খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে ‘বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেস’’ শাহজালালে
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যেতে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো ‘বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স’ ঢাকার মাটিতে এসে পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, কাতারের রাজধানী দোহা থেকে সোমবার রাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি এসে পৌঁছায় ।
বর্তমানে বিমানবন্দরের ভিআইপি টারমার্কে কঠোর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি রাখা হয়েছে।
এনামুল হক চৌধুরী বলেন, “কাতারের মহামান্য আমির ম্যাডামের অসুস্থতার খবর শুনে তার সম্মানে এই বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি পাঠিয়েছেন। আমি রাতে নিজে উপস্থিত ছিলাম বিমানবন্দরে।“
এই বিশেষ উড়োজাহাজে ৪ জন চিকিৎসক ও প্যারামেডিক্স থাকবেন বলেও জানিয়েছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের এই সদস্য।
তিনি বলেন, “বিমানটিতে সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধার যন্ত্রপাতি, মেসিনারি ও ল্যাবরেটরিও হয়েছে।“
খালেদা জিয়া ফিরোজা ছাড়ছেন রাত ৮টার মধ্যে
খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে কাতারের আমির রাজকীয় বহরের এই বিশেষ উড়োজাহাজ পাঠিয়েছেন জানিয়ে চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, “আমরা আজ রাত ১০টায় লন্ডন যাত্রা করব। এখন পর্যন্ত এরকম সূচি ঠিক করা হয়েছে।
“ম্যাডাম রাত ৮টার মধ্যে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। লন্ডন যাত্রা পথে দোহায় যাত্রা বিরতি রয়েছে। ইনশাল্লাহ সব কিছু ঠিকঠাক মত চলছে, এটা চলছে আমরা ১০টার মধ্যে ট্যাক অফ করতে পারব।"
যুক্তরাজ্যে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভর্তি হবেন ‘লন্ডন ক্লিনিকে’, যেখানে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি ধনাঢ্য ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিতে যান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সাথে তার মেডিকেল বোর্ডের ৬ জন সদস্যও যাবেন। তারা হলেন, মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক এফএম সিদ্দিক, অধ্যাপক নরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন।
এছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান সিঁথি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পাঁচ মাস বাদে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। প্রাথমিক পরিকল্পনায় তার লন্ডন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা বলা হলেও এখন যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়াই চূড়ান্ত হয়েছে।
সবশেষ সাড়ে সাত বছর আগে যুক্তরাজ্যেই চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। সেবার চোখ ও পায়ের চিকিৎসা নিয়েছিলেন। লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় তিনি ভুগছেন।
মাঝে কারাবন্দি জীবনের পর শর্তসাপেক্ষে মুক্তি মিললেও বিদেশে তার চিকিৎসার অনুমতি দেয়নি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এই অনুমতির জন্য তার দল আন্দোলন-সংগ্রাম করেও সুবিধা করতে পারেনি।
সেই কারণে ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডনযাত্রার পর আর কোনো বিদেশ সফর হয়নি।
পরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতন হলে অন্তর্বর্তী সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়। এরপর তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।এরপর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তার লন্ডন যাওয়ার দিনক্ষণ ঠিক হয়।
লন্ডন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর সেখানে মেরিল্যান্ডে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপিটালের মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি কেয়ার ইউনিটে লিভার ট্রান্সপারেন্টের চিকিৎসা নেবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা দলের সদস্যরা বলেছেন, এরইমধ্যে তার যাবতীয় চিকিৎসার কাগজপত্র, বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট সেখানে পাঠানো হয়েছে।