শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫, চৈত্র ১ ১৪৩১, ১৫ রমজান ১৪৪৬

ব্রেকিং

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নীতি: ১০% খেলাপি ঋণ থাকলে লভ্যাংশ নিষিদ্ধ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা ও গণহত্যার কৌশল প্রয়োগ করছে ইসরায়েল: জাতিসংঘ প্রতিবেদন মার্কিন ইহুদিদের বিক্ষোভ: ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের মুক্তির দাবি প্রশাসনের ঢিলেমিতে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে—রিজভী পরমাণু ইস্যুতে বেইজিংয়ে চীন, ইরান ও রাশিয়ার বৈঠক শুরু এলজিইডি প্রকৌশলীর গাড়ি থেকে নগদ ৩৭ লাখ টাকা জব্দ সংস্কার: ৩০ দলই ঐক্যমত্য কমিশনে মতামত দেয়নি তথ্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন: ১৫ জুলাই হামলা ছিল পরিকল্পিত, ঢাবির ১২২ জন শনাক্ত ২৮ মার্চ শি’র সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ইউনূস: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি আদায়ের নামে রাস্তা অবরোধ করলে কঠোর ব্যবস্থা: আইজিপি বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে ঢাকা অযৌক্তিক বলল ৩ মাসে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব বেড়েছে প্রায় ৫ হাজার চিকিৎসক নিয়োগে আসছে বিশেষ বিসিএস বাংলাদেশ ব্যাংক তিনটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে ফল আমদানিতে উৎসে কর কমল

ইসলাম

মাহে রমযান কেন্দ্রিক প্রচলিত কিছু বিদআত ও রুসম

মুফতী সিরাজুল ইসলাম

 আপডেট: ০৩:৩১, ১৫ মার্চ ২০২৫

মাহে রমযান কেন্দ্রিক প্রচলিত কিছু বিদআত ও রুসম

আরবীতে রোজার নিয়ত জরুরী মনে করা

ইসলামে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রত্যেক ইবাদতের আগে নিয়তের গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। কোনো কোনো ইবাদতে নিয়ত করা ফরজ। কোনো কোনো ইবাদতে নিয়ত করা মুস্তাহাব। নিয়তের কারণে অনেক দুনিয়াবী কাজও নেকির কাজে পরিণত হয়। আবার নিয়তের কারণেই কখনও খাঁটি ইবাদতও নিরর্থক হয়ে যায়। তাই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إنما الأعمال بالنيات وإنما لكل امرئ ما نوى

অর্থ: সমস্ত কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষ যা নিয়ত করে, পরিণামে সে তাই লাভ করে। —সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১ 

সিয়াম বা রোজা ইসলামের পঞ্চবুনিয়াদের অন্যতম একটি। এটি সহীহ হওয়ার জন্যে নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত ছাড়া রোজা এবাদত বলে গণ্য হয় না। 

অর্থাৎ কেউ যদি সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও সহবাস থেকে বিরত থাকে, এদিকে তার রোজার নিয়তও না থাকে, তাহলে দৃশ্যত তাকে রোজাদার মনে হলেও শরীয়ত একে রোজা বলবে না। এই জন্যে রোজার শর্ত হচ্ছে নিয়ত৷ 

নিয়ত কী?

নিয়ত হলো, অন্তরের কাজ। মনে মনে কোনো কাজের দৃঢ়সংকল্প করা। ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

النية عزم القلب على فعل

অর্থ: কোন কাজের ব্যাপারে অন্তরে দৃঢ়সংকল্প করাকে নিয়ত বলে। ( মাজমূ, ১/৩১০)

তাই রোজা রাখার ব্যাপারে মনে মনে নিয়ত করবে—আমি আজ রমজানের ফরজ রোজা রাখছি। এতটুকু সংকল্প করলেই নিয়ত আদায় হয়ে যাবে। 

আল্লামা শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

اﻟﻨﻴﺔ ﺷﺮﻁ ﻓﻲ اﻟﺼﻮﻡ ﻭﻫﻲ ﺃﻥ ﻳﻌﻠﻢ ﺑﻘﻠﺒﻪ ﺃﻧﻪ ﻳﺼﻮﻡ ﻭﻻ ﻳﺨﻠﻮ ﻣﺴﻠﻢ ﻋﻦ ﻫﺬا ﻓﻲ ﻟﻴﺎﻟﻲ ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ، ﻭﻟﻴﺴﺖ اﻟﻨﻴﺔ ﺑﺎﻟﻠﺴﺎﻥ ﺷﺮطا

অর্থ: নিয়ত করা রোজার শর্ত। আর নিয়ত হলো, মনে মনে চিন্তা করবে যে, সে রোজা রাখছে। বলাবাহুল্য, রমজানের রাতে কোনও মুসলমানের অন্তরই এই নিয়ত থেকে খালি থাকে না। তবে মুখে নিয়ত করা শর্ত নয়। (রদ্দুল মুহতার, ২/৩৭৭) 

এখানে পরিষ্কার বলা হলো, মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা লাগবে না। 

অতএব বোঝা গেল, মুখে উচ্চারণ করে আরবীতে নিয়ত করা জরুরী মনে করলে তা বিদ‌আত বলে গণ্য হবে। 

কিন্তু আমাদের সমাজে কিছু বই প্রচলিত আছে, যেগুলোতে প্রতিটি ইবাদতের জন্যে আলাদা আলাদা আরবি নিয়ত লিখে দেওয়া থাকে। এভাবে আরবীতে রোজার নিয়ত করা মোটেও জরুরী নয়। তা ছাড়া এসব আরবী নিয়ত কুরআন ও সুন্নাহর কোনও দলিল দ্বারা প্রমাণিত নয়। 

হ্যাঁ, কেউ যদি আরবী ভাষায় রোজার নিয়ত করে, তাহলে তা জায়েজ আছে। কিন্তু আরবী উচ্চারণে ভুল করলে অনেক সময় অর্থই পাল্টে যায়, ফলে অধিক সহীহ করতে গিয়ে মারাত্মক ভুলের শিকার হওয়াও বিচিত্র কিছু নয়। 

তাই উলামায়ে কেরাম এই ধরনের আরবী নিয়ত করা থেকে বিরত থাকাকে জরুরি মনে করেন। 

সাহরীর সময় অতিরিক্ত মাইক বাজানো

রোজার নিয়তে সাহরী খাওয়া সুন্নত। এ খাবারে বরকত রয়েছে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

تسحروا فإن في السحور بركة.

অর্থ: তোমরা সাহরী খাও, কেননা সাহরীতে রয়েছে বরকত। —বুখারী, ১৮০১

তাই সাহরীর জন্য মানুষকে জাগিয়ে দেওয়া স‌ওয়াবের কাজ। শরীয়ত একে সুন্নত পালনে পরস্পরে সহযোগিতা বলে বিবেচনা করে। 

কিন্তু এ-ও কারও অজানা নয় যে, সুন্নত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কবিরা গুনাহে লিপ্ত হওয়া বোকামি ছাড়া কিছু নয়। 

আমাদের সমাজে সাহরীর সময় গজল বাজানো হয়, দীর্ঘ সময় ডাকাডাকি হয়। এতে করে শিশু ও বয়োবৃদ্ধ মানুষ—যারা রোজা রাখতে পারে না—তাদের ঘুমে ব্যাঘাত হয়। এ সময় বহু রোজাদার মানুষ তাহাজ্জুদ ও যিকিরে মশগুল থাকেন। লাগাতার মাইকের আওয়াজে তাঁদের নামাজ, দোয়ায় বিঘ্ন হওয়া খুবই স্বাভাবিক। 

হাদীসে পাকে এসেছে,

المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده.

প্রকৃত মুসলমান সে-ই, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।

অর্থাৎ অকারণে কাউকে কষ্ট দেওয়া আমাদের জন্যে হারাম। 

কাজেই একটি সুন্নত আমলে সহযোগিতার জন্যে মানুষের ইবাদতে বিঘ্ন ঘটানো, শারীরিক ও মানসিক কষ্ট দেয়া কিভাবে বৈধতা পেতে পারে! 

অনেক সময় মানুষকে জাগানোর জন্য তেলাওয়াত করা হয়। এটি আরো মারাত্মক কাজ। ঘুম থেকে জাগানোর জন্য কোরআনের মত মহান কিতাবের ব্যবহার অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এ সময় মানুষ মনোযোগ দিয়ে কোরআন শুনতে পারে না। 

অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, 

وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا لعلكم ترحمون

অর্থ: যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগের সঙ্গে তা শোনো আর নিশ্চুপ হয়ে থাকবে, যাতে তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়। - সূরা আল আরাফ, ২০৪ 

উল্লিখিত নানাবিধ সমস্যার ফলে মাইকে সাহরির জন্যে লাগামহীনভাবে মানুষকে ডাকা একটা গলত রসম। এ থেকে আমাদের ফিরে আসা উচিত।

হ্যাঁ, সাহরীর কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য একবার ঘোষণা দেওয়া উচিত। আর সাহরীর সময় জানানোর জন্য আরেকবার এলান করা যেতে পারে। এর চেয়ে বেশি মাইক বাজানো ঠিক নয়। এই কাজ থেকে বিরত থাকা অবশ্য কর্তব্য।

দারুল উলুম দেওবন্দের ফাতাওয়া বিভাগে সাহরীর সময় মাইকে ঘোষণা দেয়ার কথা জিজ্ঞেস করা হলে তাঁরা জবাবে লেখেন,

لوگوں کو جگانے کی خاطر لاؤڈ اسپیکر پر قوالی یا تقریر وغیرہ کی کیسٹ چلانا حرام ہے، اس پر نکیر کرنا بلکہ بند کرنا ضروری اور واجب ہے، البتہ اگر ماہ مبارک میں سحری کا وقت ختم ہونے سے مثلا ایک گھنٹہ قبل صرف ایک مرتبہ وقت بتلاکر اور اسی طرح سحری سے دس منٹ قبل وقت بتلا کر صرف اعلان کر دیا جائے تاکہ سحری کھانے والے تیار کرنے والوں کو سہولت ہو جائے، اگر اتنے سے اعلان سے بھی نمازیوں یا غیر مکلف لوگوں کو تکلیف ہو تو اس کو بھی نہ کیا جائے، دس دس منٹ کا وقفہ سے وقت بتانا بھی جائز نہیں

অর্থ: মানুষকে জাগানোর জন্য মাইকে গজল, বয়ান  ইত্যাদির ক্যাসেট চালানো হারাম। এ কাজ থেকে নিষেধ করা; বরং এসব বন্ধ করা আবশ্যক ও ওয়াজিব। তবে যদি মোবারক মাসে সাহরীর সময় শেষ হওয়ার এক ঘন্টা পূর্বে শুধু একবার সময় জানিয়ে দেওয়া হয়, ঠিক এমনিভাবে সাহরীর দশ মিনিট পূর্বে  শুধু সময়ের বিষয়ে যদি এলান করে দেওয়া হয়, তবে এতটুকু ঘোষণার অবকাশ আছে। যদি এতটুকু ঘোষণা দ্বারা নামাজী অথবা বৃদ্ধদের কষ্ট হয়, তাহলে তা-ও করা যাবে না। দশ মিনিট পর পর সময় ঘোষণা করতে থাকা জায়েজ নেই। (প্রশ্ন নং- ৪২০৬৮) 


তারাবীর চার রাকাত পর পর বিশেষ দোয়া পাঠ করাকে জরুরি মনে করা

তারাবীর নামাজ বিশ রাকাত। দুই রাকাত করে পড়তে হয়। আর চার রাকাত পরপর বিশ্রামের জন্য একটু অপেক্ষা করা মুস্তাহাব। এ সময় যে কোনো ইবাদত করা যায়। যিকির, তেলাওয়াত, নামাজ, দুরুদ পাঠসহ সব মামুলাত আদায়ের অবকাশ আছে। 

বুযুর্গানে দ্বীন এ সময় বিভিন্ন আমল করতেন। হযরত রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী রহমাতুল্লাহি আলাইহি سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله اكبر পড়তে থাকতেন। হযরত আশরাফ আলী থানভী রহমতুল্লাহি আলাইহি ২৫ বার দুরুদ শরীফ পড়তেন। হযরত কাহাস্তানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এই দোয়া তিনবার পড়ার কথা বলতেন,

سبحان ذي الملك والملكوت سبحان ذي العزة والعظمة والقدرة والكبرياء والجبروت سبحان الملك الحي الذي لا يموت سبوح قدوس رب الملائكه والروح لا اله الا الله نستغفر الله نسالك الجنه ونعوذ بك من النار

এসব আমল করার ব্যাপারে আমরা স্বাধীন। যার যা পছন্দ হয়, তা করতে পারে। হাদীস শরীফে এ সময় কোনো নির্দিষ্ট আমলের কথা বলা হয়নি। তাই কাহাস্তানী রহমতুল্লাহি আলাইহির থেকে বর্ণিত এই লম্বা দোয়াকে এ সময় পড়তে বাধ্য করা যাবে না। এ সময় এই দোয়া পড়া সুন্নত মনে করা যাবে না। কেউ এই দোয়া পড়তে চাইলে পাঠ করার অবকাশ আছে। কিন্তু ইমাম ও মুসল্লী একসঙ্গে জোরে জোরে পড়া সঠিক নয়। এই প্রথা পরিহার করা উচিত। 

ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়ায় মুফতী মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী রহ. বলেন,

ہر چار رکعت تراویح کے بعد استراحت مستحب ہے اور اس وقت تسبیح و تہلیل درود پڑھیں چاہے دعا کرے چاہے نوافل پڑھے لیکن دعا کا التزام کرنا اور مجموعی حیثیت سے دعا پر اصرار کرنا تارک پر ملامت کیا جانا منع ہے کیوں کہ شریعت میں اس کا ثبوت نہیں

অর্থ: তারাবীর প্রত্যেক চার রাকাতের পর বিশ্রাম করা মুস্তাহাব। এই সময়ে তাসবীহ, তাহলীল, দুরুদ পড়বে। তেমনিভাবে দোয়াও করা যাবে, নফলও পড়া যাবে। কিন্তু দোয়ার জন্য বাধ্য করা এবং সকলে একসাথে দোয়ার উপর পীড়াপীড়ি করা আর তা না করলে তিরস্কার করা উচিত নয়। কেননা শরীয়তে এর কোনও প্রমাণ নেই। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া, ৭/৩৪৭) 


রোজার ফিদয়া কখন দিবে?

ইসলাম অপূর্ব সুন্দর ধর্ম। আমাদের সাধ্যের বাইরে কোনও বিধান ইসলাম চাপিয়ে দেয় না। সর্বক্ষেত্রে মানুষের সহজতার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা হয়। 

রোজার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। যদি কোনও ব্যক্তি অসুস্থ হয়, তাহলে তার জন্য রোজা ভাঙ্গার অবকাশ আছে। সুস্থ হওয়ার পর তা কাজা করে নিবে। 

আল্লাহ তা'আলা বলেন,

فمن كان منكم مريضا أو على سفر فعدة من أيام أخر

অর্থ: তোমাদের মধ্যে যে, অসুস্থ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার জন্যে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। -সূরা বাকারা, ১৮৪

এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয়, কেউ অসুস্থ হলে রোজা ভেঙ্গে পরবর্তী সময়ে তার কাজা আদায় করার সুযোগ আছে। 

তবে কেউ যদি এত বেশি বার্ধক্যে উপনীত হন যে, তার কখনো সুস্থ হওয়ার আশাও করা যায় না, আর দুর্বলতার কারণে সে রোজা রাখতেও সক্ষম নয়, তাহলে তার জন্য একেকটি রোজার বদলে সাদকায়ে ফিতর পরিমাণ ফিদয়া আদায় করতে হবে। এই সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,

وعلى الذين يطيقونه فدية طعام مسكين

অর্থ: আর রোজা যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করবে। -সূরা বাকারা, ১৮৪ 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,

هو الشيخ الكبير والمرأة الكبيرة لا يستطيعان أن يصوما، فليطعمان مكان كل يوم مسكينا.

অর্থ: এর হুকুম সেই অতিবৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যারা রোযা পালনে সামর্থ্য রাখে না, তখন প্রত্যেক দিনের রোযার পরিবর্তে একজন মিসকিনকে পেট ভরে আহার করাবে। -সহীহ বুখারী শরীফ, হাদিস নং ৪১৫৩ 

কিন্তু আমাদের মাঝে একটি ভুল কথা প্রচলিত আছে, রমজান মাসে অসুস্থ হলেই টাকা দিতে হবে। টাকা দান করলেই রোজার দায়িত্ব পূরণ হয়ে যাবে। এটি ভুল মাস‌আলা যা উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট। 

সঠিক মাস‌আলা হলো, কেউ যদি নিজেকে অতি বৃদ্ধ মনে করে ফিদিয়া আদায় করে দেয়, এরপর আল্লাহর রহমতে রোজা রাখার শক্তি ফিরে পায়, তাহলে আস্তে আস্তে ছুটে যাওয়া রোজা কাজা করতে হবে। আগে যা ফিদয়া আদায় করেছে, তাতে রোজার দায় থেকে মুক্ত হবে না। আল্লামা কাসানী রহ. তাঁর অনবদ্য গ্রন্থ বাদায়েউস সানায়েয়ে উল্লেখ করেন, 

ﻭﺃﻣﺎ ﻭﺟﻮﺏ اﻟﻔﺪاء: ﻓﺸﺮﻃﻪ اﻟﻌﺠﺰ ﻋﻦ اﻟﻘﻀﺎء ﻋﺠﺰا ﻻ ﺗﺮﺟﻰ ﻣﻌﻪ اﻟﻘﺪﺭﺓ ﻓﻲ ﺟﻤﻴﻊ ﻋﻤﺮﻩ ﻓﻼ ﻳﺠﺐ ﺇﻻ ﻋﻠﻰ اﻟﺸﻴﺦ اﻟﻔﺎﻧﻲ، ﻭﻻ ﻓﺪاء ﻋﻠﻰ اﻟﻤﺮﻳﺾ ﻭاﻟﻤﺴﺎﻓﺮ۔۔۔۔۔۔۔

ﻭﻟﻬﺬا ﻗﻠﻨﺎ: ﺇﻥ اﻟﺸﻴﺦ اﻟﻔﺎﻧﻲ ﺇﺫا ﻓﺪﻯ ﺛﻢ ﻗﺪﺭ ﻋﻠﻰ اﻟﺼﻮﻡ ﺑﻄﻞ اﻟﻔﺪاء.

অর্থ: ফিদয়া ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত হলো, রোজা আদায় করতে এতটা অক্ষম হওয়া যে, জীবনে আর কখনো রোজা আদায়ের সক্ষম হওয়ার ব্যাপারে আশাই হারিয়ে যায়। তাই শুধুমাত্র অতি বৃদ্ধদের জন্যই ফিদয়া দেওয়ার অবকাশ আছে। অসুস্থ এবং মুসাফির এর জন্য কোন ফিদয়া নেই।.....

এজন্যই আমাদের বক্তব্য হল, অতি বৃদ্ধ যদি ফিদয়া আদায় করবে, এরপরে রোজা আদায়ে যদি সে সক্ষম হয়, তাহলে তার ফিদয়া বাতিল হয়ে যায়। -বাদায়েসুস সানায়ে ২/১০৫ 


২৭ তারিখকে শবে কদর মনে করা

লাইলাতুল কদর এক বরকতময় রজনী। এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। সারা বছরে অন্য কোনও রাতের এত ফযীলতের কথা পাওয়া যায় না। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিতে তা অন্বেষণ করতে আদেশ করেছেন। তবে তিনি কোনো রাত নির্দিষ্ট করেননি। লাইলাতুল কদরের তারিখ বলতে গিয়ে দেখেন যে, দুইজন ব্যক্তি ঝগড়া করছে। তখন তিনি ওই তারিখ বলতে ভুলে যান। এই ভুলে যাওয়ার মাঝেই আমাদের কল্যাণ রয়েছে। 

তাই সুনির্দিষ্ট ভাবে ২৭ তারিখকে লাইলাতুল কদর বলা যাবে না। আমাদের সমাজে ২৭ তারিখকে লাইলাতুল কদর নিশ্চিত মনে করে অনেক কাজকর্ম করা হয় যা পরিহারযোগ্য। বরং বুখারী শরীফের একটি হাদিস মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। এখানে ২১ তারিখে শবে কদর হওয়ার কথা আছে। হাদিসটি হল,

عن أبي سعيد الخدري ـ رضى الله عنه ـ. كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يجاور في رمضان العشر التي في وسط الشهر، فإذا كان حين يمسي من عشرين ليلة تمضي، ويستقبل إحدى وعشرين، رجع إلى مسكنه ورجع من كان يجاور معه. وأنه أقام في شهر جاور فيه الليلة التي كان يرجع فيها، فخطب الناس، فأمرهم ما شاء الله، ثم قال " كنت أجاور هذه العشر، ثم قد بدا لي أن أجاور هذه العشر الأواخر، فمن كان اعتكف معي فليثبت في معتكفه، وقد أريت هذه الليلة ثم أنسيتها فابتغوها في العشر الأواخر وابتغوها في كل وتر، وقد رأيتني أسجد في ماء وطين ". فاستهلت السماء في تلك الليلة، فأمطرت، فوكف المسجد في مصلى النبي صلى الله عليه وسلم ليلة إحدى وعشرين، فبصرت عيني رسول الله صلى الله عليه وسلم ونظرت إليه انصرف من الصبح، ووجهه ممتلئ طينا وماء.

অর্থ: আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রমযান মাসের মাঝের দশকে ইতিকাফ করেন। বিশ তারিখ সন্ধ্যা বেলায় একুশ তারিখের শুরুতে তিনি এবং তাঁর সঙ্গে যাঁরা ইতিকাফ করেছিলেন সকলেই নিজ নিজ বাড়ীতে প্রস্থান করেন। এবং তিনি যে মাসে ইতিকাফ করেন ঐ মাসের যে রাতে ফিরে যান সে রাতে লোকদের সামনে ভাষণ দেন। আর তাতে মাশাআল্লাহ, তাদেরকে বহু নির্দেশ দান করেন, তারপর বলেন যে, আমি এই দশকে ইতিকাফ করেছিলাম। এরপর আমি সিদ্ধান্ত করেছি যে, শেষ দশকে ইতিকাফ করব। যে আমার সঙ্গে ইতিকাফ করেছিল সে যেন তার ইতিকাফস্থলে থেকে যায়। আমাকে সে রাত দেখানো হয়েছিল, পরে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। (রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ শেষ দশকে ঐ রাতের তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তা তালাশ কর। আমি স্বপ্নে দেখেছি যে,ঐ রাতে আমি কাদা পানিতে সিজদা করছি। ঐ রাতে আকাশে প্রচুর মেঘের সঞ্চার হয় এবং বৃষ্টি হয়। মসজিদে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নামাযের স্থানেও বৃষ্টির পানি পড়তে থাকে। এটা ছিল একুশ তারিখের রাত। যখন তিনি ফযরের নামায শেষে ফিরে বসেন তখন আমি তাঁর দিয়ে তাকিয়ে দেখতে পাই যে, তাঁর মুখমন্ডল কাদা–পানি মাখা। -বুখারী, ১৮৯১ 


শবে কদরের নামাজ

লাইলাতুল কদরে বেশি বেশি নামাজ,দোয়া, যিকির, তেলাওয়াতে মশগুল থাকা উচিত। যত বেশি ইবাদতে লিপ্ত থাকা যাবে, আল্লাহ তাআলার তত নৈকট্য অর্জন হবে। লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট কোনো নামাজ নেই। অনেকে বলেন, "লাইলাতুল কদরে চার রাকাত নামাজ পড়তে হবে। প্রত্যেক রাকাতে সূরা কদর তিনবার পড়বে।" এগুলো মনগড়া কথা। কুরআন হাদীসে লাইলাতুল কদরের নামাযের কথা বর্ণিত হয়নি। তবে হ্যাঁ, লাইলাতুল কদরে একটি বিশেষ দোয়ার কথা হাদীসে এসেছে।

عن عائشة، قالت قلت يا رسول الله أرأيت إن علمت أى ليلة ليلة القدر ما أقول فيها قال " قولي اللهم إنك عفو كريم تحب العفو فاعف عني " .

অর্থ: আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন রাতটি লায়লাতুল ক্বদর, এ কথা যদি আমি জানতে পারি তবে সে রাতে কী দুআ করব? তিনি বললেন, বলবেঃ

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

হে আল্লাহ! তুমি তো খুবই ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাই তুমি ভালবাস। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। - তিরমিযী, ৩৫১৩

তাই যার যা মন চায়, তাই ইবাদত করতে পারবে। নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতিতে ইবাদত করার কথা হাদীসে আসেনি। 


শবে কদরের গোসল

পাক পবিত্রতা ইবাদত কবুলে সহায়ক। আর গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের জন্যে গোসল করা মুস্তাহাব। তাই কোনো ব্যক্তি শবে কদরের ব্যাপারে নিশ্চিত জানতে পারলে গোসল করা তার জন্য মুস্তাহাব। তানভীরুল আবছার কিতাবে আছে,

(ﻭﻧﺪﺏ ﻟﻤﺠﻨﻮﻥ ﺃﻓﺎﻕ) (ﻭﻋﻨﺪ ﺣﺠﺎﻣﺔ ﻭﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺑﺮاءﺓ) ﻭﻋﺮﻓﺔ (ﻭﻗﺪﺭ) ﺇﺫا ﺭﺁﻫﺎ

অর্থ: পাগল মানুষ সুস্থ হওয়ার পর গোসল করা সুন্নত। শিঙ্গা লাগানোর সময়, শবে বরাতে, আরাফার রাতে এবং যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানবে তার জন্য গোসল করা মুস্তাহাব। ( ফত‌ওয়া শামী ১/১৬৯) 

তবে এ রাতে বিশেষ কোনো পদ্ধতিতে গোসল প্রমাণিত নয়। আর উপরে উল্লেখিত গোসল কে জরুরী মনে করাও ঠিক নয়। 


রমজানে মসজিদ আলোকসজ্জা করা

মসজিদ ইবাদতের স্থান। এখানে ইবাদত ব্যতীত অন্য কাজে লিপ্ত হওয়া ঠিক নয়। ইবাদতের সুবিধার জন্য মসজিদ পাকা করা, লাইট, ফ্যান লাগানো জায়েজ। এতে মানুষ মনোযোগ দিয়ে ইবাদত করতে পারে। কিন্তু ইবাদতের প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত সজ্জিত করার পেছনে পড়া ঠিক নয়। আমাদের সমাজে রমজানের শেষ দশকে বা ২৭ এর রাতে পুরো মসজিদ রং বেরঙের লাইটিং, আগরবাতি দ্বারা সজ্জিত করা হয়। অথচ হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন,

ﻭﺇﻳﺎﻙ ﺃﻥ ﺗﺤﻤﺮ ﺃﻭ ﺗﺼﻔﺮ ﻓﺘﻔﺘﻦ اﻟﻨﺎﺱ

অর্থ: তোমরা মসজিদ লাল বা হলুদ রঙ্গিন করা থেকে বিরত থাকো। কারণ এতে করে মানুষ ফিতনায় পতিত হয়।- বুখারী ১/৯৭

আর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো কড়া ভাষায় বলেন,

ﻟﺘﺰﺧﺮﻓﻨﻬﺎ ﻛﻤﺎ ﺯﺧﺮﻓﺖ اﻟﻴﻬﻮﺩ ﻭاﻟﻨﺼﺎﺭﻯ

অর্থ: ইহুদী-নাছারারা যেভাবে তাদের ইবাদতের স্থান জাঁকজমক পূর্ণ করে, তোমরা সেভাবে সাজাবে না। (বুখারী) 

তাছাড়া মসজিদের ফান্ড থেকে এমন অযথা খরচ করা অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত। মানুষ মসজিদের উন্নয়ন ও হেফাজতের জন্য দান করে থাকে। মসজিদের উন্নয়ন বা সংরক্ষণে ব্যয় না করে হিন্দুদের মন্দিরের মতো সাজসজ্জা করে তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা গুনাহের কাজ। এ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। 


সাতাশের রাতে কুরআন খতম জরুরী মনে করা

রমজানে তারাবীর নামাজে এক খতম কোরআন পড়া সুন্নত। আর অতিরিক্ত আরও খতম করতে পারলে ভালো। ফতোয়ায়ে শামীতে উল্লেখ আছে,

ﻭﻗﺎﻝ اﻟﺤﺴﻦ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ: ﻳﻘﺮﺃ ﻓﻲ ﻛﻞ ﺭﻛﻌﺔ ﻋﺸﺮ ﺁﻳﺎﺕ ﻭﻧﺤﻮﻫﺎ، ﻭﻫﻮ اﻟﺼﺤﻴﺢ ﻷﻥ اﻟﺴﻨﺔ اﻟﺨﺘﻢ ﻓﻴﻬﺎ ﻣﺮﺓ ﻭﻫﻮ ﻳﺤﺼﻞ ﺑﺬﻟﻚ ﻣﻊ اﻟﺘﺨﻔﻴﻒ ﻷﻥ ﻋﺪﺩ ﺭﻛﻌﺎﺕ اﻟﺘﺮاﻭﻳﺢ ﻓﻲ اﻟﺸﻬﺮ ﺳﺘﻤﺎﺋﺔ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﻋﺪﺩ ﺁﻱ اﻟﻘﺮﺁﻥ ﺳﺘﺔ ﺁﻻﻑ ﺁﻳﺔ ﻭﺷﻲء

অর্থ: হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি তার ওস্তাদ হযরত ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, প্রত্যেক রাকাতে দশ আয়াতের মতো পড়বে। এটি সহীহ। কারণ, একবার খতম করা সুন্নত। আর দশ আয়াত করে পড়লে এই সুন্নত সহজে আদায় হয়। কারণ রমজানে তারাবীর নামাজে ৬০০ রাকাত পড়া হয়। আর কোরআনের আয়াত ৬০০০ এর চেয়ে কিছু বেশি। - ফত‌ওয়ায়ে শামী ২/৪৬

লক্ষ্য করুন, ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি পুরা রমজান হিসাব করে খতম করাকে পছন্দ করলেন। যদি সাতাশ তারিখে খতম করা জরুরী হতো, তাহলে তিনি সে হিসেবে কেরাত ভাগ করতেন।

আমাদের সমাজের ২৭ তারিখের কোরআন খতম করা জরুরী মনে করা হয়। এভাবে জরুরী মনে করা ঠিক নয়। নানা সুযোগ-সুবিধার বিবেচনা করে সে রাতে খতম করতে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু কেউ খতম না করলে তাকে তিরস্কার বা ভৎসনা করাও বাড়াবাড়ি। আবার অনেকে খতম হয়ে যাওয়ার পর বাকি দুই তিন দিন তারাবীর নামাজ পড়ে না। এটিও অনুচিত কাজ। তারাবীর নামাজ শেষ দিন পর্যন্ত সুন্নত। খতম হয়ে যাওয়ার পরও এ সুন্নত ছাড়া যাবে না। 


মহিলাদের তারাবীর জামাত

পুরুষ মহিলা সবার জন্য তারাবীর নামাজ পড়া সুন্নত। পুরুষদের জন্য মসজিদে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করতে হবে। তবে জামাত ছুটে গেলে একাকী পড়ে নিতে হবে। আর মহিলারা ঘরে একাকী নামাজ পড়া উত্তম। ঘরের মধ্যেও নির্জন কক্ষে নামাজ পড়তে হাদীসে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। হযরত উম্মে হুমাইদ একজন মহিলা সাহাবী। রাসূলের কাছে এসে বললেন, আমি আপনার সঙ্গে নামাজ পড়তে আগ্রহী। নবীজি বললেন আমি বুঝি যে, আমার সাথে নামাজ পড়লে তোমার ভালো লাগবে। কিন্তু তোমার কামরায় নামাজ পড়া ঘরে নামাজ পড়া থেকে উত্তম। (কারণ কামরায় ঘর থেকেও বেশি পর্দার সাথে নামাজ আদায় করা যায়) আর বাড়ি থেকে ঘরে নামাজ পড়া উত্তম। তোমার মহল্লার মসজিদ থেকে বাড়িতে নামাজ পড়া উত্তম। আর আমার মসজিদে নববীতে নামাজ পড়া থেকে মহল্লার মসজিদে নামাজ পড়া উত্তম। এই কথা শোনার পর তার ঘরের এক কোণে অন্ধকার জায়গায় নামাজের ঘর বানানো হয়। তিনি সেখানে নামাজ পড়তেন। মৃত্যু পর্যন্ত এ ঘরেই ইবাদত করতেন। -মুসনাদে আহমদ ২৭০৯০ 


হাদীসে মহিলাদের পর্দার সহিত নামাজের প্রতি গুরুত্বের ভঙ্গি দেখে অবাক হতে হয়। যথাসাধ্য তাদেরকে ঘরের আবদ্ধ জায়গায় নামাজ পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে। তারা যদি ঘর ছেড়ে বাইরে এসে নামাজ পড়া শুরু করেন, তাহলে নতুন আরেক ফেতনার দ্বার উন্মোচিত করা হবে। নবীজির জামানায় মহিলাদের জন্য মসজিদে আসার অনুমতি ছিল। কিন্তু হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা নবীজির ইন্তেকালের পর বলেন, 

لو أن رسول الله صلى الله عليه وسلم رأى ما أحدث النساء لمنعهن المسجد كما منعت نساء بني إسرائيل .

অর্থ: রাসূল (ﷺ) যদি এ যুগের নারীদের আচরণের অবস্থা দেখতেন, তবে তাদেরকে বনী ইসরাঈলী নারীদের ন্যায় মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করতেন।—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৮৩

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহার যুগের মহিলাদের ফেতনার কারণে উনি কত কড়া কথা বললেন। তাহলে চিন্তা করুন, এই ফেতনার যুগে মহিলাদেরকে তারাবীর জন্য মসজিদে নেয়া বা বিভিন্ন বাড়ী থেকে এনে এক জায়গায় জামাত করা কতটা নিচু কাজ!

কিন্তু আমাদের সমাজে অনেক বাসা থেকে এক বাসায় একত্রিত হয়ে জামাতে নামাজ আদায় করা হয়। তাদেরকে ঘর থেকে তারাবীর জন্য বের করে আনা ঠিক নয়। 

আর মহিলাদের নিজেদের জামাত করা মাকরূহে তাহরীমি। নিজেরা তারাবীর জামাত করে আরেক গুনাহের শিকার হতে হয়। অথচ ফিকহের প্রসিদ্ধ কিতাব আল জাওহারাতুন নাইয়িরায় উল্লেখ আছে,

يكره للنساء ان يصلين وحدهن جماعة  يعني بغير رجال سواء في ذلك الفرائض والنوافل والتراويح

অর্থ: মহিলাদের জন্য পুরুষ ছাড়া নিজেরা জামাতে নামাজ পড়া মাকরুহ। চাই ফরজ নামাজে হোক বা নফল নামাজে অথবা তারাবীর নামাজে। - আল জাওহারাতুন নাইয়িরাহ ১/৬০

তাই হাফেজা মহিলাকে ইমাম বানিয়ে মহিলাদের জামাত করা থেকে বিরত থাকতে হবে। হাফেজার ইয়াদ মজবুত করতে হলে অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবেন। দিনের বেলা তেলাওয়াত, শবিনার মাধ্যমে তারা কোরআন ইয়াদ রাখবে। নিজেরা তারাবীর জামাত করে মাকরূহে তাহরীমের গুনাহ করা বোকামি। মুফতী মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি লেখেন,

حفظ کو باقی رکھنے کے لیے خارج نماز حافظہ سنائے دیگر مستورات بیٹھ کر سن لیں ہر ایک اپنی تراویح میں، اوابین میں، تہجد میں پڑھا کرے اسی طرح حفظ باقی رہے گا اور کراہت تحریم کے ارتکاب سے بھی حفاظت رہے گی

অর্থ: হিফজ ইয়াদ রাখার জন্য নামাজের বাইরে হাফেজা শুনাবে। অন্যান্য মহিলারা বসে বসে শুনবে। প্রত্যেকেই নিজেদের তারাবী, আওয়াবীন, তাহাজ্জুদে তেলাওয়াত করবে। এভাবে হিফজ বাকি থাকবে। এতে মাকরুহে তাহরীমিতে লিপ্ত হওয়া থেকেও বেঁচে যাবে। ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া ৬/৪৭২

যদি শুধু ঘরের মাহরাম মহিলাদের নিয়ে পুরুষ ইমাম তারাবীর জামাত করে অথবা পুরুষ মুক্তাদী সাথে নিয়ে ঘরের গায়রে মাহরাম মহিলারা পর্দার আড়ালে পড়ায়, তাহলে মাকরুহ হবে না। কিন্তু এই সুযোগ থাকার কারণে বাহিরের মহিলাদের ডাকা যাবেনা। বরং ঘরের লোকেরা এভাবে পড়তে পারে। আল বাহরুর রায়েক ১/৩৭৩ 


জুমাতুল বিদা পালন করা

জুমার দিনের অনেক ফজিলত আছে। বছরের ১২ মাস এ ফজিলত চলমান। রমজানের শেষ জুমার আলাদা কোন ফজিলত নেই। আমাদের সমাজে জুমাতুল বিদা বা বিদায়ী জুম‌আ হিসেবে বিশেষ মর্যাদা মনে করা হয়। মানুষ এই জুমার জন্য নতুন নতুন কাপড় পরিধান করে আসেন। খতীব সাহেবরা জুমার খুতবায় রমজান বিদায়ের আফসোস ও কষ্ট প্রকাশ করতে থাকে। অথচ শরীয়তে এ ধরনের কষ্টের কোন ভিত্তি নেই। বরং হাদীস শরীফে খুশির কথা বলা হয়েছে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

للصائم فرحتان فرحة حين يفطر وفرحة حين يلقى ربه

অর্থ: রোযা পালনকারীর জন্য রয়েছে দু’টি আনন্দ। এক আনন্দ হল যখন সে ইফতার করে, আর এক আনন্দ হলো যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে। —সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৮৪

হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ লেখেন, فطر এর দুইটি অর্থ;

১. ইফতারের সময়

২. ঈদুল ফিতরের সময় অর্থাৎ রোজাদারের জন্য ঈদুল ফিতরের মুহূর্তে আনন্দের সময়। সুতরাং রমজানের শেষে ঈদুল ফিতরের আনন্দ প্রকাশে হাদিসে উৎসাহিত করা হয়েছে। এজন্যই হযরত আশরাফ আলী থানবী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি লেখেন

رمضان کے آخر کسی قسم کی خوشی ہو محمود و مطلوب ہے لیکن رنج کے مطلوب ہونے کی کوئی دلیل نہیں رنج نہ واقع ہے اور نہ اس کی کوئی اصل ہے پس تأسف اور رنج کرنا اور خطبہ میں الوداع الوداع یا شہر رمضان بالکل بے اصل ہے

অর্থ: রমজানের শেষে যে ধরনের খুশি হোক তা প্রশংসিত। কিন্তু কষ্ট হওয়ার কোন দলিল নেই। কষ্টের কোনো বাস্তবতাও নেই এবং তার কোন প্রমাণও নেই । সুতরাং আফসোস এবং কষ্ট প্রকাশ করা এবং খুতবার মধ্যে বিদায় বিদায় হে মাহে রামাযান বলতে থাকা ভিত্তিহীন কাজ। 

কোনো জায়গায় আরো মনগড়া কথা প্রচলিত যে, রমজানের শেষ জুমায় একটি কাজা নামাজ আদায় করলে জীবনের সব কাজা নামাজ পূরণ হয়ে যায়। এটি একেবারেই ভুয়া কথা। এর কোনও ভিত্তি নেই। সঠিক মাস‌আলা হলো, নামাজ কাজা হয়ে গেলে তা আদায় করতে হবে। এমন কোন আমল নেই যা কাজা নামাজ মাফ করে দিবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন

من نسي صلاة فليصل إذا ذكرها، لا كفارة لها إلا ذلك

অর্থ: যদি কেউ কোন নামাযের কথা ভুলে যায়, তাহলে যখনই স্মরণ হবে, তখন তাকে তা আদায় করতে হবে। এ ব্যতীত সে নামাযের অন্য কোন কাফফারা নেই। - সহীহুল বুখারী, ৫৯৭।

এত পরিষ্কার হাদিস থাকার পরও এসব মনগড়া কথাবার্তায় কান দেওয়া যাবে না। 


রমজানের স্বাগত অনুষ্ঠান

মুমিন মাত্রই রমজান আগমনের আনন্দ উপলব্ধি করবে। রমজানের ইবাদতের স্বাদে ডুবে থাকবে। রমজান আসার অপেক্ষায় থাকবে। এজন্যই নবীজি দুই মাস আগ থেকে রমজান পাওয়ার দোয়া করতেন। রমজানের আগের মাস তথা শাবানে অনেক রোজা রাখতেন। রমজানের প্রস্তুতিমূলক রোজা রাখতেন। আবার রমজানের কয়েকদিন আগে কোন রোজা রাখতেন না, যাতে করে রোজা রেখে দুর্বল হয়ে রমজানের রোজা রাখতে কষ্ট না হয়। শাবানের শেষ দিন এক বিশেষ খুতবা প্রদান করেন যাতে রমজানের গুরুত্ব তাৎপর্য সম্পর্কে মানুষের সম্মুখ ধারণা হয়ে রমজান কাজে লাগাতে পারে। রমজানের চাঁদ দেখে শান্তি নিরাপত্তার দোয়া করতেন। 

কিন্তু রমজান আগমন উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান করা, সেই অনুষ্ঠানে রমজানের স্বাগত মিউজিক বাজানো, একে অপরকে রমজানের অভিবাদন জানানোর বিষয়গুলো কোরআন সুন্নাহয় পাওয়া যায় না। তাই এগুলো থেকে বিরত থাকা অবশ্য কর্তব্য। 


রমজানের শবীনা পড়া

রমজানে কোরআন তেলাওয়াত অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। আর নামাজের মধ্যে তেলাওয়াত আরও ভাগ্যের ব্যাপার। নবীজী, সাহাবা, তাবেঈন, বুজুর্গদের জীবনে নামাজে দীর্ঘ সময় তেলাওয়াতের অনেক ঘটনা আছে। তবে তেলাওয়াত যেমন গুরুত্বপূর্ণ, কোরআনের আজমত রক্ষা করে তেলাওয়াত করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোরআনের মর্যাদার খেলাফ কাজ করলে রহমতের পরিবর্তে লানত আসে।

আমাদের সমাজে রমজানের শেষের দিকে শবীনা পড়া হয়। তিন দিনে রাতে নফল নামাজে পুরো কোরআন খতম করা হয়। মানুষ অনেক সওয়াবের কাজ মনে করে চাঁদা দিয়ে হাফেজ সাহেব নিয়ে আসে। এসব কাজে কয়েক ধরনের মন্দ দিক পাওয়া যায়।

ক. তিন দিনের খতম করতে গিয়ে হাফেজ সাহেব অনেক দ্রুত তেলাওয়াত করেন। এতে কোরআনের মদ গুন্নাহ ও হরফের উচ্চারণ সঠিকভাবে করা হয় না। এত দ্রুত পড়া কোরআনের আযমতের খেলাফ । আবার কখনো কখনো অর্থ‌ও পরিবর্তন হয়ে যায়।

খ. লম্বা কেরাতের কারণে মানুষ পুরা সময় নামাজে থাকে না। এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করতে থাকে। গল্প গুজবে মত্ত থাকে।

গ. মাইকের তেলাওয়াত মসজিদের বাইরে ছড়িয়ে যায়। এতে বহু মানুষ কোরআন না শোনার অপরাধে জড়িত হয়ে যায়।

ঘ. নফল নামাজ তিনজনের অধিক জামাত করা হানাফী মাযহাবে মাকরুহে তাহরীমী। এসব শবীনা সাধারণত নফল নামাজে পড়া হয়। তাই এই কাজ মাকরুহ।

হযরত আশরাফ আলী থানবী রহমতুল্লাহি আলাইহি লেখেন,

بعض حفاظ کی عادت ہے کہ لیلۃ القدر میں یا اور کسی شب میں سب جمع ہو کر ایک یا کئی شخص مل کر قرآن مجید ختم کرتے ہیں اور عرف میں اس کو شبینہ کہتے ہیں اول تو بعض علماء نے ایک شب میں قرآن مجید ختم کرنے کو مکروہ کہا ہے کیونکہ اس میں ترتیل و تدبر کا موقع نہیں ملتا مگر چونکہ سلف صالحین سے ایک رات میں ختم کرنا بلکہ بعض سے کئی کئی ختم کرنا منقول ہے اس لئے اس میں گنجائش ہوسکتی ہے مگر اس میں اور بہت سے مفاسد شامل ہوگئے جس کی وجہ سے یہ عمل شبینہ کا بطریق مروج بلاشک مکروہ ہے

অর্থ: কোন কোন হাফেযের অভ্যাস হলো লাইলাতুল কদরে অথবা অন্য কোন রাতে সবাই একত্রিত হয়ে এক ব্যক্তি বা কয়েক ব্যক্তি মিলে কোরআন মাজীদ খতম করে। সমাজে ইহাকে শবীনা বলা হয়।

প্রথমত অনেক উলামা এক রাতে কোরআন খতম করা মাকরুহ বলেছেন। কেননা, এতে ধীরস্থিরতা এবং চিন্তা ফিকিরের সুযোগ হয় না। কিন্তু যেহেতু পূর্বসূরীদের থেকে এক রাতে খতম করা বরং কোন কোন ব্যক্তির থেকে কয়েক খতম করা বর্ণিত আছে, তাই এভাবে খতম করার সুযোগ থাকতে পারে। কিন্তু এখানে আরো অনেক মন্দ বিষয় জড়িত হয়ে গেছে। যার কারণে এই শবীনার কাজটি বর্তমান প্রচলিত ধারায় নিঃসন্দেহে মাকরুহ। 


কোরআন দেখে তারাবীর নামাজ আদায় করা

আমাদের সমাজে নির্দিষ্ট কিছু লোক কোরআন দেখে তারাবির নামাজ পড়ে। এভাবেই তারা কোরআন খতম করে অথচ কোরআন দেখে নামাজ পড়লে নামাজ আদায় হয় না। ফত‌ওয়ায়ে শামীতে উল্লেখ আছে,

ﺫﻛﺮﻭا ﻷﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻓﻲ ﻋﻠﺔ اﻟﻔﺴﺎﺩ ﻭﺟﻬﻴﻦ. ﺃﺣﺪﻫﻤﺎ: ﺃﻥ ﺣﻤﻞ اﻟﻤﺼﺤﻒ ﻭاﻟﻨﻈﺮ ﻓﻴﻪ ﻭﺗﻘﻠﻴﺐ اﻷﻭﺭاﻕ ﻋﻤﻞ ﻛﺜﻴﺮ. ﻭاﻟﺜﺎﻧﻲ ﺃﻧﻪ ﺗﻠﻘﻦ ﻣﻦ اﻟﻤﺼﺤﻒ ﻓﺼﺎﺭ ﻛﻤﺎ ﺇﺫا ﺗﻠﻘﻦ ﻣﻦ ﻏﻴﺮﻩ

অর্থ: কোরআন দেখে নামাজ পড়ার ব্যাপারে আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে নামাজ ভাঙ্গার দুইটি কারণ বর্ণিত আছে,

১. কোরআন হাতে নেওয়া, তাতে তাকানো এবং পৃষ্ঠা উল্টানো এগুলো সবই আমলে কাছির

২. যখন কোরআন থেকে শিখছে, তখন নামাজে অন্যদের থেকেই তালকীন গ্রহণ করছে। -ফত‌ওয়ায়ে শামী ১/৬২৪

এই দুই কারণ পাওয়া গেলে নামাজ ভাঙ্গার ব্যাপারে সবাই একমত। এখানে উভয় কারণ স্পষ্টভাবে পাওয়া গেছে। তাই কোরআন দেখে নামাজ আদায় করলে নামাজ হবে না। 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন,

نهانا امير المؤمنين عمر رضي الله تعالى عنه ان يؤم الناس في المصحف ونهانا ان يؤمنا الا المحتلم

অর্থ: হযরত আমীরুল মুমিনীন উমর রা. আমাদেরকে কুরআন দেখে ইমামতি করতে নিষেধ করেছেন। আর সাবালক ব্যতীত অন্য কোনো মানুষের ইমামতিও নিষেধ করেছেন।  (কিতাবুল মাসাহিফ) 

তাছাড়া রাসুলের অনেক হাদিসে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, নামাজে কোরআন দেখে পড়া যাবে না। নিচের হাদীসটি লক্ষ্য করুন,

وإن الله أمركم بالصلاة فإذا صليتم فلا تلتفتوا فإن الله ينصب وجهه لوجه عبده في صلاته ما لم يلتفت

অর্থ: আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদেরকে নামাযের নির্দেশ দিয়েছেন, সুতরাং তোমরা যখন নামায আদায় করবে তখন এদিক–সেদিক তাকাবে না। কেননা যতক্ষণ বান্দা এদিক–সেদিক না তাকায় ততক্ষণ আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নেক দৃষ্টি তাঁর বান্দার চেহারার দিকে নিবিষ্ট করে রাখেন। - তিরমিযী,২৮৬৩ 

এত হাদীস, আছার ও ফুকাহায়ে কেরামের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোরআন দেখে দেখে নামাজ পড়া ফিতনা সৃষ্টি করা ছাড়া আর কিছুই নয়।


তারাবীতে অতিদ্রুত তেলাওয়াত করা

রমযানের রাতে তারাবীর নামাযে এক খতম কুরআন পড়া সুন্নত। কুরআনের হক আদায় করে এই তিলাওয়াতের স্বাদ অন্যরকম। অনেক আকাবির এই তিলাওয়াত শুনার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতেন। কিন্তু আমাদের সমাজে এত দ্রুত তেলাওয়াত করা হয় যে, কিছুই বুঝা যায় না। কুরআনের মদ, গুন্নাহ ও তাজবীদের প্রতি খেয়াল না করে দ্রুতগতিতে কোনোরকম খতম শেষ করা স‌ওয়াবের কাজ হতে পারে না। বরং হাদীস শরীফে আছে,

رب قائم ليس له من قيامه إلا السهر

অর্থ: অনেক সালাত আদায়কারী রয়েছে, যাদের সালাত কেবল অনিদ্রা যাপন ছাড়া আর কিছুই নয়। -নাসাঈ, ৩২৬৯

অনেক কষ্ট করে দাঁড়িয়ে তারাবী পড়ার পর যদি আমলনামায় কিছুই পাওয়া না যায়, তাহলে পুরো কষ্টই বৃথা। তাই ধীরে ধীরে হক আদায় করে তেলাওয়াত করা উচিত। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন,

لان اقرأ البقرة و آل عمران ارتلهما و اتدبرهما احب الى من ان اقرأ القرآن كله هذرمة-تبيان

অর্থ: অনেক তাড়াতাড়ি পুরো কোরআন মাজীদ পড়ার চেয়ে ধীরে ধীরে তারতিলের সাথে চিন্তা করে করে শুধু সুরা বাকারা ও আলে ইমরান পড়াই আমার কাছে বেশি প্রিয়।

তাই মানুষের কষ্টের প্রতি খেয়াল করে হালকা দ্রুত করা যেতে পারে। কিন্তু মদ, গুন্নাহ ও হরফের উচ্চারণে ত্রুটি করে দ্রুত পড়া যাবে না। ফত‌ওয়ায়ে হিন্দিয়ায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে,

ﻭﻳﻜﺮﻩ اﻹﺳﺮاﻉ ﻓﻲ اﻟﻘﺮاءﺓ

অতি দ্রুত কেরাত পড়া মাকরুহ। - হিন্দিয়া ১/১১৭

মুসলিম বাংলা