আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে ‘প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা’ দেখছেন রিজভী
প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার কারণে সারাদেশে ‘চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই’ বেড়েছে বলে মনে করেন বিএনপি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সোমবার সকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে বলেন, “আজকে চার মাস, সাড়ে চার মাস হতে চলল, কেন ছিনতাইকারী বেড়ে যাবে?
“ছিনতাইকারীর ছুরিতে ৯ জন লোক ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকায় মারা গেল। কেন আজকে পাড়ায়-মহল্লায় ছিনতাইয়ের প্রকোপ বেড়েছে, চুরি-ডাকাতি বেড়ে গেছে। আপনি দুই-তিন দিনের গণমাধ্যম দেখুন, প্রত্যেকটি জায়গায় চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বেড়ে গেছে।”
গত ৫ অগাস্ট গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই পুলিশ বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রতিদিনই চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন-জখমের খবর আছে সংবাদ মাধ্যমে।
অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যেই এ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। গত ১৯ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও বলেছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ৫ অগাস্ট পরবর্তী সময়ের চেয়ে ‘অনেকটা উন্নতি’ হলেও জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছেনি।
এ অবস্থায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, “অনেকে বঞ্চিত ছিলেন, অনেকের প্রমোশন হয়েছে, অনেক কিছুই হয়েছে। তাহলে কেন অথরিটি প্রয়োগ করতে পারছেন না? প্রশাসনের কর্তৃত্ব আপনি বজায় রাখতে পারছেন না? তার মানে প্রশাসনের যে কো-অর্ডিনেশন, সেই কো-অর্ডিনেশনটা, সেই সমন্বয়টা ঠিকমতো হচ্ছে না।”
তিনি বলেন, “উপদেষ্টারা অনেক কথা বলছেন, অনেক বড় বড় কথা বলছেন এবং আমরা যদি কিছু বলি, আমাদেরকে উল্টো সবক দিচ্ছেন যে, ‘আপনারা ৫৩-৫৪ বছর কিছু করতে পারেননি, এখন আমরা করছি’।
“আরে বাবা, সারা পৃথিবীর অর্জন তো রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হয়েছে, যুদ্ধ তো হচ্ছে পলিটিক্যাল মুভমেন্টের এক্সনেটনশন। যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে, এটাও তো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এই অর্থে যে, একজন মেজর ঘোষণা দিয়েছেন, তারপরে সরকার গঠন হয়েছে, তারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, জিয়াউর রহমানরা যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন।”
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় এই দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠান হয়।
‘অনেক গুমের সহযোগী ছিলো ভারত’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “এই যে গুম কমিশনের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাচ্ছি। অনেক গুমের সহযোগী ছিল ভারত। আজকে অনেক লোককে ওখান থেকে ছাড়ছে, এটার ব্যাপারে তো একটা তদন্ত হওয়া উচিত… এই যে লোকগুলোকে ছাড়ছে তাহলে কী এরা ভারতে গুম ছিলো?
“শেখ হাসিনার গুমের সহযোগী ছিল পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, তার প্রমাণ তো আমাদের স্থায়ী কমিটির মেম্বার সালাহউদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশে সে দুই মাস গুম থাকল তারপরে তাকে পাওয়া গেল ভারতে।”
অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই করেছে তাদের নিয়ে আপনারা কাজ করুন। পার্শ্ববর্তী দেশ কিন্তু বসে নেই। তারা নানা ধরনের একটা পর একটা দাবার চাল দিতে থাকবে এবং দাবার চাল যদি বুঝতে না পারেন তাহলে দেশের কিন্তু অনেক ক্ষতি হবে।”
দোয়া মাহফিলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতসহ বীর মুক্তিযোদ্ধারা বক্তব্য রাখেন।