খালেদা জিয়া লন্ডন যাচ্ছেন জানুয়ারির প্রথমার্ধে
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসা নিতে জানুয়ারির প্রথমার্ধে লন্ডন যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে ইনশাল্লাহ জানুয়ারির প্রথমার্ধে উনাকে ইউকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। যদিও উনার সঠিক তারিখ এখন পর্যন্ত নির্ধারিত হয় নাই।
“যথা সময়ে সেটি (নির্ধারিত তারিখ) আপনাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হবে।”
জাহিদ হোসেন বলেন, মেডিকেলের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি বিমানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী লন্ডন যাবেন। তার সঙ্গে চিকিৎসকের একটি দল, পরিবারের কয়েকজন সদস্য ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তারাও যাবেন।
খালেদা জিয়া প্রথমে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যাবেন তার ছেলে তারেক রহমানের কাছে। সেখানে কয়েকদিন অবস্থানের পর যুক্তরাষ্ট্র যাবেন লিভার জটিলতার চিকিৎসার জন্য।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে পূর্ব বাল্টিমোরে বিশ্বখ্যাত জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালে বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাও নিয়েছেন তিনি।
২০২৩ সালের অগাস্ট মাসে এই হাসপাতালের তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রফেসর ক্রিসটোস স্যাভাস জর্জিয়াডস, প্রফেসর জেমস পিটার অ্যাডাম হ্যামিলটন ও প্রফেসর আবদুল হামিদ আহমেদ আব্দুর রব ঢাকা এসে এভারকেয়ার হাসপাতালে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেন। তারা বিএনপি চেয়ারপারসনের লিভারের রক্তনালীতে সফল অস্ত্রোপচার করেন।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে আইসিইউতে রেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে দীর্ঘ সময়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। ওই বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন খালেদা। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।
এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছিল শেখ হাসিনার সরকার। প্রতিবারই তাকে দুটি শর্ত দেওয়া হচ্ছিল। তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।
সাময়িক মুক্তির পর তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের তরফ থেকে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হলেও ওই শর্তের যুক্তি দিয়েই বার বার তা প্রত্যাখ্যান করেছে শেখ হাসিনার সরকার।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসাধীন থেকে সর্বশেষ ২১ অগাস্ট গুলশানের বাসায় ফেরেন বিএনপি প্রধান।
গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে খলেদা জিয়াকে হঠাৎ করে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা নিয়ে ছয়দিন পর বাসায় ফেরেন তিনি।