সূরাসমূহের নামের অর্থ (১-১৫)
কুরআন কারীমের প্রতি মুমিনের ভালবাসার একটি প্রকাশ এও যে, কুরআন বিষয়ক পরিচিতিমূলক তথ্যগুলো তার জানা থাকবে। এ ধরনেরই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কুরআন কারীমের সূরাসমূহের নামের পরিচয় এবং সূরাসমূহের আলোচ্য বিষয়ের পরিচয়। দ্বিতীয় বিষয়টি একটু দীর্ঘ। তার কিঞ্চিৎ আলোচনা তাফসীরে তাওযীহুল কুরআনে প্রতি সূরার শুরুতে রয়েছে। নামের পরিচয়ের বিষয়টি তুলনামূলক সহজ। নির্ভরযোগ্য অনূদিত কিছু সংক্ষিপ্ত তাফসীরগ্রন্থের সাহায্য নিয়ে নিম্নোক্ত লেখাটি তৈরি করেছেন জনাব কামরুল আনাম খান। পরবর্তীতে সম্পাদনা ও পরিমার্জন করেন মাওলানা ফজলুদ্দীন মিকদাদ। আশা করি পাঠক এ লেখা দ্বারা সূরাসমূহের নাম বিষয়ে একটি সাধারণ ধারণা অর্জন করতে পারবেন। এ সংখ্যায় লেখাটির অংশবিশেষ প্রকাশিত হল। -সম্পাদক]
১. সূরা ফাতিহা : অর্থ ‘প্রারম্ভিক’ (আরম্ভ/সূচনা/শুরু)। এই সূরা দ্বারা কুরআনের শুরু। তাই এর নাম ‘ফাতিহা’।
২. সূরা বাকারা : অর্থ ‘গাভী’। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈলকে একটি হত্যাকাণ্ডের সমাধানের জন্য একটি গাভী জবেহ করতে বললে তারা নানান অহেতুক প্রশ্ন করে বিষয়টিকে জটিল করে ফেলেছিল। সূরাটির ৬৭-৭৩ নং আয়াতে এ ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকেই এ সূরার নাম ‘বাকারা’।
৩. সূরা আলে ইমরান : অর্থ ‘ইমরানের পরিবার’। হযরত ইমরানের স্ত্রী গর্ভস্থ সন্তানকে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করেন। পরে তাঁর কন্যাসন্তান হয়, তাঁর নাম রাখা হয় ‘মারইয়াম’। তিনিই হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের মা। সূরাটির ৩৫-৩৬ আয়াতে ইমরানের পরিবারের কথা বলা হয়েছে। এ থেকেই এ সূরার নাম ‘আলে ইমরান’।
৪. সূরা নিসা : অর্থ ‘নারী’। এ সূরায় নারীদের সম্পর্কে বিস্তারিত বিধিবিধান তথা বিবাহ, মোহরানা, মীরাস, তালাক ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে।
৫. সূরা মায়েদা : অর্থ ‘দস্তরখান’। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসারীরা আবদার করেছিল, আল্লাহ যেন আসমান থেকে দস্তরখানায় আসমানী খাদ্য প্রেরণ করেন। সূরার ১১২ থেকে ১১৫ নং আয়াতসমূহে এ বিষয়ে আলোচনা রয়েছে।
৬. সূরা আনআম : অর্থ ‘চতুষ্পদ জন্তু’। এ সূরায় পশু নিয়ে মুশরিকদের বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যেমন, তাদের গবাদি পশুর একটি অংশ আল্লাহর জন্য এবং আরেকটি অংশ দেব-দেবীর নামে ধার্য করত, যা তাদের নির্ধারিত লোক ছাড়া অন্যরা খেতে পারত না। আবার কোনো পশুর পিঠে সওয়ার হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করত। এছাড়াও বিশেষ গবাদি পশুর গর্ভস্থ বাচ্চা শুধু পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট ও নারীদের জন্য হারাম বলত। কিন্তু ওই পশুর বাচ্চা যদি মৃত জন্মাত, তাহলে তা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই খাওয়া বৈধ সাব্যস্ত করত। সূরাটির ১৩৬-১৪৬ পর্যন্ত আয়াতসমূহে গবাদি পশু নিয়ে মুশরিকদের বিভ্রান্তি ও চতুষ্পদ জন্তু সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার প্রকৃত বিধান আলোচনা করা হয়েছে।
৭. সূরা আ‘রাফ : অর্থ উচ্চস্থান। পরিভাষায় জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী এক উঁচু স্থানকে ‘আ‘রাফ’ বলা হয়। সূরাটির ৪৬-৪৯ নং আয়াতসমূহে আ‘রাফবাসীর আলোচনা রয়েছে।
৮. সূরা আনফাল : অর্থ ‘যুদ্ধলব্ধ সম্পদ’। বদর যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় অর্জিত হওয়ার পর যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বণ্টনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সম্পর্কিত বিধান নাযিল হয়। সূরাটির বিভিন্ন আয়াতে এতদসংক্রান্ত বিস্তারিত নীতিমালা দেওয়া হয়েছে। সূরার শুরুতেই ‘আনফাল’ শব্দটি রয়েছে।
৯. সূরা তওবা : এ সূরায় কয়েকজন সাহাবীর তওবা কবুলের কথা বর্ণিত হয়েছে। সে সাহাবীগণ তাবুক যুদ্ধে যোগদান থেকে বিরত ছিলেন। পরে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তাঁরা যারপরনাই অনুতাপে দগ্ধ হন ও কৃতকর্মের জন্য তওবা করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁদের তওবা কবুল করে নেন। ১০২ ও ১১৮ নম্বর আয়াতে তাঁদের তওবা কবুলের কথা বর্ণিত হয়েছে। এ থেকেই সূরাটির নাম ‘তওবা’।
১০. সূরা ইউনুস : হযরত ইউনুস আলাইহিস সালামের নামানুসারে এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে। ৯৮ নং আয়াতে হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম ও তার কওমের কথা বলা হয়েছে।
১১. সূরা হূদ : হযরত হূদ আলাইহিস সালামের নামানুসারে এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে। সূরাটির ৫০-৬০ নম্বর আয়াতসমূহে হূদ আলাইহিস সালাম ও তাঁর সম্প্রদায় আদ জাতির কথা আলোচনা করা হয়েছে।
১২. সূরা ইউসুফ : হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের নামানুসারে এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে। প্রায় পুরো সূরা জুড়েই তাঁর ঘটনা বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে।
১৩. সূরা রা‘দ : অর্থ ‘বজ্রপাত’। সূরাটির ১৩ নম্বর আয়াতে রা‘দ অর্থাৎ বজ্রপাত সম্পর্কে বলা হয়েছে, বজ্র ও সব ফেরেশতা সভয়ে আল্লাহর প্রশংসা পাঠ করে।
১৪. সূরা ইবরাহীম : হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নামানুসারে এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে। সূরাটির ৩৫-৪১ পর্যন্ত আয়াতসমূহে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কিছু দুআ উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি দুআ করেছিলেন-
ক. হে আল্লাহ! এ নগরকে (মক্কা) শান্তিপূর্ণ বানিয়ে দিন।
খ. আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তিপূজা করা থেকে রক্ষা করুন।
গ. আমার সন্তানের জন্য মানুষের অন্তরে অনুরাগ সৃষ্টি করে দিন।
ঘ. আমার সন্তানদেরকে জীবিকা দান করুন।
ঙ. হে আমার প্রতিপালক! আমাকেও নামায কায়েমকারী বানিয়ে দিন এবং আমার সন্তানদেরকেও।
চ. হে আমার প্রতিপালক! আমার দুআ কবুল করে নিন।
ছ. হে আমার প্রতিপালক! যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল ঈমানদারকে ক্ষমা করুন।
১৫. সূরা হিজর : ‘হিজর’ হল ছামূদ জাতির আবাসভূমির নাম। ছামূদ জাতি রাসূলগণের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল এবং আল্লাহর নিদর্শন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। ফলে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ধ্বংস করে দেন। সূরাটির ৮০-৮৪ নম্বর আয়াতসমূহে হিজরবাসী তথা ছামূদ জাতি সম্পর্কে কিছু কথা বলা হয়েছে।
আলকাউসার