ইস্তিগফারের গুরুত্ব ও ফজিলত
আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা বান্দাকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যায়, অসম্পূর্ণ থেকে পরিপূর্ণতার পথ দেখায়। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় ছোট-বড় নানা ভুলে জড়িয়ে যাই আমরা। এ জন্য এসব ভুল থেকে ক্ষমা মার্জনার জন্য আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করা। ইস্তিগফারের আছে বহুবিধ ফায়দা।
কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা ইস্তিগফারসংক্রান্ত অনেক আয়াত নাজিল করেছেন। কোনো আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইস্তিগফারের আদেশ করেছেন, কোথাও ইস্তিগফারকারীদের প্রশংসা করেছেন, কোথাও দ্রুত গতিতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার কথা বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত, ১৯৯)
অন্যত্রে বলেন, ‘এবং নিজ প্রতিপালকের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও সেই জান্নাত লাভের জন্য একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হও, যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতুল্য। তা সেই মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩)
ইস্তিগফার নবীদের বৈশিষ্ট্য
সব নবী আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করতেন। সেসব নবীর ইস্তিগফারের কথা আল্লাহ তাআলা কোরআনের অনেক আয়াতে বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, (সুলায়মান (আ.) বলল) হে আমার পালনকর্তা, আমাকে মাফ করুন এবং আমাকে এমন সাম্রাজ্য দান করুন, যা আমার পরে আর কেউ পেতে পারবে না। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (সুরা : সাদ, আয়াত : ৩৫)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করে থাকি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩০৭)
পাপ মোচন হয়
ইস্তিগফারের মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয় এবং আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বিশেষ মর্তবা দান করেন। আবু জর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা হাদিসে কুদসিতে ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি একটি নেক কাজ করবে তার জন্য আছে ১০ গুণ প্রতিদান, আর আমি তাকে আরো বৃদ্ধি করে দেব।
আর যে লোক একটি খারাপ কাজ করবে তার প্রতিদান সে কর্মের সমান অথবা আমি তাকে মাফ করে দেব। যে লোক আমার প্রতি এক বিঘত এগিয়ে আসে আমি তার প্রতি এক হাত অগ্রসর হই। আর যে লোক আমার প্রতি এক হাত এগিয়ে আসে আমি তার দিকে দুহাত (এক গজ) অগ্রসর হই। যে লোক আমার নিকট হেঁটে আসে আমি তার প্রতি দৌড়িয়ে আসি। যে লোক আমার সঙ্গে কাউকে কোনো বিষয়ে অংশীদার স্থাপন ছাড়া পৃথিবীতুল্য গুনাহ নিয়েও আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাহলে আমি তার সঙ্গে অনুরূপ পৃথিবীতুল্য মার্জনা নিয়ে সাক্ষাৎ করি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৭২৬)
রিজিক বৃদ্ধির মাধ্যম
যে বান্দা প্রতিনিয়ত ইস্তিগফার করবে আল্লাহ তাআলা তাকে অস্বাভাবিক রিজিক দান করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কোরো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। ...তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের জন্য সৃষ্টি করবেন উদ্যান আর তোমাদের জন্য নদ-নদীর ব্যবস্থা করে দেবেন। (সুরা : নুহ, আয়াত : ১০, ১২)
অন্তর পরিশুদ্ধ হয়
ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে দেন অন্তরে যত পাপ-পঙ্কিলতা আছে তা দূর করে দেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো চিহ্ন পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহর কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তাওবা করে তার অন্তর তখন পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহ তাআলা যার বর্ণনা করেছেন, ‘কখনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনে জং (মরিচা) ধরিয়েছে।’ (সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত ১৪)। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৩৪)
শক্তি সামর্থ্য জোগায়
যে বান্দা ইস্তিগফার করে আল্লাহ তাআলা তার শরীরে বিশেষ শক্তি দান করেন। যেমনটি আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে বলেছেন, ‘হে আমার জাতি, তোমাদের রবের কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো, অতঃপর তারই দিকে মনোযোগী হও। তিনি তোমাদের প্রতি আকাশ থেকে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের বর্তমান শক্তির সঙ্গে বাড়তি আরো শক্তি জোগাবেন। সুতরাং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৫২)
দুশ্চিন্তা দূর হয়
ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার অন্তর থেকে যাবতীয় দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি দূর করে দেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার পড়লে আল্লাহ তাকে প্রত্যেক বিপদ থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৫১৮)
যে সময় ইস্তিগফার করবে
তাওবা-ইস্তিগফার যেকোনো সময়, যেকোনো মুহূর্তে করা যায়। তবে বিশেষ কিছু সময় ও স্থান রয়েছে সে সময় ইস্তিগফার করলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
গুনাহের পর : অপরাধ করার পর সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। অনুশোচনার সঙ্গে বান্দা যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করে ফেলে বা নিজের প্রতি জুলুম করে বসে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে অবশ্যই আল্লাহকে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুই পাবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১১০)
নেক আমলের পর : নেক আমলের পর ইস্তিগফার করা। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা যেকোনো নেক আমল করার পর এ কথা অনুভব করেন যে যেভাবে আমল করার কথা ছিল পূর্ণরূপে সেভাবে করতে পারিনি, তাই এর জন্য বিশেষভাবে ইস্তিগফার করতেন। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ শেষ করে তিনবার ইস্তিগফার করতেন।...হাদিস বর্ণনাকারী ওয়ালিদ বলেন, আমি আওজাই (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি (সা.) কিভাবে ইস্তিগফার করতেন। তিনি বললেন, তিনি (সা.) বলতেন, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১২২১)
এ ছাড়া চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ, ফজরের সময় বিশেষভাবে এবং তাহাজ্জুদের সময় ইস্তিগফারের কথা হাদিসে এসেছে।
মুসলিম বাংলা