কাজ এবং পারিবারিক জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখার ১১টি উপায়
কাজ এবং পারিবারিক জীবনের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। এটি চলমান প্রক্রিয়া। দুটির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে পারলে জীবন হয় অনেক সহজ। আর এই দইুয়ে গোলমাল বাধিয়ে ফেললে সেই জীবন বীষময় হতে সময় নেয় না। তাই বলা যায়, কাজ এবং পারিবারিক জীবনের মধ্যে সঠিক ভারসাম্যের সঠিক কৌশল অবলম্বন করতে শেখা জানলে মানসিক সুস্থতা, সম্পর্কের দৃঢ়তা এবং কাজের সন্তুষ্টি বাড়ে। এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার ১১টি কার্যকর কৌশল আজ আপনার জন্য।
১. অপ্রয়োজনীয় কাজ সীমিত করুন
কাজ এবং পরিবার উভয় ক্ষেত্রেই সময় ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক সময় না বুঝেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ব্যক্তিগত ইমেল চেক করার মতো কাজে সময় অপচয় করি। এই ধরনের অপ্রয়োজনীয় কাজ কমিয়ে দিলে আপনার উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য বেশি সময় বের করা সম্ভব হবে।
২. "না" বলতে শিখুন
অতিরিক্ত কাজের চাপ নেওয়ার ফলে স্ট্রেস ও কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই যখনই কাজের চাপ বেশি মনে হবে, তখনই অতিরিক্ত দায়িত্ব না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নিজের সময়সূচি মূল্যায়ন করুন এবং যদি নতুন কাজ নেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে স্পষ্টভাবে তা জানিয়ে দিন। ‘না’ বলা শেখাটা যেমন কঠিন, তেমন একবার শিখে গেলে জীবন হয় সহজ।
৩. সীমারেখা নির্ধারণ করুন এবং প্রযুক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকুন
প্রযুক্তির উন্নতির কারণে আমরা অফিসের বাইরেও কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকছি, যা ব্যক্তিগত সময়ের ব্যাঘাত ঘটায়। কাজের পরেও ইমেইল চেক বা সোশাল মিডিয়া স্ক্রলিং না করে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো উচিত। একটি সুস্থ ভারসাম্যের জন্য অফিস এবং ব্যক্তিগত সময়ের মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা তৈরি করা প্রয়োজন।
৪. সময়সূচি বিবেচনা করুন
সময় ব্যবস্থাপনা কাজ এবং পারিবারিক দায়িত্ব উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। একটি পরিকল্পিত সময়সূচি আপনাকে উভয় ক্ষেত্রের জন্য যথাযথ সময় বরাদ্দ করতে সাহায্য করবে। পারিবারিক সময়ও যেন যথাযথ গুরুত্ব পায়, সেজন্য ক্যালেন্ডারে এটি সংযুক্ত করা যেতে পারে। মনে রাখবেন, সবার আগে পরিবার।
৫. আপনার প্রয়োজন সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলুন
আপনার কর্মস্থলে বস ও সহকর্মীদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি কাজের চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে, তাহলে আপনার অবস্থান জানিয়ে দিন এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করুন। অনেক প্রতিষ্ঠানই কর্মীদের সুবিধার জন্য সময়সূচির নমনীয়তা প্রদান করে থাকে।
৬. আপনার মূল মূল্যবোধ নির্ধারণ করুন
আপনার জীবনে কী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা প্রয়োজন। আপনি কী চান এবং কোন জিনিসগুলো উপভোগ করেন, তা জানলে কাজ এবং পরিবার উভয়ের জন্য বাড়তি সময় বের করা সহজ হবে।
৭. কর্মস্থলে নমনীয় কাজের সুযোগ অন্বেষণ করুন
যদি সম্ভব হয়, তাহলে কর্মস্থলে নমনীয় কাজের সময়সূচি বা দূর থেকে কাজ করার সুযোগ খুঁজুন। অফিসে কম সময় ব্যয় করে পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর উপায় বের করা গেলে কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ হবে।
৮. ব্যর্থতা মেনে নিন
সব সময় ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব নয়। কিছু সময় কাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, আবার কিছু সময় পারিবারিক দায়িত্ব বেশি গুরুত্ব পেতে পারে। এই বিষয়টি মেনে নেওয়া এবং দ্রুত পুনরায় ভারসাম্যে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যর্থদা মানেই সেখানে শেষ নয়, ওখান থেকেই নতুন শুরু।
৯. শখের চর্চা করুন
নিজেকে মানসিকভাবে সতেজ রাখতে শখের চর্চা করা দরকার। এটি বই পড়া, সাইকেল চালানো বা সঙ্গীত শোনার মতো যেকোনো কিছু হতে পারে। ব্যক্তিগত শখ চর্চা করলে মানসিক চাপ কমে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
১০. স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন
সুস্থ জীবনযাপন ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম ও নিয়মিত ব্যায়াম আপনাকে কর্মক্ষম রাখবে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। সুস্থ থাকলে কাজ ও পারিবারিক দায়িত্ব আরও ভালোভাবে পালন করা সম্ভব।
১১. স্ট্রেস কমানোর কৌশল অনুশীলন করুন
কাজের চাপ এড়ানো সম্ভব নয়, তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ধ্যান, যোগব্যায়াম, ব্যায়াম বা নিঃশ্বাসের ব্যায়াম স্ট্রেস কমাতে সহায়ক হতে পারে। মানসিক শান্তির জন্য স্ট্রেস ব্যবস্থাপনার কৌশল অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।