শুক্রবার ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, পৌষ ২০ ১৪৩১, ০৩ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

ঢাবি: বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সাদা দলে ভাঙন

 আপডেট: ১১:০৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

ঢাবি: বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সাদা দলে ভাঙন

পাল্টাপাল্টি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সোমবার বিকালে সাদা দলের এক সাধারণ সভায় ২০২৫ ও ২০২৬ সালের জন্য অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে আহ্বায়ক এবং দুইজন যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচন করা হয়।

ওই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে সাদা দলের একাংশ। রাত ৯টায় এক সংবাদ সম্মেলনে তারা অধ্যাপক আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পাল্টা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে।

সোমবার বিকেলের সাদা দলের সভায় সর্বোচ্চ ভোটে আহ্বায়ক মনোনীত হন মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান। আর যুগ্ম আহ্বায়ক মনোনীত হন অধ্যাপক আবদুস সালাম ও অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকার।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী দুই বছর তারা দায়িত্ব পালন করবেন।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাদা দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি ইউনিট থেকে একজন আহ্বায়ক ও দুইজন যুগ্ম-আহবায়কের নাম প্রস্তাব করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ইউনিট কমিটিগুলোকে লিখিত ভাবে বলা হয়।

ইউনিট কমিটিগুলো গত ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সাধারণ সভা করে একজন আহ্বায়ক ও দুইজন যুগ্ম আহ্বায়কের নাম প্রস্তাব করে। সেসব নাম গত ২২ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয়।

তাতে দেখা যায় ১২টি ইউনিটের মধ্যে ৮টি ইউনিট থেকে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানের নাম আহ্বায়ক হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম তালুকদারের নাম ৪টি ইউনিট থেকে প্রস্তাব করা হয়। যুগ্ম আহবায়ক (দক্ষিণ) হিসেবে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালামের নাম ৭টি ইউনিট থেকে, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল মুজাদ্দেদী আলফেছানী-এর নাম ৪টি ইউনিট থেকে এবং ফলিত রসায়ন ও কেমি-কৌশল বিভাগের অধ্যাপক এ এফ মুস্তাফিজুর রহমানের নাম ১টি ইউনিট থেকে প্রস্তাব করা হয়।

যুগ্ম- আহবায়ক (উত্তর) হিসাবে ফারসি ভাষা সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকার-এর নাম ৭টি ইউনিট থেকে, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মেজবাহ উল ইসলাম-এর নাম ৪টি ইউনিট থেকে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ রুহুল আমীন-এর নাম ১টি ইউনিট থেকে প্রস্তাব করা হয়।

সাদা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা সংখ্যাগরিষ্ঠ ইউনিটের সমর্থনপ্রাপ্ত হিসেবে ২০২৫ ও ২০২৬ সালের জন্য আহ্বায়ক হিসেবে মোর্শেদ হাসান খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আবদুস সালাম ও অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকারকে নির্বাচিত ঘোষণা করে।

পাল্টা কমিটি

সাদা দলের একাংশ রাত ৯ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে।

এ কমিটির আহ্বায়ক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম তালুকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কমিটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

এ কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রয়েছেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মাদ আলমুজাদ্দেদী আলফেছানী, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও অধ্যাপক মেজবাহ উল ইসলাম।

উপদেষ্টা পরিষদে আছেন ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক মো. সেলিম রেজা, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিভাগের অধ্যাপক মো. এনামুল হক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান মিয়াজি, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মাদ শফিক আহমেদ, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. এমরান কাইয়ুম, ইইই বিভাগের অধ্যাপক এস এম মোস্তফা আল মামুন।

এ কমিটির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম তালুকদার লিখিত বক্তব্যে বলেন, “বর্তমান সাদা দলের একটি ক্ষুদ্র সুবিধাবাদী বলয় কর্তৃক আহ্বায়ক হিসেবে অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম-আহবায়ক হিসেবে অধ্যাপক আব্দুস সালাম ও আবুল কালাম সরকার এর নাম প্রস্তাবিত হয়েছে। অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, বিএনপির মিডিয়া সেল এর সদস্য, ইউট্যাবের মহাসচিব, জেডআরএফ এর ডিরেক্টর অ্যাডমিনসহ বিভিন্ন দলীয় পদে আসীন। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১৫ ধারায় 'এক নেতা এক পদ' বাস্তবায়নেই সাদাদল এর পেশাজীবীরা দেখতে চায়।

“আমরা মনে করি, বিএনপির বহু পদে আসীন মোর্শেদ হাসান খান সাদা দলের বিশেষ সিন্ডিকেট/কোটারির সাথে যুক্ত হয়ে সাদা দলের জাতীয়তাবাদী চরিত্র ধ্বংসের দিকে ধাবিত করবেন এবং জাতির সামনে জাতীয়তাবাদী শক্তি প্রশ্নবিদ্ধ করবেন।"

তিনি বলেন, "দুইজন যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক আব্দুস সালাম ও আবুল কালাম সরকার গঠনতন্ত্রবিরোধী বিশেষ (বলয়) কমিটির সদস্য হওয়ায় এবং ১০-১৫ বছর নেতৃত্বে থাকায় তারাও বর্তমান প্রস্তাবিত পদে থাকার নৈতিক কার্যকর অধিকার হারিয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন নেতৃত্বে সাদা দল পুর্নগঠন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।"

এসব অভিযোগের বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেখা যায়নি সাদা দলের অপর অংশকে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম অপর অংশের কয়েকজন নেতাকে কয়েকবার ফোন করলেও তারা সাড়া দেননি।