বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ফাল্গুন ২৭ ১৪৩১, ১২ রমজান ১৪৪৬

ব্রেকিং

মৃত্যু সনদ নিতে ঘুষ, গণশুনানিতে কাঁদলেন নাগরিক গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী শক্তি দেশ চালাচ্ছে: তথ্য উপদেষ্টা পুলিশের ডিজিটাইজেশনে সরকারের চার উদ্যোগ: নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে শর্টকোড চালুর সিদ্ধান্ত গোপালগঞ্জে দিনদুপুরে বাড়িতে ঢুকে যুবককে হত্যার পর লুট ধর্ষণের বিচার দাবিতে গণপদযাত্রায় পুলিশের লাঠিচার্জ ২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ বাংলাদেশ ও চাদ: আইকিউএয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোচিং ক্লাস-প্রাইভেট পড়ানো নয় সরকার ক্রমান্বয়ে কর অব্যাহতি কমাবে: এনবিআর চেয়ারম্যান ২০০ কোটি টাকার বেশি পাচারকারীদের শনাক্ত, আইনি পদক্ষেপ চলছে: অর্থ উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চলতি বছরের ফিতরা জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১০ টাকা, সর্বোচ্চ ২,৮০৫ টাকা হাসিনা পরিবারের ১২৪ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ সীতাকুণ্ডে ধর্ষণের শিকার ১০ বছরের শিশু, সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ গ্রেপ্তার এখনও ছাপা বাকি ‘১ কোটি ৮ লাখ’ বই জামালপুরে ৫ বছরের শিশুকে ‘ধর্ষণ’, মায়ের মামলা শ্যালিকাকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে দুলাভাই আটক নারায়ণগঞ্জে গ্যাসের আগুন: একে একে চলে গেলেন পরিবারের তিনজন নাদিমের মৃত্যুতে দুই সন্তান নিয়ে অকূলপাথারে স্ত্রী নেহা এক্সে সাইবার হামলা, জানালেন ইলন মাস্ক

ইসলাম

হাফেজদের মা-বাবা ও উস্তাযগণের কৃতজ্ঞতা আদায় করুন

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

 প্রকাশিত: ১১:১৫, ১১ মার্চ ২০২৫

হাফেজদের মা-বাবা ও উস্তাযগণের কৃতজ্ঞতা আদায় করুন

হামদ ও সানার পর...

কুরআন কারীম তিলাওয়াত করা এবং কুরআন কারীমের তিলাওয়াত  শোনো অনেক বড় ইবাদত। আর এই ইবাদতের সৌভাগ্য হওয়া অনেক বড় নিআমত।

তিলাওয়াতে কুরআনের মিষ্টতা ও স্বাদ বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। এই আমলের আসলে কোনো তুলনা হয় না। এটি হৃদয় প্রশান্তকারী ইবাদত। যারা আমাদেরকে এ খতম শোনালেন তাদের জন্যও এটা সৌভাগ্যের বিষয়, আমাদের জন্যও সৌভাগ্যের বিষয়।

যাকে আল্লাহ তাআলা হাফেজ বানিয়েছেন, যারা কুরআন মাজীদ শোনান, তাদের প্রতি তো একপ্রকার কৃতজ্ঞতাবোধ কাজ করে; এটা অবশ্যই তাদের শোকরগোযারীর জন্য। এর চেয়ে বেশি যে বিষয়টা সব সময় আমার অন্তরে জাগ্রত থাকে তা হল, এই হাফেজদের মা-বাবা, অভিভাবক এবং হাফেজদের মুআল্লিম, উস্তায– আমাদের প্রতি তাদের অনেক বড় ইহসান! তারাই তো এই হাফেজ সাহেবদের তৈরি করে দিয়েছেন।

মা-বাবা, অভিভাবক এবং উস্তাযগণ কত কষ্ট করে হাফেজ সাহেবদের তৈরি করেছেন। এখন তারা আমাদেরকে কুরআন শোনাচ্ছেন। এত সুন্দর, এত সহজভাবে। মনে হয় যেন একেবারে মুফতে পাওয়া। কিন্তু এর পেছনে অনেক মানুষের অবদান আছে।

উদাহরণস্বরূপ– যে দুইজন হাফেজ সাহেব আমাদেরকে পুরো কুরআন কারীম তিলাওয়াত করে শোনালেন, তাদের একজনের ছোট ভাই সাভারে এক মাদরাসায় হিফয শুরু করেছে। দুই বছর আগে তাকে যখন মকতবে ভর্তি করা হল, তখনকার কথা আমার পুরোপুরি মনে আছে। ছোট মানুষ, বাবা-মাকে ছাড়া কখনো একাকী থাকেনি। তাই মাদরাসায় কান্নাকাটি করত। থাকতে চাইত না। সে তার ভাইয়ের কাছে মারকাযুদ দাওয়াহতেই থাকবে। তার বড় ভাই ওখানে মাদরাসায় পৌঁছে দিয়ে আসে, কিন্তু ফেরার সময় কান্না শুরু করে। বলে, ভাইয়ার সাথে চলে আসবে। তখন তাকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে মাদরাসায় রেখে আসা হয়। ওই সময়টা বাচ্চা, বাচ্চার অভিভাবক এবং শিক্ষক সবার জন্যই অনেক কষ্টের। তো এভাবে আস্তে আস্তে বাচ্চাটিকে মাদরাসার পরিবেশে অভ্যস্ত করানো হয়েছে। এখন তো মাশাআল্লাহ সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। মন বসে গেছে। এমনকি মকতব, নাযেরা সমাপ্ত করে হিফযও শুরু করে দিয়েছে।

এই বাচ্চাটা তো একটা পরিবেশ পেয়েছে। তার বাবা আলেম। ভাইয়েরা মাদরাসায় পড়াশোনা করছে। নানা একজন বড় আলেম। মামারাও আলেম। তার পরও তাকে পড়াশোনায় ও মাদরাসার পরিবেশে অভ্যস্ত করানোর পেছনে মেহনত করতে হয়েছে। কিন্তু যে বাচ্চা এরকম পরিবেশ পায় না, তার অবস্থা তো আরো কঠিন।

তো হাফেজ সাহেবকে প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে যে মুআল্লিম, অভিভাবক এবং মা-বাবা মেহনত করেছেন–  আমাদের প্রতি তাদের অনেক ইহসান। যাদের সন্তানকে আমরা এখন একেবারেই সহজে পেয়ে যাচ্ছি। আমাদেরকে কুরআন কারীম শোনাচ্ছেন। নামাযে খতম শোনাচ্ছেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। যারা মরহুম হয়ে গেছেন তাদেরকে জান্নাতের উঁচু মাকাম নসীব করুন। যারা এখনো দুনিয়াতে আছেন, তাদেরকে সুস্থতার সাথে, নিরাপত্তার সাথে দীর্ঘ নেক হায়াত দান করুন।

কুরআন এমন এক নিআমত, কারোই এ নিআমত থেকে মাহরূম থাকার কোনো অবকাশ নেই। দুনিয়ার ব্যস্ততা, ব্যবসা বাণিজ্য, খেত-খামার আপনি যে  কাজেই থাকুন, যে ব্যস্ততার মাঝেই থাকুন, যে বয়সেরই হোন– এই নিআমত থেকে বঞ্চিত থাকার কোনো সুযোগ নেই। কুরআন শিখতে হবে, হাসিল করতে হবে। কম  হোক, বেশি হোক, কিছু পরিমাণে হলেও মুখস্থ করে নিতে হবে।

আর কুরআনের যে ডাক, ঈমানের যে আহ্বান, তা শুনতে হবে, তাতে সাড়া দিতে হবে।

সকল মানুষকে আল্লাহ তাআলা সম্বোধন করে বলেন–

یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ...

(হে মানুষ!)

আবার মুমিনদেরকে বিশেষভাবে বলেন–

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا...

(হে মুমিনগণ!)

আবার কখনো এভাবে বলেন–

یٰعِبَادِی...

(হে আমার বান্দারা!)

তো কুরআন ও ঈমানের ডাক– এটা সবার জন্য। এই ডাকগুলো শুনতে হবে। নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে।

আজ ২৯-৩০ পারা পড়া হয়েছে। কী আছে এ দুই পারায়? একটি আয়াত শুনুন–

یٰۤاَیُّهَا الْاِنْسَانُ اِنَّكَ كَادِحٌ اِلٰی رَبِّكَ كَدْحًا فَمُلٰقِیْهِ، فَاَمَّا مَنْ اُوْتِیَ كِتٰبَهٗ بِیَمِیْنِهٖ...

হে মানুষ! তুমি নিজ প্রতিপালকের কাছে না পৌঁছা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিশ্রম করে যাবে, পরিশেষে তুমি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। অতঃপর যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে, তার থেকে তো হিসাব নেওয়া হবে সহজ হিসাব। –সূরা ইনশিকাক (৮৪) : ৬-৮

অর্থাৎ প্রত্যেককে কাজ করতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। সকল মানুষকে বলা হচ্ছে, তোমরা সবাই ব্যস্ত, সবাই মেহনতের মধ্যে আছ। আল্লাহ বলেন–

كَادِحٌ.

অর্থাৎ সবাই মেহনতে লেগে আছে, কেউ খালি নেই।

আল্লাহ তাআলা বলেন–তোমার ব্যস্ততার মধ্যে এ কথা স্মরণ রাখ– ব্যস্ততার ফলাফলটা কী হবে? এমন ব্যস্ততা রেখ, যেই ব্যস্ততার ফলে তোমার আমলনামা ডান হাতে আসে। আর যে ব্যস্ততা হবে গুনাহের কাজে। এমন ব্যস্ততার আমলনামা হবে বাম হাতে। তাহলে সব বরবাদ, সব শেষ।

এর মানে তোমার দিন-দুনিয়ার যত ব্যস্ততা সব যেন সুন্দর ও ভালো হয়, গুনাহমুক্ত হয়। তোমার জীবনটা যেন পবিত্র হয়। দুনিয়াবী কিংবা দ্বীনী যে কাজই করো, তা শরীয়তের বিধানমতো করো। হারাম ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে। তাহলে তোমার এই ব্যস্ততা সার্থক। আমলনামা ডান হাতে আসবে।

কৃষক-মজুর, ব্যবসায়ী, হুজুর– সবার ক্ষেত্রেই একই কথা। ব্যস্ততার মধ্যেও যদি আল্লাহর বিধানের প্রতি খেয়াল রাখে, তাহলে তার আমলনামা ডান হাতে আসবে। অন্যথায় আমলনামা বাম হাতে যাবে। ডান হাতে আমলনামা আসল– ব্যস, সফল হয়ে গেল। বাম হাতে আমলনামা গেল– সব বরবাদ।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে কুরআনের জীবন গ্রহণ কার তাওফীক নসীব করেন। সবাই কম-বেশ শিখি এবং যদ্দুর পারি তিলাওয়াত করি। নামাযে তো পড়বই; সকাল-সন্ধ্যায়ও তিলাওয়াত করব। যে যদ্দুর পারি তিলাওয়াত করব। তিলাওয়াত থেকে বঞ্চিত হব না। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কবুল করুন– আমীন।

কুরআন কারীম খতমের সময় দুআ কবুল হয়। খুব দুআ করি। যে যেখানে খতম করেছেন সবাইকে আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। মুসলিম উম্মাহর যে যেখানে মাজলুম হয়ে আছে, বিশেষ করে ফিলিস্তিনের জন্য দুআ করি। আমাদের ভাইয়েরা সেখানে বর্ণনাতীত কষ্টের মধ্যে আছেন। তাদের কথা যদি আমরা চিন্তা করি, তো আমাদের খাওয়া-ঘুম সব হারাম হয়ে যাবে। তাদের সবার জন্য আমরা আল্লাহর কাছে দুআ করি। আল্লাহ তাদেরকে অমুসলিমদের জুলুম থেকে হেফাযত করেন। যার যে জরুরত আছে সকল জরুরতের জন্যও দুআ করি। ভালো হত, যদি হাফেজ সাহেব দুজন থেকে একজন দুআ করতেন...।

 

[১৪ রমযান দিবাগত রাত, ১৪৪৫ হি.

২৫-০৩-২০২৪ ঈ.

অনুলিখন : আবু নুসাইবা খায়রুল বাশার]

আলকাউসার