আল্লাহ যাদের ভালোবাসেন না
আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা পাওয়া প্রতিটি মুমিনের স্বপ্ন। নিজের সব কিছু বিলিয়ে দেয় মহান রবের সান্নিধ্য লাভের আশায়। কিন্তু আপনি যদি জানেন, যিনি অপনাকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি সব ক্ষমতার অধিকারী, পৃথিবীর রাজত্ব একমাত্র যার হাতে, সেই মহান সত্তা আপনাকে অপছন্দ করেন, আপনাকে ঘৃণা করেন; তাহলে আপনার কেমন লাগবে! নিশ্চয়ই খারাপ লাগবে। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ এমন রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত এমন সব কাজ করে যাচ্ছে, যেগুলো আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করেন, যে কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের ভালোবাসেন না।
আর কোনো বান্দার ব্যাপারে যদি এ কথা জানা যায় যে তাকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন না, তাহলে তার জন্য এর চেয়ে পরিতাপের কথা আর কী হতে পারে!
আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে এমন কিছু ব্যক্তির কথা আলোচনা করেছেন, যাদের তিনি ভালোবাসেন না। কোরআনে আল্লাহ তাআলা আমাদের সতর্ক করার জন্য বলে দিয়েছেন। এসব বান্দা পড়বে, আর নিজেকে তা থেকে সর্বাত্মক বিরত রাখবে।
১. আল্লাহ তাআলা সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না। যারা বিভিন্ন কাজে সীমা লঙ্ঘন করে বেড়ায়, তাদের আল্লাহ তাআলা ঘৃণা করেন। সীমা লঙ্ঘনের অনেক ধরন রয়েছে। অতিরিক্ত আওয়াজে কথা বলা কিংবা অপ্রয়োজনে উঁচু আওয়াজে দোয়া করা সীমা লঙ্ঘন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে তোমরা আল্লাহর পথে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করো, তবে সীমা লঙ্ঘন কোরো না। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : বাকারা. আয়াত : ১৯০)
২. আল্লাহ তাআলা পাপিষ্ঠ অকৃতজ্ঞ বান্দাকে ভালোবাসেন না। কৃতজ্ঞতা আদায় করা ও পাপমুক্ত জীবন যাপন করা আল্লাহ তাআলার বহুত বড় নেয়ামত। অকৃতজ্ঞ বান্দাকে আল্লাহ তাআলা কখনোই ভালোবাসেন না। পাপিষ্ঠকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-সদকাকে বর্ধিত করেন। আর আল্লাহ এমন প্রতিটি লোককে অপছন্দ করেন যে নাশোকর, পাপিষ্ঠ।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৬)
৩. আল্লাহ তাআলা জালিমকে ভালোবাসেন না। যারা অন্যের প্রতি জুলুম করে, জুলুম করাই তাদের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাদের আল্লাহ তাআলা ঘৃণা করেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে আল্লাহ তাদের পরিপূর্ণ সওয়াব দান করবেন। আল্লাহ জালিমদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ৫৭)
৪. আল্লাহ তাআলা খিয়ানতকারীকে ভালোবাসেন না। যারা আমানতের খিয়ানত করে, যারা নিয়মিত ওয়াদা রক্ষা করে না, তাদের ঘৃণা করেন তিনি। আল্লাহ বলেন, ‘এবং যারা নিজেদের সঙ্গেই খিয়ানত করে তুমি তাদের পক্ষে বাক-বিতণ্ডা কোরো না। আল্লাহ কোনো খিয়ানতকারী পাপিষ্ঠকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৭)
৫. আল্লাহ তাআলা অহংকারী দাম্ভিককে ভালোবাসেন না। নিজের সম্পদ, বংশ বা গোত্র নিয়ে বড়াই করা, অন্যকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখা—এসব অহংকারের বহিঃপ্রকাশ। এই অহংকারের কারণে সে সত্য গ্রহণ করতে পারে না। অহংকারী আল্লাহর কাছে ও মানুষের কাছে সর্বদা ঘৃণিতই থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং মানুষের সামনে (অহংকারে) নিজ গাল ফুলিয়ো না এবং ভূমিতে দর্পভরে চলো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দর্পিত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : লোকমান আয়াত : ১৮)
অন্যত্রে এসেছে, ‘এটা সুনিশ্চিত যে তারা যা গোপনে করে তা আল্লাহ জানেন এবং তারা যা প্রকাশ্যে করে তাও। নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : নাহাল, আয়াত : ২৩)
৬. যারা জমিনে বিশৃঙ্খলা ও ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে তাদের আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ তোমাকে যা কিছু দিয়েছেন তার মাধ্যমে আখিরাতের নিবাস লাভের চেষ্টা করো এবং দুনিয়া থেকেও নিজ হিস্যা অগ্রাহ্য করো না। আল্লাহ যেমন তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, তেমনি তুমিও (অন্যদের প্রতি) অনুগ্রহ করো। আর পৃথিবীতে ফ্যাসাদ বিস্তারের চেষ্টা করো না। জেনে রেখো, আল্লাহ ফ্যাসাদ বিস্তারকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭৭)
৭. যারা কাফের, অমুসলিম, এক আল্লাহতে বিশ্বাসী নয়—তাদের আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন না। আল্লাহ বলেন, ‘ফলে যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে আল্লাহ তাদের নিজ অনুগ্রহে পুরস্কৃত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ৪৫)
৮. আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না। যারা অশান্তি করে বেড়ায়, অশান্তির ইন্ধন জোগায় তাদের আল্লাহ ঘৃণা করেন। আল্লাহ বলেন, ‘সে যখন উঠে চলে যায়, তখন জমিনে তার দৌড়-ঝাঁপ হয় এই উদ্দেশ্যে যে সে তাতে অশান্তি ছড়াবে এবং ফসল ও (জীব-জন্তুর) বংশ নিপাত করবে। অথচ আল্লাহ অশান্তি সৃষ্টি পছন্দ করেন না। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২০৫)
আল্লাহ তাআলা তাঁর মহান কৃপায় আমাদের এসব থেকে হিফাজত করুন। আমিন
মুসলিম বাংলা