আল্লাহ তা`লা কেন মিরাজে নিয়েছিলেন রাসূল সা: কে?
তাৎপর্য: বিশ্বনবির ভরাক্রান্ত, ব্যতিত হৃদয়কে চরম শান্তনা দেওয়ার জন্য।
রাসূল (সা:) নবুওয়ত লাভ কারর পর ইসলামের দাওয়াত দেয়ার কাজ শুরু করেন। বাধা সৃষ্টি করে আবু জেহেল ও তার মিত্ররা। তারা চেষ্টা করল রাসূলুল¬াহ (সা:) এর মুখ বন্ধ করে দিতে। কিন্তু পারে নি। আরব সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য তারা বলল হে মুহাম্মদ! তুমি যদি সত্য নবি হয়ে থাক তাহলে আকাশের চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করে দেখাও মহান আল্লাহর অসীম কুদরতে রাসূল (সা:) এর আঙ্গুলের ইশারাতে চাঁদ দ্বিখন্ডিত হল। তাদের সাথে রাসূল (সা:) এর কথা ছিল তারা ঈমান গ্রহণ করবে। কিন্তু ঈমান গ্রহণ করবে দূরের কথা, বরং বলতে লাগল ‘হে মুহাম্মদ! তুমি অনেক বড় জাদুকর। তুমি যাদু করেছ। তুমি আসমানেও যাদু চালাতে জানো।’ এই কপালপুড়া আবু জাহিল ও তার মিত্রদের কোনো কথায় রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কান দিলেন না। তিনি দায়াতে ও তাবলীগের কাজকে আরো বেগমান করলেন। এবার আবু জেহেল ওতবা শাইবা ও তাদের দোসররা সম্মিলিত হয়ে মুসলমানদেরকে চরমভাবে বয়কট করল। তখন মুসলমানদেরকে দিক নির্দেশনা দিলেন আবু তালিব। তিনি বললেন ভাতিজা মুহাম্মাদ! বয়কটের সময়ে শহরের বাইরে থাকা মুসলমানদের জন্য নিরাপদ মনে করছি। তার দিক নির্দেশনা মতো মুসলমানরা শহরের বাইরে অবস্তান করল। দীর্ঘ তিনটি বছরের চরম দূর্ভোগ আর সীমাহীন কষ্টের বিবরনে প্রখ্যাত সাহাবি হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা:) বলেন। আমি রাতের বেলায় কুরিয়ে এক টুকরো চামরা পেলাম। ধুয়ে পরিস্কার করলাম আগুনে পুড়িয়ে গুরো করলাম। তারপর পানিতে মিশিয়ে পান করে ক্ষধার জ্বালা কিছুটা নিবারন করলাম। (সীরাতে রাসূলে আকরাম, পৃ. ১৩৪)
বয়কট থেকে মুক্তি পাবার পরপরই রাসূল (সা:) এর স্নেহশীল চাচা আবু তালিব ইন্তেকাল করেন। চাচা মৃত্যুতে তিনি মুসড়ে পড়েন। শোকের কালো ছায়া নেমে আসে। চাচার মৃত্যু শোক এখনও কাটেনি, এরই মধ্যে ঘটে গেল আরেকটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। চাচার মৃত্যুর তিনদিন পর রাসূল (সা:)-এর সুখ দু:খের সঙ্গীনি প্রিয়তমা সহধর্মিনী স্ত্রী খাদিজা ইন্তিকাল করলেন। খাদিজার মৃত্যুতে শোকের কালোছায়া আবারও আগাত করলো রাসূল (সা:) এর অন্তরে আর মন মগজে। ভরাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে দাওয়াত ও তাবলীগের উদ্দেশ্যে চললেন তায়েফ অভিমুখে। তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। কিন্তু তায়েফবাসী ইসলাম গ্রহন করল না, বরং রাসূল (সা:) এর উপর বর্বর হায়েনার মতো অমানুষিক নির্যাতন করেছে। পুরো দেহ রক্তাক্ত করেছে।
তিনি স্বজনহারা, দেশ ও দেশের মানুষহারা। তবুও ভাবছিলেন তায়েফে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা সম্বব হয় নি। বাধ্য হয়ে জম্মভূমি মক্কাতে ফিরে এলেন। তখন রাসূল (সা:) এর নূরানী চেহারায় বিষন্নতারচাপ, মাথার চুল এলোমেলো। চরম ব্যথায় ভরাক্রান্ত তার দেহমান, আপন চাচা এবং স্ত্রী খাদিজার মৃত্যুর শোক এখনো শেষ হয় নি। দূর হয় নি শ্বাসরুদ্ধকর বয়কট আর মুসলমাদের দূরাবস্তা এবং কষ্টের ব্যাথা। এমন সময় মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধু রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মিরাজের মাধ্যমে পরম সান্যিধ্য লাভে ধন্য করেন। মুছেদেন জিবনের সব দুঃখ যাতনা। ফিরিয়ে দেন নতুন জিবনের সঞ্জীবনী অতএব আমরা একথা বলতে পারি যে মহান আল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সরাসরি সাক্ষাত লাভের মাধ্যমে চরম বিপর্যয়ের সময়ে পরম সান্নিধ্য দেওয়াই ছিল মিরাজের অন্যতম তাৎপর্য।