খতমে নবুওয়াত সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস
হযরত ছাওবান রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যাবাদী আত্মপ্রকাশ করবে। তাদের প্রত্যেকে নবী বলে দাবী করবে। জেনে রেখ, আমি হলাম খাতামুন্নাবিয়ীন, আমার পরে আর কোন নবী নেই।’’ -সুনানে তিরমিযী ২/৪৫; মুসনাদে আহমদ ৬/৩৭৩ হা. ২১৮৮৯
হযরত আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.কে বললেন, ‘‘মুসার পক্ষ থেকে হারুন যে দায়িত্ব, মর্যাদা, আর সম্পর্কের স্থানে ছিলেন আমার পক্ষ থেকে তুমি হলে সেই স্থানে, তবে পার্থক্য এই যে, আমার পরে কোন নবী নেই।’’ -সহীহ বুখারী ২/৬৩৩; সহীহ মুসলিম ২/২৭৮; সুনানে তিরমিযী ২/২১৩
তবুক যুদ্ধে যাত্রাকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.কে মদীনায় তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন। আলী রা. জিহাদে না যেতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে উপরোক্ত কথা বলে সান্ত্বনা প্রদান করেন।
যুবায়ের ইবনে মুত্বয়িম রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমদ, আমি মাহী, অর্থাৎ আমার মাধ্যমে কুফরী বিমোচিত হবে; আমি হাশির, আমার (যুগের) পরই মানুষকে হাশরের মাঠে একত্র করা হবে এবং আমি হলাম আ‘কিব অর্থাৎ যার পরে আর কোন নবী নেই।’’ -সহীহ বুখারী ১/৫০০, ২/৭২৭; সহীহ মুসলিম ২/২৬১; সুনানে তিরমিযী ২/১১১
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার ও আমার পূর্ববর্তী নবীদের দৃষ্টান্ত এই যে, এক ব্যক্তি একটি সুরম্য গৃহ নির্মাণ করল তবে এক কোণে একটি মাত্র ইটের স্থান শূন্য রাখল। লোকেরা গৃহটির চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল এবং তার সৌন্দর্যে চমৎকৃত হতে লাগল। তবে ওই কোণটি দেখে তারা বলতে লাগল, ‘এই ইটটি কেন বসানো হয়নি?’ দৃষ্টান্ত উপস্থাপনের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমিই হলাম সেই ইট এবং আমি হলাম খাতামুন্নাবিয়ীন।’’ -সহীহ বুখারী ১/৫০১; সহীহ মুসলিম ২/২৪৮
জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার ও আমার পূর্ববর্তী নবীদের দৃষ্টান্ত এই যে, এক ব্যক্তি গৃহ নির্মাণ করল এবং নির্মাণ কাজ সুচারুরূপে সমাপ্ত করল, তবে একটি ইটের স্থান শূন্য রেখে দিল। এবার লোকেরা তাতে প্রবেশ করল এবং তার নির্মাণ কুশলে চমৎকৃত হল। কিন্তু ওই শূন্য-স্থানটি দেখে বলতে লাগল, ‘এই একটি মাত্র ইটের স্থান যদি শূন্য না থাকত!’ এই দৃষ্টান্ত দেওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি হলাম সেই শূন্য-স্থানের ইট। আমি প্রেরিত হলাম এবং নবী আগমনের ধারা সমাপ্ত হল।’’ -সহীহ মুসলিম ২/২৪৮
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকেও উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (সহীহ মুসলিম ২/২৪৮)
পরিণতির কথা
কুরআন পাকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার বড় বড় প্রতাপশালী ও উৎপীড়ক জাতির ধ্বংস হয়ে যাওয়ার চিত্র পেশ করেছেন। বলেছেন, শক্তির জোর, ক্ষমতার অহং, সম্পদের দাপট এবং উপায়-উপকরণের প্রাচুর্য সব সময় বিভিন্ন জাতিকে আল্লাহর দেওয়া সীমারেখা অতিক্রম করে যেতে প্ররোচিত করেছে। ফেরাউন, নমরুদ, আদ, সামুদ, তাবাতাবায়ে ইয়ামান এবং শাহানে সাবার ঘটনাবলি কুরআন পাকে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ থেকে এমন উপলব্ধি গ্রহণ করা সঙ্গত নয় যে, তাদের এ পরিণতি, তাদের এ নাশ ও ভোগান্তি কেবল পেছনের জাতিসমূহের জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। দুনিয়ার কোনো যুগ ইতিহাসের কোন পৃষ্ঠা এবং যুগের কোনো পর্ব এসব ঘটনা এবং এসবের অপরিহার্য পরিণতি থেকে কখনো মুক্ত থাকতে পারবে না। ‘অতএব শিক্ষাগ্রহণ করো হে চক্ষুষ্মানেরা’। ইতিহাসের এটা কত বড় শিক্ষণীয় পরিণতি যে, সেই হিটলার, মুসোলিনি, সেই হেমরার, সেই গোয়েরং এবং সেই গোয়েবলস- যাদের মুখে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দকে পৃথিবী মনে করতো বীরদর্পী অগ্রসরতা, যাদের প্রতিটি অসম্ভব দাবিকে শুধু তাদের বলে দেওয়ার কারণে বিশ্বাস করে নিত, যাদের প্রভাব ও প্রতাপে পৃথিবীর প্রতিটি ভূখন্ড ভীতি ও আতংকে কেঁপে কেঁপে উঠতো এবং যাদের একেকটি পদক্ষেপে প্রতি মুহূর্তে দুনিয়া উলট-পালট হয়ে যেত- শেষ পর্যন্ত সেই মুহূর্তও এল যে, অসহায়ত্ব ও নিরাশা তাদের সব প্রত্যাশা শেষ করে নিয়েছিল। তাদের কেউ কেউ নিজের হাতে নিজের গলা কেটে ফেলেছে। কেউ পান করেছে বিষের পেয়ালা, কেউ বন্ধুর তরবারীর আঘাতে নিজে নিহত হয়েছে। ব্যাবিলনের মিনার ছিল যে বার্লিন সেটি পরিণত হয়েছে ধুলোর স্তূপে।
আল্লামা সাইয়েদ সোলায়মান নদভী রহ.
[শাযারাতে সোলায়মানী খ. ৩ পৃ. ৩৫৬]