাল, ডাল, তেল, চিনি কেনার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। আমরা কল্পনা করতে পারি না জনগণের প্রতি কতোটা দায়হীন অনুভব করলে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।"
অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, "সরকার প্রত্যক্ষ করের আওতা বাড়াতে পারে যা সরাসরি সাধারণ মানুষের জীবনমানের ক্ষতি করবে না। বিদ্যমান কর কাঠামোয় যে সীমাহীন দুর্নীতি হয় তা বন্ধ করার উদ্যোগ নিলে রাজস্ব আয় বাড়বে।
"বিগত সরকার ১৫ সময়ে বিদেশে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার করেছে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে। সেগুলো দেশে ফেরত আনার জন্য সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ”
দেশে বিদ্যমান অর্থঋণ আদালত সরকারকে দ্রুত ট্রাইব্যুনাল করার যাবতীয় আইনি সুযোগ দিয়েছে জানিয়ে কমিটির আখতার হোসেন বলেন, "সরকার এ সুযোগ ব্যবহার করে দ্রুত একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে খেলাপি অর্থ আদায় ও অনাদায়ে তাদের সম্পতি ক্রোক করতে পারে। আমরা সরকারকে উদাত্তভাবে আহবান জানাচ্ছি বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে নতুন করে দুর্ভোগের দিকে ঠেলে দেওয়াকে আমরা কোনভাবেই সমর্থন করি না।”