নিয়মিত ডিম খাবেন যে কারণে
ডিম: প্রোটিন এবং পুষ্টির শক্তিশালী উৎস
ডিম ফার্স্টক্লাস প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি খাবার, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে থাকা ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের উন্নত কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়ক। পাশাপাশি ডিমের অন্যান্য উপাদান শরীর এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
রাতে ডিম খাওয়ার উপকারিতা
রাতে ডিম খাওয়া মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক। ডিমে প্রচুর ট্রিপটোফেন থাকে, যা শরীরে "ফিল-গুড" হরমোন সেরোটোনিন উৎপাদনে সহায়তা করে। সেরোটোনিন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে। এটি শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে, ফলে রাতে ডিম খেলে ভালো ঘুম হতে পারে।
ডিম মেলাটোনিন উৎপাদনে সহায়ক, যা ঘুমের জন্য অপরিহার্য হরমোন। মেলাটোনিন শরীরের ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্নায়ু কোষের কার্যকারিতা উন্নত করে। এটি ঘুমানোর সময় শরীরকে প্রস্তুত করে, ফলে রাতে ডিম খাওয়া ঘুমের মান বৃদ্ধি করতে পারে।
হাড় এবং মস্তিষ্কের জন্য উপকারী
ডিমে থাকা পুষ্টি উপাদান হাড়কে মজবুত করে এবং মস্তিষ্কের কোষের কার্যকারিতা উন্নত করে। রাতে ডিম খাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো এটি শরীরে ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়। সকালে সূর্যের আলো পেলে এই কোলেস্টেরল থেকে শরীর ভিটামিন ডি তৈরি করতে সক্ষম হয়, যা হাড়ের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
ওজন নিয়ন্ত্রণে ডিমের ভূমিকা
ডিম ওজন কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এর দুটি প্রধান কারণ হলো:
১. ডিম পাকস্থলীর গতি বাড়িয়ে হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।
২. এতে থাকা প্রোটিন দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা রাখে, যা রাতে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়।
ডিম পেশি শক্তিশালী করতে, হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কোলেস্টেরল এবং ডিম: ভুল ধারণা
একসময় ধারণা করা হতো যে ডিম বেশি খেলে কোলেস্টেরলের সমস্যা বাড়তে পারে। তবে ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ডিম থেকে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি খুবই কম। ২০০৭ সালের তাদের পুরনো পরামর্শ অনুযায়ী সপ্তাহে তিনটির বেশি ডিম না খাওয়ার যে নির্দেশনা ছিল, সেটি তারা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
চিকিৎসকদের মতে, ডিম নিজে থেকে কোলেস্টেরল বাড়ায় না। বরং ডিম রান্নার জন্য ব্যবহৃত স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা ক্ষতিকর চর্বি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। তাই কীভাবে ডিম রান্না করছেন, সেটাই আসল বিষয়।
ডিম রান্নার স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি
ডিম রান্নার সবচেয়ে সহজ, পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি হলো:
- সিদ্ধ ডিম: এটি সম্পূর্ণ চর্বিমুক্ত এবং সহজপাচ্য।
- পানিতে পোচ করা ডিম: এটি ডিমের পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ রাখে।
ভাজা ডিম: বেশিরভাগ পুষ্টিবিদ ভাজা ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন না। কারণ, ডিম ভাজার সময় ব্যবহৃত তেল বা মাখনের স্যাচুরেটেড ফ্যাট কোলেস্টেরল বাড়ানোর অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই ভাজা ডিম এড়িয়ে চলাই ভালো।
উপসংহার
ডিম একটি সম্পূর্ণ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার, যা সঠিকভাবে খেলে শরীর ও মনের জন্য অনেক উপকারী। রাতে ডিম খাওয়া ঘুম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, হাড়ের স্বাস্থ্য এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে এটি রান্নার পদ্ধতি এবং পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। সুতরাং ডিম খাওয়ার সময় সঠিক পদ্ধতি মেনে চলুন এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করুন।