হাশরের ময়দানে এক ব্যক্তির একটি নেকী কম পড়বে
সংগৃহিত
হাশরের ময়দানে এক ব্যক্তির একটি নেকী কম পড়বে, আরেক ব্যক্তির নেকীই মাত্র একটি...
কোনো কোনো বক্তার মুখে শোনা যায়-
হাশরের ময়দানে এক ব্যক্তির নেকী-বদী সমান হবে। এখন তার একটি নেকীর প্রয়োজন। একটি নেকী হলেই তার নেকীর পাল্লা ভারি হয়ে যায় এবং সে জান্নাতে যেতে পারে।
তখন আল্লাহ বলবেন, যাও দেখ, কারো কাছে একটি নেকী পাও কি না। সে একটি নেকীর জন্য সারা হাশরের ময়দান ছুটতে থাকবে। নিজের পিতা-মাতার কাছে যাবে, স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সকলের কাছে যাবে, কেউ তাকে একটি নেকী দেবে না।
এদিকে এক ব্যক্তির একটিই নেকী। তার কাছে গিয়ে চাইলে সে বলবে, আমার নেকীই মাত্র একটি, তা দিয়ে আর এমন কী হবে, তুমি একটি নেকীর জন্য জান্নাতে যেতে পারছ না; ঠিক আছে, আমার এ নেকীটি তুমি নিয়ে নাও। তুমি তো অন্তত জান্নাতে যাও।
তখন ঐ ব্যক্তি এ নেকীটি নিয়ে আল্লাহর কাছে যাবে। আল্লাহ (জানেন তারপরও) বলবেন, কে এমন রহমদিল যে এই কঠিন মুহূর্তে তোমাকে নেকী দিল।
তখন সে বলবে, আপনার অমুক বান্দা দিয়েছে।
তখন আল্লাহ তাআলা ঐ বান্দার উপর খুশি হয়ে তাকেও মাফ করে দেবেন এবং উভয়কে জান্নাতে দাখেল করবেন।
এ কিসসাটি হাদীসের নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাবে পাওয়া যায় না। এর কোনো সনদও পাওয়া যায় না। গাযালী রাহ. ‘আদ্দুররাতুল ফাখিরাহ ফী কাশফি উলূমিল আখিরাহ’ গ্রন্থে (পৃ. ৬৬-৬৭) সনদবিহীন কিসসাটি উল্লেখ করেছেন। তাঁর বরাতে আরো কিছু গ্রন্থেও তা এসেছে; কিন্তু কেউ এর নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র ও সনদ উল্লেখ করেননি। আর গাযালী রাহ.-ও কিসসাটি উল্লেখ করার সময় নবীজী বলেছেন বা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- এমন কোনো কথা বলেননি; কেবলই কিসসাটি উল্লেখ করেছেন। অথচ এমন কথা কুরআন-হাদীসের মাধ্যম ছাড়া জানা সম্ভব নয়।
যাইহোক, আলোচ্য কিসসাটিও সনদবিহীন হওয়া ছাড়াও কুরআনের বহু আয়াতের খেলাফ। কুরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে-
وَ اتَّقُوْا یَوْمًا لَّا تَجْزِیْ نَفْسٌ عَنْ نَّفْسٍ شَیْـًٔا وَّ لَا یُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌ وَّ لَا تَنْفَعُهَا شَفَاعَةٌ وَّ لَا هُمْ یُنْصَرُوْنَ .
এবং সেই দিনকে ভয় কর, যেদিন কেউ কারো কোনো কাজে আসবে না, কারো থেকে কোনোরূপ মুক্তিপণ গৃহীত হবে না, কোনো সুপারিশ কারো উপকার করবে না এবং তারা কোনো সাহায্যও লাভ করবে না। -সূরা বাকারা (০২) : ১২৩
আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে- কেউ কারো কোনো কাজে আসবে না। কারো থেকে কোনো সাহায্যও লাভ হবে না।
এমনকি পিতা ও সন্তানও একে-অপরের সাহায্য করতে পারবে না। ইরশাদ হয়েছে-
يٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْ وَ اخْشَوْا یَوْمًا لَّا یَجْزِیْ وَالِدٌ عَنْ وَّلَدِهٖ وَلَا مَوْلُوْدٌ هُوَ جَازٍ عَنْ وَّالِدِهٖ شَیْـًٔا.
হে মানুষ! নিজ প্রতিপালক (এর অসস্তুষ্টি) থেকে বেঁচে থাক এবং সেই দিনকে ভয় কর, যখন কোনো পিতা তার সন্তানের উপকারে আসবে না এবং কোনো সন্তানেরও সাধ্য হবে না তার পিতার কিছুমাত্র উপকার করার। -সূরা লুকমান (৩১) : ৩৩
বরং ভাই আপন ভাই থেকে পালাবে। মা সন্তান থেকে, সন্তান মা থেকে...। সেখানে কীভাবে সাধারণ এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে নেকী দান করবে? ইরশাদ হয়েছে-
یَوْمَ یَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ اَخِیْهِ، وَ اُمِّهٖ وَ اَبِیْهِ، وَ صَاحِبَتِهٖ وَ بَنِیْهِ، لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ یَوْمَىِٕذٍ شَاْنٌ یُّغْنِیْهِ.
যেদিন মানুষ তার ভাই থেকেও পালাবে। এবং নিজ পিতা-মাতা থেকেও। এবং নিজ স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি থেকেও। (কেননা) সেদিন তাদের প্রত্যেকের এমন দুশ্চিন্তা দেখা দেবে, যা তাকে অন্যের থেকে ব্যস্ত করে রাখবে। -সূরা আবাসা (৮০) : ৩৪-৩৭
এ আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাসীর রাহ. লেখেন, ইকরিমা রাহ. বলেছেন-
...وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَلْقَى ابْنَهُ فَيَتَعَلَّقُ بِهِ فَيَقُولُ: يَا بُنَيَّ، أَيُّ وَالِدٍ كنتُ لَكَ؟ فَيُثْنِي بِخَيْرٍ. فيقولُ لَهُ: يَا بُنَيَّ، إِنِّي احْتَجْتُ إِلَى مِثْقَالِ ذَرَّةٍ مِنْ حَسَنَاتِكَ لَعَلِّي أَنْجُو بِهَا مِمَّا تَرَى. فَيَقُولُ وَلَدُه: يَا أَبَتِ، مَا أَيْسَرَ مَا طَلَبْتَ، وَلَكِنِّي أَتَخَوَّفُ مِثْلَ الَّذِي تَتَخَوَّفُ، فَلَا أَسْتَطِيعُ أَنْ أُعْطِيَكَ شَيْئًا.
মানুষ সেদিন নিজ সন্তানের কাছে গিয়ে বলবে- আমি তোমার জন্য পিতা হিসেবে কেমন ছিলাম?
সন্তান উত্তরে বলবে- আপনি ভালো পিতা ছিলেন।
পিতা বলবে, আজ আমার সামান্য নেকীর প্রয়োজন; যার মাধ্যমে আমি এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তি লাভ করব। তোমার কাছে সামান্য নেকী হবে?
সন্তান বলবে, আপনি যা চেয়েছেন তা তো তেমন বড় কিছু নয়, কিন্তু আপনার মতো আমিও ভয়ে আছি। আমি আপনাকে কোনো নেকী দিতে পারব না। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, আলোচ্য আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
যাইহোক, এক নেকী কেন্দ্রিক আলোচ্য কিসসাটি প্রমাণিত নয়; এক নেকী কেন্দ্রিক প্রমাণিত একটি বর্ণনা হল-
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের এক লোককে জনসমক্ষে হাজির করবেন। তার সামনে (আমলনামার) নিরানব্বই দস্তাবেজ খুলে রাখবেন। প্রতিটি দস্তাবেজ হবে দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত লম্বা। অতঃপর তিনি সেই বান্দাকে বলবেন, তুমি কি এখানকার কোনো কিছু অস্বীকার করো? আমলনামা লিপিবদ্ধকারী আমার ফিরিশতা কি তোমার উপর জুলুম করেছে?
সে বলবে, না, হে আমার রব!
তখন আল্লাহ বলবেন, তোমার কি কোনো ওজর আছে, কিংবা কোনো ‘হাসানাহ-নেক আমল’ আছে?
একথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে যাবে এবং বলবে, না, হে আমার রব!
তখন আল্লাহ বলবেন-
بَلَى إِنَّ لَكَ عِنْدَنَا حَسَنَةً، فَإِنَّه لَا ظُلْمَ عَلَيْكَ اليَوْمَ، فَتُخْرَجُ بِطَاقَةٌ فِيهَا: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُولُه.
হাঁ, আমার কাছে তোমার একটি ‘হাসানাহ- নেক আমল’ রয়েছে। আজ তোমার প্রতি কোনোরূপ জুলুম করা হবে না। এই বলে একটি চিরকুট বের করা হবে। তাতে লেখা-
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُولُه.
এরপর আল্লাহ বলবেন-
احْضُرْ وَزْنَكَ.
তুমি তোমার আমলনামা ওজনের স্থানে উপস্থিত হও।
সে তখন এ দেখে বলবে-
يَا رَبِّ، مَا هَذِهِ الْبِطَاقَةُ مَعَ هَذِهِ السِّجِلَّاتِ؟
হে আমার রব! এই এত এত দস্তাবেজের সামনে এ ছোট্ট চিরকুট কী কাজে লাগবে?!
তখন বলা হবে-
إِنَّكَ لَا تُظْلَمُ.
তোমার প্রতি কোনোরূপ জুলুম করা হবে না।
নবীজী বলেন-
فَتُوضَعُ السِّجِلَّاتُ فِي كَفَّةٍ وَالبِطَاقَةُ فِي كَفَّةٍ، فَطَاشَتِ السِّجِلَّاتُ وَثَقُلَتِ البِطَاقَةُ، فَلَا يَثْقُلُ مَعَ اسْمِ اللهِ شَيْءٌ.
এরপর (নিরানব্বই) দস্তাবেজ এক পাল্লায় রাখা হবে আর কালিমা লেখা চিরকুট আরেক পাল্লায় রাখা হবে। তখন কালিমা লেখা চিরকুটই ভারি হবে। আসলে কোনো কিছুই আল্লাহর নামের চেয়ে ভারি হবে না। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৯৯৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৪৩০০; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৯৩৭; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২২৫
Online_News_Portal_24