রোববার ১৬ মার্চ ২০২৫, চৈত্র ২ ১৪৩১, ১৬ রমজান ১৪৪৬

ব্রেকিং

ভবিষ্যতে কোনো বাবা-মায়ের বুক যেন এভাবে আর খালি না হয়: আবরার ফাহাদের বাবা আবরার হত্যা: ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৫ জনের যাবজ্জীবন হাই কোর্টে বহাল মাগুরায় শিশু হত্যার প্রধান আসামির ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন চট্টগ্রামে ভিক্ষুককে ‘ধর্ষণের’ অভিযোগে অটোরিকশা চালক গ্রেপ্তার রাঙামাটিতে ইউপিডিএফের কালেক্টরকে গুলি করে হত্যা জাতিসংঘ মহাসচিবের ঢাকা ত্যাগ ফরিদপুরে তিন বাহনের সংঘর্ষে নিহত ২ খুলনায় একাধিক হত্যা মামলার আসামি গুলিতে নিহত জামালপুরে মাদ্রাসার ২ ছাত্রকে ধর্ষণের অভিযোগ, আটক শিক্ষক নিরাপদে বাড়ি ফিরতে চার শিক্ষার্থীর ‘গ্যাংআপ’ চট্টগ্রামে পুলিশকে গুলি করে পালানো ‘ছোট সাজ্জাদ’ ঢাকায় গ্রেপ্তার দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপির কর্মী নিহত গণমাধ্যমকর্মী ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ ট্রাম্পের ইয়েমেনে হুতিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা মাকে নিয়ে আর গ্রামে ফেরা হলো না শহীদ জামাল উদ্দিনের

ইসলাম

রমজানে যে ১০টি কাজ বেশি বেশি করা উচিত

 আপডেট: ০৭:৫৪, ১৬ মার্চ ২০২৫

রমজানে যে ১০টি কাজ বেশি বেশি করা উচিত

রমজান

রমজান হল আত্মশুদ্ধির মাস, যেখানে আমাদের উচিত বেশি বেশি ইবাদত করা, খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমল বাড়ানো। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান, তাই সময় নষ্ট না করে আমাদের উচিত বেশি বেশি নেক আমল করা। নিচে বিস্তারিতভাবে রমজানের করণীয় গুরুত্বপূর্ণ ১০টি কাজ ব্যাখ্যা করা হলো—

১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত আদায় করা 
নামাজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ এবং এটি আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় ইবাদত। রমজান মাসে নামাজের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। এই মাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করা অত্যন্ত জরুরি এবং সম্ভব হলে মসজিদে গিয়ে জামাতে পড়া উত্তম। রমজানের বিশেষ আমল তারাবিহ নামাজ, যা অনেক সওয়াবের কারণ হয়। এছাড়া তাহাজ্জুদ নামাজ বেশি বেশি পড়া উচিত, বিশেষ করে রমজানের শেষ অংশে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধি করতে সচেতন থাকা উচিত এবং খুশু-খুজুর (আত্মনিবেদন) সঙ্গে নামাজ আদায় করার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার।

২. কুরআন তিলাওয়াত বৃদ্ধি করা 
রমজান হল কুরআন নাজিলের মাস, তাই এই মাসে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত। প্রতিদিন অন্তত কিছু অংশ তিলাওয়াত করা এবং কুরআনের অর্থসহ বোঝার চেষ্টা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভব হলে পুরো রমজান মাসে একবার কুরআন খতম করা খুবই সওয়াবের কাজ। কেবল তিলাওয়াত করলেই চলবে না, বরং কুরআনের অর্থ ও তাফসির পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। কুরআনের আয়াত অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার চেষ্টা করতে হবে, যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় এবং এই মাসের বিশেষ বরকত লাভ করা যায়।

৩. দোয়া ও জিকির বেশি বেশি করা 
রমজানে দোয়া কবুলের বিশেষ সময় রয়েছে, তাই এই মাসে আমাদের উচিত বেশি বেশি দোয়া করা। বিশেষ করে ইফতারের সময় দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। রমজান গুনাহ মোচনের মাস হওয়ায় নিয়মিতভাবে আস্তাগফিরুল্লাহ (ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া) বলা উচিত। আল্লাহর প্রশংসা এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জিকির করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেমন— সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ, আল্লাহু আকবার, এবং দরুদ শরীফ পাঠ করা উচিত। এই সব আমল আমাদের আত্মশুদ্ধির পথে সাহায্য করবে এবং আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভে সহায়ক হবে।

৪. গুনাহ থেকে দূরে থাকা 
রমজানের অন্যতম উদ্দেশ্য হল নিজেকে খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখা এবং সংযম অনুশীলন করা। এই মাসে মিথ্যা বলা, গীবত (পরনিন্দা), চোগলখোরি ও প্রতারণা থেকে বিরত থাকা উচিত। রাগ সংযত করা এবং ধৈর্য ধরে কথা বলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া টিভি, মোবাইল ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীল কন্টেন্ট দেখা থেকেও বিরত থাকতে হবে। আমাদের চোখ, কান এবং মুখকে সকল প্রকার গুনাহ থেকে রক্ষা করতে হবে, যাতে আমাদের প্রতিটি কাজ ও কথা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে এবং রমজানের প্রকৃত উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়।

৫. দান-সদকা ও জাকাত প্রদান করা 
রমজানে দান-সদকা ও গরিবদের সাহায্য করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রাসুল (সা.) বলেছেন, রমজানে দান করা অন্য মাসের তুলনায় ৭০ গুণ বেশি সওয়াবের কাজ। গরিব ও অসহায় মানুষদের সাহায্য করা, ইফতার করানো, পোশাক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দান করা উচিত। রমজানে আমাদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো, যাদের ত্রাণের প্রয়োজন। যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তারা এই মাসে জাকাত আদায় করলে আরও বেশি সওয়াব পাবেন। এই কাজগুলো আমাদের সমাজের মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও আল্লাহর কাছে সওয়াব লাভের মাধ্যম হবে।

৬. ইফতার ও সেহরি সুন্নত অনুযায়ী করা 
ইফতার ও সেহরি করা রাসুল (সা.)-এর সুন্নত, তাই আমাদের উচিত এই বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া। ইফতার সময়মতো করা উচিত, কারণ দেরি না করে দ্রুত ইফতার করা সুন্নত। রাসুল (সা.) খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করতেন, তাই আমাদেরও এই সুন্নত অনুসরণ করা উচিত। সেহরি খাওয়া সুন্নত, তাই এটি না খেয়ে রোজা রাখা উচিত নয়। সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের দিনের কাজ করার শক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, হালাল ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত, যাতে শরীর সুস্থ থাকে এবং রোজা রাখার সময় উপকার পাওয়া যায়।

৭. লাইলাতুল কদরের ইবাদত করা 
রমজানের শেষ দশ রাত বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মধ্যে রয়েছে লাইলাতুল কদর, যা হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এই রাতগুলো বিশেষ ইবাদতে কাটানো উচিত। বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া, কুরআন তিলাওয়াত করা, জিকির করা ও দোয়া করা উচিত। এই রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ রহমত লাভের সুযোগ দেয়।

৮. ধৈর্য ও আত্মসংযম অনুশীলন করা 
রমজান আমাদের ধৈর্য ও আত্মসংযম শেখায়, তাই আমাদের উচিত অহংকার, রাগ, হিংসা ও বিদ্বেষ দূর করা। এই মাসে খাবার, কথা ও আচরণে সংযমী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রমজান আমাদের বিনয়ী আচরণ করার শিক্ষা দেয় এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে encourages করে। এই মাসে, আমরা যেন অন্যকে ক্ষমা করে দিতে পারি এবং নিজেদের চরিত্রের উন্নতি করতে পারি, যাতে আমাদের জীবন আরও শান্তিপূর্ণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকারী হয়।

৯. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা 
নিজের পরিবার ও আশেপাশের মানুষকে ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করা উচিত। রমজান মাসে আমাদের দায়িত্ব হল, আমরা যেন পরিবার এবং সমাজের প্রতি ভালো কাজের উদ্বুদ্ধকরণ করি। এছাড়া, খারাপ কাজ থেকে মানুষকে সাবধান করা ও ইসলামের সঠিক জ্ঞান প্রচার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, নৈতিকতা এবং সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দিতে, আমরা যেন অন্যদের জানাতে পারি এবং তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করি।

১০. আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা 
এই মাসে আমাদের উচিত আমাদের ভুলগুলোর জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হওয়া এবং নতুনভাবে জীবন শুরু করার সংকল্প করা। রমজান হল তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার মাস, তাই গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তাওবা ও ইস্তিগফার করা উচিত। এই মাসের শিক্ষাগুলি আমাদের সারা বছর ধরে পালন করার চেষ্টা করা উচিত, যাতে আমাদের জীবন আরো সঠিক পথে পরিচালিত হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আত্মশুদ্ধির জন্য রমজান আমাদের একটি সোনালি সুযোগ এনে দেয়, যা আমাদের পাথের পথে চলতে সহায়ক হবে।

রমজান আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বড় নেয়ামত। এটি এমন একটি সময়, যখন আমাদের আমল ও দোয়া কবুল হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান, তাই আমাদের উচিত সময় নষ্ট না করে বেশি বেশি ইবাদত করা, ভালো কাজ করা এবং খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকা। যদি আমরা সঠিকভাবে রমজানের প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারি, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভ করতে পারব।