মঙ্গলবার ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, অগ্রাহায়ণ ১৯ ১৪৩১, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ব্রেকিং

জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে সংলাপে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান তারেক রহমানের ভারতীয় দূতাবাস ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান অভিন্ন আকাঙ্ক্ষায় কাজ করে যেতে চাই: প্রণয় ভার্মা আগরতলা মিশনে কনস্যুলার সেবা বন্ধ এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৫০০ ছাড়াল টঙ্গীতে শেষ হলো ৫ দিনের জোড় ইজতেমা সেবা খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত পাসপোর্ট খাত: টিআইবি পুলিশকে ‘রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত’ দেখতে চায় ৮৮.৭% মানুষ চিন্ময় কৃষ্ণের পক্ষে ছিলেন না আইনজীবী, পেছাল জামিন শুনানি হিন্দুত্ববাদী ভারত সংখ্যালঘু নির্যাতনের আঁতুড়ঘর: রিজভী সীমান্তে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে বিজিবি প্রস্তুত ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধে হাইকোর্টে রিট

ইসলাম

রাসূল (সা.) ও হযরত আবু বকর (রা.) এর মধুময় সম্পর্ক

 প্রকাশিত: ১১:১০, ১৫ জুলাই ২০২১

রাসূল (সা.) ও হযরত আবু বকর (রা.) এর মধুময় সম্পর্ক

রাসূল (সা.) এর প্রিয়তম বন্ধু হযরত আবু বকর (রা.)। রাসূল (সা.) সর্বদাই বলতেন, যাদের কাছেই তিনি ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন, তারা সকলেই ইসলাম গ্রহনের পূর্বে খানিক চিন্তা-ভাবনা করেছেন। একমাত্র হযরত আবু বকর (রা.) এর কাছে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার সাথে সাথে কোন বিলম্ব না করে তিনি তা গ্রহণ করেছেন।

হযরত আবু বকর (রা.) ছাড়া অন্য সকলই ইসলাম গ্রহনের পূর্বে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ ছিলেন। কিন্তু রাসূল (সা.) হযরত আবু বকর (রা.) এর কাছে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার সাথে সাথে তাৎক্ষনিকভাবে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন।

ইসলাম গ্রহনের পূর্বেও হযরত আবু বকর (রা.) সৎ ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রাসূল (সা.) এর নবুওয়্যাতের পূর্বে তারা দুইজনই উত্তম বন্ধুত্বের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন।

হযরত আবু বকর (রা.) ছিলেন একজন ধনী ব্যবসায়ী এবং ইসলাম গ্রহনের পূর্বেও তিনি তার সম্পদকে অন্যের উপকারের জন্য ব্যয় করতেন।

রাসূল (সা.) এর নবুওয়্যাতের আগে থেকে আরবের এক জঘন্য প্রথা ছিল কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া। আরবে তৎকালীন সময়ে কন্যা সন্তানের জন্মকে অপমানের চিহ্ন হিসেবে মনে করা হত। জাহেলী আরবের সেই মূর্খ মানুষগুলো মনে করতো একমাত্র পূত্র সন্তানই তাদের জন্য, তাদের পরিবার ও গোত্রের জন্য সম্মান বয়ে নিয়ে আসতে পারে। অন্যদিকে কন্যারা তাদের জন্য, তাদের পরিবার ও গোত্রের অসম্মানের কারন হতে পারে। তাই কন্যা সন্তান জন্মের সাথে সাথে জীবন্ত শিশুটিকে কবর দিয়ে দেওয়া হত। 

সেই অন্ধকার যুগে হযরত আবু বকর (রা.) যখনই এমন কোন ঘটনার কথা শুনতেন, তখনই তিনি সন্তানটির পিতা-মাতার কাছে গিয়ে সন্তানটিকে নিয়ে আসতেন এবং তাকে লালন-পালনের ভার নিতেন।

সহজাত বৈশিষ্ট্যে শক্তিশালী
মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রত্যেক মানুষই এমন এক সহজাত বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে যার ফলে, সে ভালো-মন্দ পার্থক্য করতে পারে এবং তার স্রষ্টা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। কারো এই বৈশিষ্ট্য খুব শক্তিশালী হয় আবার কারো কারো এটি খুবই দুর্বল হয়।

হযরত আবু বকর (রা.) তার এই সহজাত মানবীয় বৈশিষ্ট্যে ছিলেন শক্তিশালী। তার শক্তিতেই তিনি ইসলামের আগমনের পূর্বে সকল প্রকার প্রতিমা পূজা থেকে দূরে ছিলেন এবং এর বলেই তিনি বুঝতে পারেন, জীবন্ত কন্যা শিশুকে কবর দেওয়া নিশ্চিতভাবে জঘন্যতম আচরন।

উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি অপর উত্তম চরিত্রবান ব্যক্তিকে আকর্ষণ করে। ফলে নবুওয়্যাতের পূর্ব থেকেই রাসূল (সা.) এর সাথে হযরত আবু বকর (রা.) এর গভীর বন্ধুত্ব ছিল। রাসূল (সা.) এর চরিত্রগত শক্তির কারনেই হযরত আবু বকর (রা.) তার কথায় বিশ্বাস করতে দ্বিধা করেননি এবং শেষ পর্যন্ত তাকে অনুসরন করেন।

আস-সিদ্দিক উপাধী লাভ
হিজরতের এক বছর পূর্বে রাসূল (সা.) আল্লাহ ইসরা ও মিরাজের যাত্রার মাধ্যমে তার সান্নিধ্যে নিয়ে তার সাথে সাক্ষাতের সম্মান দান করেন। এক রাতের মধ্যে মক্কা থেকে জেরুসালেম যাত্রা ও সেখানে থেকে উর্দ্ধারোহন এবং সেই রাতেই আবার ফিরে আসার বিষয়টি মক্কাবাসীদের মধ্যে অনেকের মাঝেই বিস্ময় ও অবিশ্বাসের সৃষ্টি করেছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, 

“নক্ষত্রের কসম, যখন অস্তমিত হয়। তোমাদের সংগী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি। এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কোরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়। তাঁকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা, সহজাত শক্তিসম্পন্ন, সে নিজ আকৃতিতে প্রকাশ পেল। উর্ধ্ব দিগন্তে, অতপর নিকটবর্তী হল ও ঝুলে গেল। তখন দুই ধনুকের ব্যবধান ছিল অথবা আরও কম। তখন আল্লাহ তাঁর দাসের প্রতি যা প্রত্যাদেশ করবার, তা প্রত্যাদেশ করলেন। রসূলের অন্তর মিথ্যা বলেনি যা সে দেখেছে। তোমরা কি বিষয়ে বিতর্ক করবে যা সে দেখেছে? নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল, সিদরাতুল মুনতাহার নিকটে, যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত। যখন বৃক্ষটি দ্বারা আচ্ছন্ন হওয়ার, তদ্দ্বারা আচ্ছন্ন ছিল। তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয় নি এবং সীমালংঘনও করেনি। নিশ্চয় সে তার পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছে।” (সূরা নাজম, আয়াত: ১-১৮)

মূলত এই বিষয়টি ছিল মুসলমানদের জন্য কঠিন পরীক্ষার শামিল। কেননা, মানবীয় বুদ্ধিমত্তার দৃষ্টিতে এটি ছিল সম্পূর্ণ অসম্ভব একটি কাজ।

কিন্তু দৃঢ় বিশ্বাসী মুসলিম এতে কোন প্রকার বৈপরিত্য দেখবেন না বরং তারা একে আল্লাহর প্রদান করা একটি মুজেজা হিসেবে দেখবেন। 

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে রাসূল (সা.) এর বিরোধীরা তাকে নিয়ে চরম ঠাট্টা-মশকরা করা শুরু করলো। তাদের এক দল গিয়ে হযরত আবু বকর (রা.) কাছে গেল তার প্রতিক্রিয়া দেখতে।

হযরত আবু বকর (রা.) প্রথমেই জানতে চাইলেন, মিরাজের এই কাহিনী রাসূল (সা.) নিজ মুখে বলেছেন কিনা। তাকে যখন বলা হল, রাসূল (সা.) নিজ মুখেই এই কথা বলেছেন, তখন কোন প্রকার দ্বিধা ছাড়াই হযরত আবু বকর (রা.) এর সত্যতা সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান করেন। হযরত আবু বকর (রা.) এর এরূপ দৃঢ় সাক্ষ্যের কারনে রাসূল (সা.) তাকে ‘আস-সিদ্দিক’ উপাধি দান করেন, যার অর্থ সত্যের সাক্ষ্যদানকারী।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল