শিশুদের স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গড়ার ৮টি উপায়

গত ৩০ বছরে রেস্টুরেন্টে খাবারের পরিমাণ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। এটি উদ্বেগজনক, কারণ ব্যস্ত পরিবারগুলো আগের চেয়ে বেশি বাইরের খাবারের ওপর নির্ভর করছে। পাশাপাশি, চিনি-মিশ্রিত পানীয়গুলোর জনপ্রিয়তা বেড়েছে, আর স্কুলগুলোতে খেলাধুলা ও শারীরিক শিক্ষার সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। কম পরিশ্রম ও অনিয়ন্ত্রিত অস্বাস্থ্যকর খাবার-পানীয়র সহজলভ্যতা অনেক শিশু ও কিশোর-কিশোরীর মধ্যে খারাপ অভ্যাস গড়ে তুলছে, যা স্থূলতার প্রধান কারণ।
শিশুদের স্থূলতা সংক্রান্ত গুরুতর ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে, চিলড্রেন’স কলোরাডো-এর প্রধান পুষ্টিবিদ ড. ন্যান্সি ক্রেবস পরামর্শ দেন যে, বাবা-মাকে শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাওয়ার ও পানীয় গ্রহণের ক্ষেত্রে আদর্শ হিসেবে ভূমিকা রাখতে হবে।
১। স্কুল ও ঘরে অভিভাবকদের সম্পৃক্ততা
শিশুর স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও মানসিক বিকাশের জন্য স্কুল ও ঘরে অভিভাবকদের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্কুলে শিশুর খাবার ও শারীরিক শিক্ষার নীতিমালা সম্পর্কে জানা এবং প্রয়োজনে ইতিবাচক পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া অভিভাবকদের দায়িত্বের অংশ। স্বাস্থ্যকর খাবার ও ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিকে উৎসাহিত করতে অভিভাবকরা স্কুলের ফান্ডরেইজিং কার্যক্রমে সচেতন ভূমিকা রাখতে পারেন।
ঘরে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে অভিভাবকদের রান্নাঘরে স্বাস্থ্যকর খাবার রাখা ও জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলা উচিত। বাজার করার সময় শিশুকে নতুন ফল ও সবজি বেছে নিতে উৎসাহিত করা যেতে পারে। প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর নাশতা ও খাবার তৈরি করা এবং শিশুকে এতে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে, শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য নিয়মিত পারিবারিক সময় কাটানো, কথোপকথন ও খেলাধুলায় সম্পৃক্ত হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকদের এসব ভূমিকা শিশুর সুস্থ ও সুশৃঙ্খল জীবনধারা গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
২। নিয়মিত রুটিন বজায় রাখা
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য নিয়মিত রুটিন বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুসরণ করলে শিশুদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও দায়িত্বশীলতার বোধ তৈরি হয়। প্রতিদিনের খাবার, ঘুম, পড়াশোনা ও খেলাধুলার নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা শিশুর সুস্বাস্থ্য ও মানসিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
বিশেষ করে, পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ও দৈনিক শারীরিক কার্যক্রমের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। নিয়মিত রুটিন শিশুকে নিরাপত্তার অনুভূতি দেয় এবং পড়াশোনা ও অন্যান্য কাজে মনোযোগ বাড়ায়। অভিভাবকদের উচিত শিশুদের রুটিন মেনে চলতে উৎসাহিত করা, যাতে তারা স্বাস্থ্যকর ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করতে পারে।
৩। বাড়িতে খাওয়ার অভ্যাস গড়া
বাইরে খাওয়া মাঝে মাঝে করা যেতে পারে, তবে নিয়মিত বাইরে খেলে শিশুরা অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আসক্ত হয়ে পরে। ড. ক্রেবস বলেন, যারা বাড়িতে খাওয়ার অভ্যাস করে, তারা ফল ও সবজি বেশি খায়।
ঘরে রান্না করা খাবার সময়সাপেক্ষ মনে হতে পারে, তবে সঠিক পরিকল্পনা ও উপকরণ থাকলে সহজেই দ্রুত ও স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করা সম্ভব।
৪। পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা
শিশুদের খাবারের পরিমাণ বড়দের চেয়ে কম হয়, তবে বয়স, লিঙ্গ ও শারীরিক কার্যকলাপের উপর অনেকটা নির্ভর করে এই পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ২ বছরের শিশুর খাবারের পরিমাণ ৭ বছর বা ১৫ বছর বয়সী শিশুর তুলনায় ভিন্ন হবে।
অস্বাস্থ্যকর খাবার সাধারণত বেশি খাওয়া হয়, কারণ এতে চিনি ও ফ্যাট থাকে, যা স্বাদ বাড়ায় কিন্তু পুষ্টিগুণ কম থাকে। এই ধরনের খাবার তৃপ্তি দেয় না এবং পরিপূর্ণতার অনুভূতি কম তৈরি করে, ফলে শিশুরা অতিরিক্ত খায়। তাই এই ধরণের খাবার না খাওয়ার জন্য শিশুদের উদসাহিত করতে হবে।
৫। সুগারযুক্ত পানীয় বাদ দেয়া
চিনি-মিশ্রিত পানীয় পান করলে গড়ে প্রতিদিন অতিরিক্ত ২০০ ক্যালরি গ্রহণ করা হয়। শুধু সফট ড্রিংক নয়, ফলের রস, এনার্জি ড্রিংক, আইস টি, লেমনেড এবং ফ্লেভারড কফির মধ্যেও প্রচুর চিনি থাকে, যা স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়। পানির স্বাদ ভালো না লাগলে, পানিকে আকর্ষণীয় করার জন্য চেষ্টা করুন।
৬। ফলের রস নয়, আসল ফল খাওয়ান
ফল ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার সরবরাহ করে, যা শিশুকে দীর্ঘ সময় তৃপ্ত রাখে। ফলের রসের পরিবর্তে আসল ফল খেলে ক্যালোরির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন ৪ আউন্সের (প্রায় আধা কাপ) বেশি ফলের রস না খাওয়ার পরামর্শ দেন। পানির বিকল্প হিসেবে ফ্লেভারড বা স্পার্কলিং ওয়াটার খাওয়ার অভ্যাস করা।
৭। বাইরে খেলাধুলা করানো
ড. ক্রেবস পরামর্শ দেন যে, বাবা-মা উচিত শিশুদের শারীরিকভাবে সক্রিয় করতে উৎসাহিত করা। সাইকেল চালানো, পরিবারের সঙ্গে হাঁটাহাঁটি করা, বা সাধারণভাবে বাইরে খেলার ব্যবস্থা করা জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ৬০ মিনিটের শারীরিক কার্যকলাপ শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৮। সুস্থ জীবনধারার জন্য একসঙ্গে কাজ করা
সুস্থ ও সচেতন অভ্যাস গড়ে তুলতে বাবা-মা, শিক্ষক এবং শিশুরা একসঙ্গে কাজ করলে ইতিবাচক ফলাফল আসবে। ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো দীর্ঘমেয়াদে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।