গ্রীষ্মকালীন ফল পর্ব – ২: লিচু

লিচু
মিষ্টির রাজপুত্রগ্রীষ্মকালীন ফলের রাজ্যে আমের পরে যে ফলটির নাম উচ্চারিত হয়, তা হলো লিচু। ছোট-বড় সবার প্রিয় এই রসালো, মিষ্টি ফল গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে এনে দেয় স্বস্তি ও আনন্দ। লিচুকে অনেকে “মিষ্টির রাজপুত্র” বলেও আখ্যায়িত করেন। শুধু স্বাদেই নয়, লিচু তার সৌন্দর্য, রং ও পুষ্টিগুণেও বেশ সমৃদ্ধ।
লিচুর জন্ম ও প্রসার
লিচুর উৎপত্তি মূলত চীন দেশে। সেখান থেকেই এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং আজ বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, নেপালসহ অনেক দেশে জনপ্রিয় ফল হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে লিচুর চাষ মূলত দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে হয়ে থাকে। এর মধ্যে দিনাজপুরের লিচু সর্বাধিক সুস্বাদু ও বিখ্যাত।
লিচুর জাত ও বৈচিত্র্য
বাংলাদেশে লিচুর বেশ কয়েকটি উন্নত জাত রয়েছে, যেমন:বেদানা – রসালো, মিষ্টি ও আকারে মাঝারি
বোম্বাই – আকারে বড় ও রসালো, সহজে খোসা ছাড়ানো যায়
চায়না থ্রি – বাজারে খুবই জনপ্রিয়, আকারে বড় ও ঘ্রাণযুক্ত
মাদ্রাজি – টক-মিষ্টি স্বাদের
কালিগঞ্জ – গাঢ় লালচে খোসা ও সুমিষ্ট
প্রতিটি জাতের স্বাদ, রং ও গন্ধ আলাদা হওয়ায় বাজারে নানা দামে ও চাহিদায় বিক্রি হয়।
পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
লিচু শুধু স্বাদের জন্যই নয়, এটি স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও বেশ উপকারী। এতে রয়েছে:ভিটামিন সি – রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট – ত্বক ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে
কপার ও পটাশিয়াম – হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
আয়রন ও ক্যালসিয়াম – হাড় ও রক্তের জন্য উপকারী
তবে অতিরিক্ত লিচু খাওয়া শিশুরা কখনও কখনও হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় ভোগে বলে চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন পরিমিত খাওয়ার।
চাষ ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব
লিচু চাষে বাংলাদেশের কৃষকরা প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে থাকেন। মে মাসে বাজারে লিচু আসতে শুরু করে, আর তখন থেকেই শুরু হয় ব্যাপক কেনাবেচা। দিনাজপুরের লিচু দেশের বাইরেও রপ্তানি হচ্ছে। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও লিচু একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
লিচু আমাদের গ্রীষ্মকালীন ফলের ভাণ্ডারে এক অনন্য উপহার। সুস্বাদু, মিষ্টি ও পুষ্টিকর এই ফলটি শুধু খাদ্য নয়, বরং আমাদের সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সঙ্গেও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আমের পরেই লিচু যে “মিষ্টির রাজপুত্র” — সে সম্মান পুরোপুরিভাবে তার প্রাপ্য।
পরবর্তী পর্বে আসছে: তরমুজ – গ্রীষ্মের শীতল সমাধান