রোযার কথা মনে থাকুক বছরজুড়ে
রমযানুল মোবারক শেষ হয়ে গেল। আল্লাহর মুর্কারাব ও নেককার বান্দারা রমযান আসার আগেই তার আপেক্ষায় থাকেন। প্রস্তুতি নিতে থাকেন। রমযান যখন শেষ হয়ে যায়, খুব স্বাভাবিক কারণেই তাদের কষ্ট হতে থাকে। তবে এটাও স্বাভাবিক কথা যে, রমযান আসবে, যাবে। দুনিয়ার মধ্যেও অনেককে ইস্তেকবাল করতে হয়, আবার মন না চাইলেও তাকে বিদায় দিতে হয়। আপনজনকে বিদায় দেওয়ার অনুভূতি যেমন কষ্টের, প্রিয় কিছুকে হারিয়ে ফেলার অনুভূতিও তেমনই হৃদয়বিদারক। তবে না চাইলেও যেমনিভাবে মানুষকে এই কষ্টের স্বাদ নিতে হয় তেমনি সে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি বা বস্তুর স্মৃতি ধারণ করে সান্ত্বনা খোঁজারও চেষ্টা করে। রমযানও যাচ্ছে, বিদায় হচ্ছে। তারও এরকম বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে; সেগুলোর কিছুটাও যদি আমরা রোযার পরেও ধারণ করে রাখতে পারি, তাহলেই সার্থকতা।
রমযানের কিছু আখলাক ও গুণ-বৈশিষ্ট্য আছে, যেগুলো মানুষ অন্য সময় না করতে পারলেও রমযানে অন্তত অর্জন করে থাকে। এটি সর্বজনীন গুণ। এর কিছু তো এমন বিষয়, যা আসলে মুসলমানদের জন্য সব সময়েই করণীয়। রমযানে সেগুলো আরো গুরুত্ব সহকারে করা হয়ে থাকে। সে গুণাবলির কিছু যদি সামনের এগার মাসেও ধারণ করা যায়, তাহলে রমযানের স্মৃতিও বাকি থাকবে এবং জীবন যাপন ইসলামের অধিক মুওয়াফেক হবে।
সবর
তেমনই একটি বৈশিষ্ট্য হল সবর। সবর রোযাদারের অন্যতম গুণ। যে আখলাকগুলো হাসিল করার জন্য ইসলাম মানুষকে উৎসাহিত করে এবং উদ্বুদ্ধ করে, বরং নিদের্শ করে, সবর তার অন্যতম। সবরের এই গুণটি পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায় রোযাদারের মধ্যে। চাই সে উঁচু মানের রোযাদার হোক বা সাধারণ মানের, অধিক তাকওয়াওয়ালা হোক আর কম তাকওয়াওয়ালা। সবরের গুণটা তার মধ্যে পরিপূর্ণই থাকে।
মুহাক্কিক আলেমগণ সবরের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এর কিছু প্রকারভেদ উল্লেখ করেছেন।
এক. الصبر على الطاعة -ইবাদতের ওপর সবর করা। আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তে হয়। মসজিদে আসতে হয়। রোযা রাখতে হয়। যাকাত দিতে হয়। এই ধরনের ইবাদত করতে গিয়ে মানুষের শারীরিক প্রস্তুতিসহ অনেক প্রস্তুতি লাগে। ইবাদত করার জন্য একটা ধৈর্য লাগে, সবর লাগে।
দুই. الصبر عن المعصية -শরীয়ত অনেক কিছু থেকেই মুসলমানদের নিষেধ করেছে। এসব থেকে বাঁচতে হলে কষ্ট হয়। তো কষ্ট হলেও ওই নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে বিরত থাকা। এটা ধৈর্য ও সবরের পরিচয়।
তিন. الصبر على المصائب والشدائد -মানুষের জীবনে কষ্ট-ক্লেশ আসে। কত রকমের আপদ-বিপদ আসে। জুলুম-নির্যাতন আসে। পরাধীনতার কষ্ট আসে। তখন তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এ কঠিন সময়েও শরীয়তের আওতাধীন থেকে ধৈর্য ও সবরের পরিচয় দেওয়া।
সবরের এ তিনটা গুণ একসঙ্গে রোযাদারের মধ্যে পাওয়া যায়। রোযাদার আল্লাহর বিধান পালন করে রোযা রাখছে। এক্ষেত্রে সে ইবাদতের ওপর সবর করল। এই রোযা রাখতে গিয়ে তাকে অনেক ধরনের গুনাহ-খাতা থেকে বেঁচে থাকতে হয়। এজন্য সবরের দ্বিতীয় প্রকারও তার মধ্যে পাওয়া গেছে। রোযা রাখতে গিয়ে দিনের মধ্যভাগ ও শেষভাগের দিকে তার কষ্ট-ক্লেশ অনেক হয়। তাহলে সবরের তৃতীয় প্রকারও তার কাছে পাওয়া গেল।
মোটকথা, সবরের গুণটি রোযাদারের মধ্যে উপস্থিত থাকে। এটা যে কোনো রোযাদারের মধ্যেই থাকে। যদি সে নিয়ত করে রোযা রাখে, তাহলে এসব গুণ তার মধ্যে একসঙ্গে পাওয়া যাবে। এই সবর ও ধৈর্য মানব জীবনের জন্য, বিশেষত একজন মুসলমানের জন্য অপরিহার্য বিষয়, যা তাকে তার জীবনে অনেক গোনাহ এবং অনেক সমস্যা থেকে রক্ষা করে। সে অযাচিত ক্রোধান্বিত হয়ে নিজের ক্ষতি টেনে আনা থেকে রক্ষা পায়। সেই সবরের পুরো শিক্ষাই রয়েছে রোযার মধ্যে। তো সবরের গুণটি যদি আমরা রোযার বাইরের এগার মাসেও ধারণ করে রাখতে পারি তাহলে একজন সত্যিকারের মুসলিম হিসাবে আমাদের পথচলা আরো সহজ এবং সফল হবে- ইনশাআল্লাহ।
সিদক ও সত্যবাদিতা
রোযাদারের আরেকটি গুণ সত্যবাদিতা। আরবীতে বলে صدق। সত্যবাদিতার অর্থ হল ভেতর ও বাহির এক হওয়া। এটা আমরা বরাবরই শুনি এবং পড়ি যে, রোযাদারকে আল্লাহ তাআলা বিশেষ সাওয়াব দেবেন। আল্লাহ তাআলা আলাদাভাবে নিজেই রোযাদারের প্রতিদান দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। এটি কেন? এটি ওই সত্যবাদিতার কারণে।
সত্যবাদিতা কীভাবে?
অন্যান্য ইবাদতের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই লৌকিকতা-মুনাফেকী সম্ভব। কিন্তু রোযার মধ্যে লৌকিকতা-মুনাফেকী সম্ভব না। কারণ রোযাদার মানুষের সামনে উপবাস থেকেও গোপন জায়গায় গিয়ে কিছু খেতে পারে। অন্তত ওয়াশরুমে গিয়ে পানি তো পান করতে পারে। কে দেখবে? নিজের খাস কামরা থাকলে সেখানে গিয়েও কিছু খেয়ে ফেলা সম্ভব। কিন্তু সেটা রোযাদার করে না। তার মানে হল, রোযাদার ভেতর ও বাহিরকে এক রাখে। সে নেফাকমুক্ত থাকে। বলতে গেলে সারাদিন ইবাদতে থেকেও সে রিয়ামুক্ত (লোকদেখানো মনোভাব থেকে মুক্ত) থাকে। যদিও ওপরে ওপরে মানুষও দেখে সে রোযাদার, কিন্তু আসলেই সে রিয়ামুক্ত। কারণ সে তো ভেতরে গিয়ে খাচ্ছে না। সিদ্ক ও সত্যবাদিতা মুমিনের অন্যতম গুণ। আর তা একজন রোযাদারের মধ্যে শতভাগ উপস্থিত। এই সত্যবাদিতার গুণ ধারণ করা একজন মুমিনের অবশ্যকর্তব্য।
মুমিন রোযার পরেও যখন তার অন্যান্য আমল ও কার্যক্রমে বা জীবন চলায় সত্যবাদিতাকে ধারণ করবে, নেফাক তথা কপটতা এড়িয়ে চলবে তখন মনে হবে সে যেন রোযার স্মৃতিই ধারণ করছে।
সুভাষী হওয়া
মুমিন বান্দা মানুষের সাথে কথাবার্তাতেও সুভাষী হবে। কাউকে গালমন্দ করবে না। এ নির্দেশটি রোযাদারের জন্য আরো বেশি প্রযোজ্য। রোযাদারের রোযা পরিপূর্ণতা পাওয়ার জন্য এবং তার সওয়াব পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য তাকে অনেক কিছু থেকেই বেঁচে থাকতে হয়। যেমন সে কাউকে বকা দিতে পারে না, গালমন্দ করতে পারে না। গীবত তথা পরনিন্দা করতে পারে না। রোযাদারের প্রতি নিদের্শ হল, কেউ তাকে বকা দিলে, গালমন্দ করলে সে বলবে-
إِنِّي صَائِمٌ
তোমার যথোপেযুক্ত জবাব দিতে পরলাম না। কারণ আমি রোযাদার মুমিন। মুমিন তার জীবন চলায় এ গুণ ধারণ করবে। রোযার পরেও সে বিনা কারণে তো নিজে অগ্রসর হয়ে কাউকে কটুকথা বা গালমন্দ করবেই না, কেউ তাকে গালমন্দ করলেও সে-
وَ اِذَا خَاطَبَهُمُ الْجٰهِلُوْنَ قَالُوْا سَلٰمًا.
[আর যখন অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে (অজ্ঞতামূলক) সম্বোধন করে, তখন তারা শান্তিপূর্ণ কথা বলে।]-এর উপর আমল করবে।
دینے کو جوابا اسے دے سکتا ہوں گالی + لیکن میری تذنیب اجازت نہیں دیتی
দানশীলতা
রোযার মাঝে মুমিন যেসব গুণ অর্জন করে তার মধ্যে একটি হল দানশীলতা। সামর্থ্য অনুযায়ী দান করা। অন্য মাসের তুলনায় রমযান মাসে যে কোনো মুমিনই একটু বেশিই দান করে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও রমযান মাসে সবচেয়ে বেশি দান করতেন। এমনিতেই তিনি أجود الناس (সর্বাধিক দানশীল) ছিলেন। আর রমযানে তো আরো বেশি ‘আজওয়াদ’ হয়ে যেতেন। এরই সূত্র ধরে মুমিনরা রমযান মাসে বেশি দান-খয়রাত করে থাকে। তো অন্য মাসেও যদি মুমিনের মাঝে এই দান-খয়রাতের কিছু গুণ বজায় থাকে (হোক রমযান মাসে বেশি, অন্য সময় কম) তাহলে মুসলিম সমাজব্যবস্থা একটি কাক্সিক্ষত সমাজব্যবস্থায় উন্নীত হবে। অর্থনৈতিকভাবে একটি ইনসাফপূর্ণ সমাজব্যবস্থা গঠিত হবে। একটি মুসলিম সমাজে যদি সামর্থ্য অনুযায়ী সবাই দান-খয়রাতের সিলসিলাকে বহাল রাখে, গরীব-দুঃখী ও অসামর্থ্যবান পাড়া-প্রতিবেশীর হকের প্রতি খেয়াল রাখে, তাদের ভরণ-পোষণ ও অন্যান্য প্রয়োজনে এগিয়ে আসে তাহলে সেটি হবে কাক্সিক্ষত কল্যাণকর মুসলিম সমাজ।
হিম্মত ও মজবুত ইরাদা
রোযাদারের গুণাবলির মধ্যে আছে হিম্মত এবং মজবুত ইরাদা বা প্রবল ইচ্ছাশক্তি। রোযাদার রোযা রাখতে পারত না, যদি তার ইচ্ছাশক্তি মজবুত না হত। আমরা তো কিছুটা সহজ রোযাই রাখি। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ফোন করে। অনেক দেশেই আঠার থেকে বাইশ ঘণ্টার রোযা হয়। কিন্তু আল্লাহর বান্দারা তা পালনেও কুণ্ঠাবোধ করে না। এটি কীভাবে সম্ভব? রাত-দিনের দু-তিনটি ঘণ্টা ছাড়া পুরো সময় পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা যেনতেন কথা তো নয়! তা মূলত সম্ভব হয় মুমিনের হিম্মত তথা ইচ্ছাশক্তি ও আল্লাহ তাআলার উপর তাওয়াক্কুল ও আস্থার উপর ভর করেই।
আশ্চর্যের কথা হল, এই ইচ্ছাশক্তি শিশুদের মধ্যেও দেখা যায়। ঘরে ঘরে ৬ থেকে ৭ বছরের বাচ্চারা রোযা রাখে না? তারা তো মা-বাবার অমতেও রোযা রাখে। মুসলমানের বহু ঘরেই ছোট শিশুদের জোর করে রোযা ভাঙাতে হয়। অন্য কিছু করুক আর না করুক রোযা রাখবেই। ইচ্ছাশক্তি ও হিম্মত তার মধ্যেও কাজ করে। এই ইচ্ছাশক্তি মুমিনের জীবন চলার জন্যে অতি জরুরি এবং সময় যত গড়াবে মুমিন তার ঈমানের ওপর মযবুত থাকার জন্য এই ইচ্ছাশক্তির বেশি মুহতাজ হবে। চারদিকে শুধু অন্ধকার। এখন যে অবস্থা বিরাজ করছে, এত বেশি আশা করার দরকার নেই যে, সহসাই আরো খুব ভালো অবস্থা আসবে। হাঁ, আল্লাহ তাআলা যখন দেন তখন হবে। অতএব সামনে মুমিনকে তার ঈমানের ওপর তার ওই হিম্মত ও ইচ্ছাশক্তির বলেই টিকে থাকতে হবে এবং মুমিনের অন্যান্য কার্যক্রম, তার জাগতিক কাজকর্ম, তার শিক্ষা, তার ব্যবসা, তার চাকরি-বাকরি, পড়াশোনা, আয়-রোযগার- এ সবকিছু সহীহভাবে চালাবার জন্যে ইচ্ছাশক্তি ও হিম্মতের প্রয়োজন অনেক বেশি।
মাওলানা শামছুল হক ফরীদপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহির কথা মশহুর আছে, তিনি বলতেন-
الهمة هى الاسم الأعظم -হিম্মত হল ইসমে আযম। রোযাদারের মধ্যে ওই হিম্মত পাওয়া যায়। ওই ইরাদা ও দৃঢ়তা পাওয়া যায়।
তো এই ইচ্ছাশক্তিকে জীবনের অন্য জায়গায়ও কাজে লাগানো চাই। মুমিন তার ইচ্ছাশক্তিকে রোযার মধ্যে যেমন কাজে লাগাতে পারে, তেমনি সে চাইলে জীবনের অন্যান্য অঙ্গনেও কাজে লাগাতে পারে। তাহলে এই ইচ্ছাশক্তি তার জন্য অনেক কঠিন কাজকেও সহজ করে দেবে। দ্বীনের উপর চলা এবং দুনিয়াতে চলা দুটোই তার জন্য সহজ হবে। তার ঘরোয়া সমস্যাবলি, তার প্রাতিষ্ঠানিক মুশকিলাত- এগুলোর সহীহ মুকাবেলার জন্য মজবুত ইচ্ছাশক্তির বিকল্প নেই।
তাহাজ্জুদ
তাহাজ্জুদ নামাযের ফযীলতের কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু বছরের অন্যান্য মাসে ভোর রাতে ঘুমের আরাম ত্যাগ করা কঠিন হওয়ায় অনেকের পক্ষেই তা আদায় করা হয়ে ওঠে না। পক্ষান্তরে রমযানে যেহেতু সাহরীর জন্য উঠতেই হয় তাই প্রায় সকল মুসলমানই এ মাসে কিছু না কিছু তাহাজ্জুদ পড়ে থাকে। ভোরে জাগ্রত হওয়ার এ বিষয়টিকে চলমান রাখতে পারলে তাতেও রমযানের স্মৃতি রক্ষা পাবে।
মুসাওয়াত
রোযার একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মুসাওয়াত তথা সাম্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে বিভিন্ন রঙের-আকৃতির বানিয়েছেন। বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছেন। কিন্তু তার রঙ কালো-সাদা যাই হোক, দেখতে সে খাটো বা লম্বা অথবা যেই চেহারারই অধিকারী হোক মানুষ হিসাবে তার মান সমান। কুরআনে কারীমে এবং হাদীসের কিতাবগুলোতে এ সাম্যের কথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। এক মানুষের উপর আরেক মানুষের যদি কোনো প্রাধান্য হয় তা শুধুই তাকওয়া তথা সৃষ্টিকর্তা প্রদর্শিত মানবিক গুণাবলির ভিত্তিতেই হতে পারে।
যাহোক, রোযা এই মুসাওয়াত তথা সাম্যের একটি বড় প্রতীক। ধনী-দরিদ্র সকল লোক রোযার দিনে পানাহার থেকে বিরত থাকে। যার ঘরে বেশি খাবার-দাবার নেই সে যেমন সামান্য কিছু খেয়ে রোযা রেখে দিনের বেলায় উপোস কাটায়, যার ঘরে খাদ্য-পানীয় সামগ্রীর অঢেল সমাহার রয়েছে সে ব্যক্তিও রোযার দিনে একই অবস্থানে থাকে। রোযা থেকে আমরা এই সাম্যের সুস্পষ্ট শিক্ষা পাই। আজকের পৃথিবীর যত হানাহানি, অকল্যাণ, অশান্তি এবং অনেক ক্ষেত্রেই নরকের পরিবেশ তা কি মূলত শ্রেণিবৈষম্য তথা মুসাওয়াতের অভাবেই নয়! শাসক-প্রজা, মনিব-চাকর, মালিক-শ্রমিক কত রকমের অযাচিত বৈষম্যই না পৃথিবীর কিছু লোক তাদের হীন স্বার্থের জন্য তৈরি করে রেখেছে। রোযার মুসাওয়াতের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে যদি সেই বৈষম্যগুলো ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসা যায় তবেই তো প্রতিষ্ঠিত হবে আসল ইনসানিয়ত তথা মানব সমাজ।
এরকম বহু আখলাক ও বৈশিষ্ট্য রোযা ও রোযাদারের মধ্যে বিদ্যমান থাকে। যদি সে এগুলোকে রোযার পরবর্তী সময়েও সক্রিয় রাখে তাহলে জীবনটা সুন্দর হবে। একজন মুমিনের যে কাক্সিক্ষত জীবন হওয়া দরকার সেটা হবে। আল্লাহ্ই উত্তম তাওফীক দাতা।
পুনশ্চ : আলকাউসারের সহকর্মীরা শাওয়াল সংখ্যায় কিছু লিখতে ফরমায়েশের পর ‘সংযম’ শিরোনামে একটি লেখা প্রায় প্রস্তুতই হয়ে গিয়েছিল। আমাদের সমাজে নিচ থেকে উপর পর্যন্ত এবং সাধারণ থেকে বিশেষ শ্রেণি পর্যন্ত অনেকের মাঝেই সংযমের বড় অভাব পরিলক্ষিত হয়। এ কারণে আমরা অনেকেই নিজের অজান্তেই এক সময় লজ্জিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হই। রোযা সংযমের শিক্ষা দেয়। তাই সর্বস্তরের দ্বীনের খাদেমগণ এবং ক্ষমতাবান শাসকশ্রেণি সকলের প্রতি সংযমের আহ্বান ছিল সেই লেখায়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে লেখাটি আর প্রকাশ করা হল না।
مرا دردیست اندردل اگر گویم زباں سوزد/ وگر دردل نہاں دارم دماغ واستخواں سوزد
مجھے تہذیب حاضر نے عطاکی ہے وہ آزادی/ کہ ظاہر میں تو آزادی ہے باطن میں گرفتاری
আরেকটি পঙ্ক্তি মনে পড়ে গেল-
اس کے قتل میں میں بھی چپ تھا میرا نمبر اب آیا/ میرے قتل میں آپ بھی چپ ہیں اگلا نمبر آپ کا ہے