বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, বৈশাখ ১০ ১৪৩২, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৬

ব্রেকিং

কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ বাতিল, সিন্ডিকেটের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন ও সংস্কারে একমত ইসলামী আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদ মিরাজ-তাইজুলের আঘাতে জিম্বাবুয়ের ওপেনিং জুটি ভাঙলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে কাতারকে আহ্বান: ড. মুহাম্মদ ইউনূস মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণ-হত্যার বিচার শুরু সিদ্ধান্ত পাল্টে ফের আন্দোলনে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা কুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপদেষ্টা, অনশনে অনড় শিক্ষার্থীরা ড. ইউনূসের নামে দুদকের মামলা বাতিল পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ : অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান ড. ইউনূসের ‘আলু হইছে গলার কাঁটা’ কুয়েটে শিক্ষা উপদেষ্টা টিউলিপের বক্তব্য জানতে ঢাকার দুই ঠিকানায় তিনবার দুদকের নোটিস, চিঠি ফেরত গাজায় শিশু হাসপাতালেও ইসরায়েলি হামলা, আরও ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত বিজয়ের বিবেকের জাগরণ : রক্তে লেখা আত্মদানের গল্প

লাইফস্টাইল

গ্রীষ্মকালীন ফল পর্ব – ১: আম

এস, এম, শামীম

 প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

গ্রীষ্মকালীন ফল পর্ব – ১: আম

আম

বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল মানেই ফলের মৌসুম। আর এই মৌসুমের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ও জনপ্রিয় ফল নিঃসন্দেহে আম। একে বলা হয় “ফলের রাজা”। স্বাদ, গন্ধ, রং ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটি শুধু বাংলাদেশের মানুষজনেরই নয়, পুরো উপমহাদেশের মানুষের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। নানা জাতের আম, নানা স্বাদ আর ব্যবহারযোগ্যতায় আম আমাদের সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলে।

আমের ইতিহাস ও উৎপত্তি
আমের উৎপত্তি হাজার হাজার বছর আগের। ধারণা করা হয়, ভারতীয় উপমহাদেশেই আমের জন্ম, আর এখান থেকেই এটি ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাচীন সাহিত্যে আমের উল্লেখ বহুবার পাওয়া যায়। এমনকি মোগল সম্রাটরা আমের বিশেষ ভক্ত ছিলেন। আকবরের আমবাগানের কথা ইতিহাসে এখনো উজ্জ্বল। আমাদের দেশেও রাজা-বাদশাহদের আমের প্রতি আলাদা দুর্বলতা ছিল।

আমের জাত ও বৈচিত্র্য
বাংলাদেশে আমের অনেক জাত রয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলের মাটির গুণগত মান ও জলবায়ুর ভিন্নতার কারণে আমের স্বাদ ও বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হয়। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, দিনাজপুর, যশোর, সাতক্ষীরা — এসব এলাকা আম উৎপাদনে বিখ্যাত।

বাংলাদেশে বহুল পরিচিত আমের জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে:
ল্যাংড়া – সুগন্ধি ও রসালো, হালকা টক-মিষ্টি স্বাদের।
ফজলি – আকারে বড়, বেশি রসালো, বাজারে সবচেয়ে দামী জাতগুলোর একটি।
আম্রপালি – আধুনিক জাত, স্বাদে মিষ্টি এবং আঁশহীন।
হিমসাগর (ক্ষিরসাপাত) – মিষ্টি ও আঁশহীন হওয়ায় বহুল জনপ্রিয়।
গোপালভোগ – হিমসাগরের চেয়ে আগে পাকে, সুগন্ধযুক্ত।
কাছারি ভোগ, খিরসাপাত, লক্ষণভোগ, আশ্বিনা, গোলাপখাস ইত্যাদি আরও অনেক স্থানীয় জাত আছে।

পুষ্টিগুণে ভরপুর আম
আম শুধুমাত্র সুস্বাদু নয়, এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। এতে রয়েছে:
ভিটামিন এ – চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষায় সহায়ক
ভিটামিন সি – রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ভিটামিন ই – ত্বকের জন্য উপকারী
পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট – হজমে সহায়ক, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং দেহকে সতেজ রাখে
আমে থাকা প্রাকৃতিক চিনি শরীরকে তাৎক্ষণিক শক্তি দেয়, যা গ্রীষ্মের গরমে ক্লান্তি দূর করে।

আমের ব্যবহার ও রূপান্তর
আম শুধু কাঁচা বা পাকা খাওয়াই হয় না; এটি নানা রকম খাবারে ব্যবহৃত হয়:
কাঁচা আম দিয়ে তৈরি হয় আচার, টক ডাল, চাটনি, কাঁঠালের সঙ্গে মিক্সড তরকারি ইত্যাদি।
পাকা আম ব্যবহার করা হয় জুস, আইসক্রিম, মিল্কশেক, আমরস, আমসত্ত্ব, কেক বা ডেজার্টে।
আমসত্ত্ব – বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী খাবার। এটি কাঁচা ও পাকা আম মিশিয়ে তৈরি করা হয়, দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।
অনেক পরিবারে গ্রীষ্মে আমের উপস্থিতি মানেই ছুটি, মজার খাওয়া, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব
আম বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি বড় ভূমিকা রাখে। প্রতিটি মৌসুমে হাজার হাজার টন আম উৎপাদিত হয়। স্থানীয় বাজার ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশ আম রপ্তানি করছে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশে। ফলে কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের আম রপ্তানিযোগ্য হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশের আমের কদর বেড়েছে।

আম আমাদের গ্রীষ্মকালীন জীবনের একটি আবশ্যক অংশ। এটি যেমন রসনা তৃপ্ত করে, তেমনি শরীরকে পুষ্টি জোগায় এবং দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখে। ফলের রাজা হিসেবে আম আমাদের গর্ব, ঐতিহ্য এবং আনন্দের নাম। গ্রীষ্ম এলেই আমের অপেক্ষা শুরু হয়; আর প্রথম কামড়েই ফিরে আসে সেই চিরচেনা মধুর স্মৃতি।