নির্বাচন
প্রধান উপদেষ্টাকে ‘সাধুবাদ’ দিলেন মির্জা আব্বাস, চাইলেন ‘রোডম্যাপ
আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে সাধুবাদ জানালেও দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের দাবির কথা আবারও মনে করিয়ে দিয়ে ‘রোডম্যাপ’ চেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতা মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেছেন, “আমরা আশা করছি, এই সরকার দ্রুততম সময়ে জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফেরত দেবে, এটাই আমাদের কাম্য।”
সোমবার বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে ধারণা দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, “আমি সকল প্রধান সংস্কারগুলি সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে বারবার আপনাদের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছি। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদেরকে যদি, আবার বলছি ‘যদি’, অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়ত সম্ভব হবে।
“আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটা দাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।”
পরে শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধি চত্বরে মির্জা আব্বাসকে প্রধান উপদেষ্টার ওই বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “আমি প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যটা শুনি নাই… আপনার মুখেই যেটা জানলাম.. উনি যেটা বলেছেন, যথার্থ বলেছেন। নির্বাচনে যারা পার্টিসিপেট করবে, যারা অংশীজন, তারা যদি চায়, তিনি যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দেবেন। সাদুবাদ জানাই। কিন্তু এর বাইরে কোনা কথা কারো নাই।
“আর সংস্কার একটা বিষয়… এটা যুগ যুগ ধরে চলবে। এটা নতুন কিছু না। এটা হঠাৎ করে… এটা একটা প্যাকেট না, একটা প্যাকেটে করে এনে আমি সংস্কার হয়ে গেলাম। এটা সময়ের বিবর্তনে, সময়ের চাহিদায় সংস্কার প্রয়োজন হয়।”
মির্জা আব্বাস বলেন, “এদেশের মানুষ ভোটের অধিকার চায়। আমরা শুনেছি, আমরা দেখেছি, ভোটের কথা বললে, ইলেকশনের কথা বললে অনেকের মুখ বাঁকা হয়ে যায়। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব স্পষ্ট বলেছেন, আমাদেরকে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে, এটা একটু আমাদের জানিয়ে দিন।
“আমরা অপেক্ষা করতে রাজি আছি। সংস্কার হবে। অপেক্ষা করব। কিন্তু যুগ যুগ ধরে এভাবে চলতে পারে না। আজকে দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ, আজকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। মানুষ আজ বাঁচার আশ্রয় খুঁজছে। মানুষ কথা বলতে পারছে ঠিকই, কিন্তু দেশের মানুষের অভাবের তাড়না রয়ে গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচিত সরকার না আসবে, ততক্ষন পর্যন্ত এই সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। আমরা চাই, এই সরকার একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করুক।”
মির্জা ফখরুলের আরোগ্য কামনা
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সাভারে জাতীয় স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে নেতা-কর্মীদের প্রচণ্ড ভিড়ে বিএনপি মহাসচিব অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত সাভার সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাভারের কর্মসূচি শেষ করে বিএনপি মহাসচিবের শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করার কথা ছিল। তার বদলে সেখানে দলের নেতৃত্ব দেন মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, “আমার এই জায়গায় আজকে আমাদের প্রিয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথা বলার কথা ছিল। উনি আজকে নাই। কারণ উনি এই মুহূর্তে অসুস্থ অবস্থায় সিএমএইচএ ভর্তি আছেন।
“আমরা তার আরোগ্য কামনা করছি যত সম্ভব শিগগিরই তিনি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।”
বিজয় দিবসে বিএনপি প্রত্যাশা কী– এ প্রশ্নে মির্জা আব্বাস বলেন, “এই বিজয় দিবসে আজকে যে জনগণের ঢল, আমি এতো বছর আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে এযাবৎকাল…. সেই আমাদের বিজয় স্তম্ভ… জাতীয় সৌধ সাভারে গেছি, এই মাজারে (জিয়াউর রহমানের সমাধি) এসেছি বহুবার; কিন্তু আজকের মত এরকম জনগণের ঢল আমার জীবনে আমি কখনো দেখিনি।
“এর একটাই মাত্র কারণ, জনগণের বাধভাঙা উল্লাস। এদেশের মানুষ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। এদেশের মানুষ চায় এক স্বৈরাচার মুক্ত করে আমরা জনগণ যেন আর কোনো স্বৈরাচারের হাতে না পড়ি।”
‘রাজনীতিকরা একদিনে তৈরি হননি’
মির্জা আব্বাস বলেন, “একজন উপদেষ্টা কয়েকদিন আগে বলেছেন, আমি তার জবাব দিতে চাই না… তিনি বলেছেন ‘৫৩ বছর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কী করেছেন?’ আমি বলতে চাই, আপনি রাজনীতি করেন নাই। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্পর্কে একটু দয়া করে সন্মান নিয়ে কথা বলবেন। একজন রাজনীতিক একদিনে তৈরি হয়ে যায়নি।”
নির্বাচিত সরকারের অধীনে রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি তোলায় পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর অতীতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আজকে তারা বলছে, সংস্কার তারাই সবচেয়ে ভালো করতে পারবে, এটাই তো গণতান্ত্রিক দেশের কথা। তাইলে তারা ৫৩ বছর কেন করেন নাই?”
সেই প্রসঙ্গ ধরে মির্জা আব্বাস বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান কিংবা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিংবা এখানে যারা দাঁড়িয়ে আছেন– এরা একদিনে তৈরি হয় নাই। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা যা বলেন, তাদের কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করেন, মানার চেষ্টা করেন। এই কথা ভাববেন না যে আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য লড়াই করি। ক্ষমতা যাওয়ার কথা আমরা কখনো বলি না, আজো বলি নাই, কখনো বলব না। আমরা চাই, জনগণের ভোটের অধিকার, আমরা চাই, জনগণের শাসন।”
বিজয় দিবস উপলক্ষে নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য্ বলেন, “আজকে আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। দেশের মানুষ দেশের জনগণকে এ বিজয় উসব পালন করার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
বিজয় দিবস উপলক্ষে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী এদিন জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মাসুদ আহমেদ তালুকদার, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতন, নাজিম উদ্দিন আলম, সাইফুল আলম নিরব, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মহানগর উত্তর বিএনপির আমিনুল হক, দক্ষিনের তানভীর আহমেদ রবিন, যুব দলের আবদুল মোনায়েম মুন্নাসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।