রফয়ে ইয়াদাইনের মাসআলা
নামাজের শুরুতে তাকবীরে তাহরীমার সময়ে রফয়ে ইয়াদায়ন (দুই হাত ওঠানো) সর্বসম্মতিক্রমে সুন্নত। তবে রুকুতে যাওয়া এবং রুকু থেকে ওঠার সময় রফয়ে ইয়াদায়ন সুন্নত কি না? এ বিষয়ে উম্মাহর মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে। চার ইমামের মাঝে দুই ইমাম ওই দুই স্থানে রফয়ে ইয়াদায়নকে সুন্নত বলেছেন এবং অন্য দুই ইমাম না করাকে সুন্নত বলেছেন। বিভিন্ন মাযহাবের বিস্তারিত অবস্থান নিম্নরূপ:
ফকীহদের বিভিন্ন মাযহাব
(হানাফী মাযহাব) হানাফীদের নিকট রুকুতে যাওয়ার এবং রুকু থেকে ওঠার সময় রফয়ে ইয়াদায়ন মকরুহ অর্থাৎ শ্রেয়তার পরিপন্থী। ফতওয়ায়ে শামীতে আছে,
(قَوْلُهُ إلَّا فِيْ سَبْعٍ): أَشَارَ إلَىٰ أَنَّهُ لَا يُرْفَعُ عِنْدَ تَكْبِيْرَاتِ الْاِنْتِقَالَاتِ، خِلَافًا لِلشَّافِعِيِّ وَأَحْمَدَ، فَيُكْرَهُ عِنْدَنَا وَلَا يَفْسُدُ الصَّلَاةُ.
‘আদ-দুররুল মুখতার প্রণেতা তাঁর বক্তব্য: إلَّا فِيْ سَبْعٍ দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন যে, এক রুকন থেকে অন্য রুকনে প্রত্যাবর্তনের তাকবীরসমূহে হাত ওঠানো যাবে না। এ মাসআলায় ইমাম শাফিয়ী রহ ও ইমাম আহমদ (ইবনে হাম্বল) রহ-এর ভিন্নমত রয়েছে। সুতরাং হাত ওঠানো আমাদের নিকট মকরুহ, তবে নামাজ ফ|সেদ হয় না।’[1]
(মালিকী মাযহাব:) মালিকীদের নিকটও রুকুতে যাওয়া এবং রুকু থেকে ওঠার সময় রফয়ে ইয়াদায়ন মকরুহ। আল্লামা দারদীর রহ -এর আশ-শারহুস সগীরে আছে,
وَنُدِبَ رَفْعُ الْيَدَيْنِ مَعَ الْإِمَامِ أَيْ عِنْدَهُ لَا عِنْدَ رُكُوعٍ وَلَا رَفْعٍ مِنْهُ، وَلَا عِنْدَ قِيَامٍ مِنْ اثْنَتَيْنِ.
‘তাকবীরে তাহরীমার সময় রফয়ে ইয়াদায়ন মুস্তাহাব। রুকুতে যাওয়ার সময়, রুকু থেকে ওঠার সময় এবং দুই রকআতের পর তৃতীয় রকআতের জন্য ওঠার সময় মুস্তাহাব নয়।’[2]
আল্লামা আবদুর রহমান জাযীরী রহ কিতাবুল ফিকহি আলাল মাযাহিবিলি আরবাআয় লিখেছেন,
الْـمَالِكِيَّةُ قَالُوْا: رَفْعُ الْيَدَيْنِ حَذْوَ الْـمَنْكِبَيْنِ عِنْدَ تَكْبِيْرَةِ الْإِحْرَامِ مَنْدُوْبٌ، وَفِيْمَا عَدَا ذَلِكَ مَكْرُوْهٌ.
‘মালিকীরা বলেন, তাকবীরে তাহরীমার সময় দুই হাত দুই কাঁধ পর্যন্ত ওঠানো মুস্তাহাব। এছাড়া অন্য সময় মকরুহ।’[3]
(শাফিয়ী মাযহাব:) ইমাম শাফিয়ী রহ বলেন, রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে ওঠার সময় রফয়ে ইয়াদায়ন সুন্নতে মুআক্কাদা। কিতাবুল উম্ময়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা-এর রেওয়ায়েত বর্ণনা করে ইমাম শাফিয়ী রহ বলেন,
وَبِهَذَا نَقُوْلُ: فَنَأْمُرُ كُلَّ مُصَلٍّ إمَامًا أَوْ مَأْمُوْمًا، أَوْ مُنْفَرِدًا؛ رَجُلًا أَوْ امْرَأَةً؛ أَنْ يَرْفَعَ يَدَيْهِ إذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ، وَإِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوْعِ، وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنْ الرُّكُوْعِ.
‘এটিই আমাদের মাযহাব। সুতরাং আমরা নামাজিদের হুকুম দিই—তিনি ইমাম হোন কিংবা মুক্তাদী বা একাকী পুরুষ বা নারী—যে, তারা যখন নামাজ শুরু করে, যখন রুকুতে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলে এবং যখন রুকু থেকে স্বীয় মাথা উঠায় তখন নিজেদের দুই হাত ওঠাবে।’[4]
ইমাম নববী রহ শারহুল মুহাযযাবে লিখেছেন,
وَأَمَّا رَفْعُهُمَا فِيْ تَكْبِيْرَةِ الرُّكُوْعِ وَفِي الرَّفْعِ مِنْهُ، فَمَذْهَبُنَا أَنَّهُ سُنَّةٌ فِيْهِمَا.
‘আর রুকুর তাকবীরের সময় এবং রুকু থেকে মাথা ওঠানোর সময় রফয়ে ইয়াদায়ন আমাদের মাযহাব মোতাবেক উভয় ক্ষেত্রেই সুন্নত।’[5]
ইমাম শাফিয়ী রহ স্পষ্টভাবে বলেছেন, উপর্যুক্ত তিন স্থান ছাড়া নামাজে আর কোথাও রফয়ে ইয়াদায়ন নেই। অতএব তিনি লিখেছেন যে,
وَلَا نَأْمُرُهُ أَنْ يَرْفَعَ يَدَيْهِ فِيْ شَيْءٍ مِنْ الذِّكْرِ فِي الصَّلَاةِ الَّتِيْ لَـهَا رُكُوْعٌ وَسُجُوْدٌ إلَّا فِي هَذِهِ الْـمَوَاضِعِ الثَّلَاثِ.
‘আর আমরা রুকু-সাজদাবিশিষ্ট নামাজে উপর্যুক্ত তিন জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও তাকবীরের সময় নামাজিদেরকে রফয়ে ইয়াদায়নের নির্দেশ দিই না।’[6]
তবে শাফিয়ীদের নিকট উপর্যুক্ত তিন জায়গা ছাড়াও আরও এক জায়গায় রফয়ে ইয়াদায়ন মুস্তাহাব। আর সেটি হচ্ছে, তৃতীয় রকআতের শুরুতে। ইমাম নববী রহ শারহুল মুহাযযাবে লিখেখেন যে,
فَحَصَلَ مِنْ مَجْمُوْعِ مَا ذَكَرْتُهُ أَنَّهُ يَتَعَيَّنُ الْقَوْلُ بِاسْتِحْبَابِ رَفْعِ الْيَدَيْنِ إذَا قَامَ مِنْ الرَّكْعَتَيْنِ.
‘উল্লিখিত বক্তব্যের সারংসা হচ্ছে, দুই রকআতের পর যখন তৃতীয় রাকাআতের জন্য দাঁড়াবে সেই সময় রফয়ে ইয়াদায়নকে মুস্তাহাব মনে করা প্রয়োজন।’[7]
(হাম্বলী মাযহাব:) হাম্বলীদের মাযহাবও সেটিই যা ইমাম শাফিয়ী রহ-এর মাযহাব। আল্লামা জাযীরী রহ কিতাবুল ফিকহে লিখেছেন,
الْـحَنَابَلَةُ قَالُوْا: يُسَنُّ لِلرَّجُل وَالْـمَرْأَةِ رَفْعَ الْيَدَيْنِ إِلَىٰ حَذْوَ الْـمَنْكِبَيْنِ عِنْدَ تَكْبِيْرَةِ الْإِْحْرَامِ وَالرُّكُوعِ وَالرَّفْعِ مِنْهُ.
‘হাম্বলীরা বলেন, নর-নারী সকলের জন্য কাঁধ পর্যন্ত হাত ওঠানো তাকবীরে তাহরীমা, রুকুতে যাওয়া ও রুকু থেকে ওঠার সময় সুন্নত।’[8]
মতপার্থক্যের কারণ
এ রফয়ে ইয়াদায়ন প্রসঙ্গে বিভিন্ন ধরনের রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে। প্রথম যুগে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবিয়ীনে ইযাম -এর আমলও বিভিন্নতা ছিল। এজন্য প্রত্যেক মুজতাহিদ গভীর চিন্তা করেছেন যে, কোনটি প্রাধান্য পেতে পারে? যিনি যেটিকে ভালো মনে করেছেন সেটি অবলম্বন করেছেন।
রফয়ে ইয়াদায়নের রেওয়ায়েত
রফয়ে ইয়াদায়নের অসংখ্য রেওয়ায়েত রয়েছে। কিন্তু হাত ওঠানোর প্রবক্তাদের নিকট শক্তিশালী রেওয়ায়েতটি হচ্ছে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা -এর। বুখারী শরীফে যার ভাষ্য এসেছে এভাবে:
قَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ k: «رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ إِذَا قَامَ فِي الصَّلَاةِ رَفَعَ يَدَيْهِ، حَتَّىٰ يَكُونَا حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ، وَكَانَ يَفْعَلُ ذَلِكَ حِيْنَ يُكَبِّرُ لِلرُّكُوْعِ، وَيَفْعَلُ ذَلِكَ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوْعِ، وَيَقُوْلُ: «سَمِعَ اللهُ لِـمَنْ حَمِدَهُ». وَلَا يَفْعَلُ ذَلِكَ فِي السُّجُوْدِ».
‘হযরত (আবদুল্লাহ) ইবনে ওমর রা বলেন, রাসুলুল্লাহ সা -কে আমি দেখেছি যে, যখন তিনি নামাজে দাঁড়াতেন তখন তিনি তাঁর দুই হাত ওঠাতেন, এমনকি তা তাঁর দুই কাঁধ পর্যন্ত ওঠাতেন। হুযুর সা. এ আমলই করতেন যখন রুকুর জন্য তাকবীর বলতেন। আর এ আমলই করতেন যখন তিনি রুকু থেকে মাথা ওঠাতেন এবং سَمِعَ اللهُ لِـمَنْ حَمِدَهُ বলতেন। অবশ্য সাজদায় তিনি এ আমল করতেন না।’[9]
রফয়ে ইয়াদায়ন প্রসঙ্গে এ হাদীসটি সব থেকে শক্তিশালী বলে মনে করা হয়। রফয়ে ইয়াদায়নের বর্জনের রেওয়ায়েত
রফয়ে ইয়াদায়ন না করার বিষয়ে স্পষ্ট রেওয়ায়েত পাঁচটি। সেগুলোর একটি নিন্মরূপ:
عَنْ عَلْقَمَةَ، قَالَ: قَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْعُوْدٍ h: «أَلَا أُصَلِّيْ بِكُمْ صَلَاةَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ؟ فَصَلَّىٰ، فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلَّا فِيْ أَوَّلِ مَرَّةٍ».
‘হযরত আলকামা রহ বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.বলেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে রাসুলুল্লাহ সা -এর নামাজ পড়ে দেখাবো না? অতঃপর তিনি নামাজ পড়লেন এবং শুধু প্রথমবার রফয়ে ইয়াদায়ন করেছেন।’[10]
এ হাদীসকে ইমাম তিরমিযী রহ ‘হাসান’ বলেছেন।[11]
আর ইবনে হাযম যাহিরী (গায়রে মুকাল্লদ) তাঁর বিখ্যাত আল-মুহাল্লা কিতাবে এটি ‘সহীহ’ বলেছেন।[12] অবশ্য কোনো কোনো মহোদয় এ হাদীস নিয়ে তর্ক করেছেন, কিন্তু আল্লামা আহমদ মুহাম্মদ শাকের রহ. তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন,
وَهَذَا الْـحَدِيْثُ صَحِيْحٌ صَحَّحَهُ ابْنُ حَزْمٍ وَغَيْرُهُ مِنَ الْـحُفَّاظِ، وَمَا قَالُوْا فِيْ تَعْلِيْلِهِ لَيْسَ بِعِلَّةٍ.
‘এ হাদীস সহীহ, ইবনে হাযম ও অন্যান্য হাফিযে হাদীসগণ এটি সহীহ বলেছেন। লোকজন এতে যেসব ইল্লত সাব্যস্ত করে যা বলেছেন তা আদৌ কোনো ইল্লত (ত্রুটি) নয়।’[13]
রফয়ে ইয়াদায়নের মাসআলা যেহেতু অত্যন্ত বিব|দপূর্ণ বিষয়, সেহেতু হযরত (আবদুল্লাহ) ইবনে ওমর রা. বর্ণিত উল্লিখিত হাদীসটির ওপর নানা ধরনের বিতর্ক রয়েছে।[14] যেভাবে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা-এর উপর্যুক্ত হাদীসটির ওপর কিছু লোক বিতর্ক করেছেন। তবে আমাদের নিকট সঠিক বক্তব্য সেটিই যা আল্লামা ইবনে হুমাম (হানাফী) রহ হিদায়ার ব্যাখ্যাগ্রন্থে লিখেছেন,
وَالْقَدْرُ الْـمُتَحَقِّقُ بَعْدَ ذَلِكَ كُلِّهِ ثُبُوْتُ رِوَايَةِ كُلٍّ مِنْ الْأَمْرَيْنِ عَنْهُ ﷺ الرَّفْعُ عِنْدَ الرُّكُوْعِ وَعَدَمُهُ، فَيَحْتَاجُ إلَى التَّرْجِيْحِ لِقِيَامِ التَّعَارُضِ.
‘সকল তর্ক-বহসের পর গবেষণালব্ধ কথা হচ্ছে, উভয় রেওয়ায়েতই রাসুলুল্লাহ সা.থেকে প্রমাণিত। অর্থাৎ রুকুতে যাওয়ার সময় হাত ওঠানো ও না ওঠানো। সুতরাং বৈপরীত্যের অবস্থায় প্রাধান্য দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে।’[15]
একই সঙ্গে আমল হিসেবেও দুটো বক্তব্যই হুযুর আকরম সা. থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। ইমামুল আসর আল্লামা মুহাম্মদ আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ বলেন,
تَوَاتَرَ الْعَمَلُ بِهِمَا مِنْ عَهْدِ الصَّحَابَةِ وَالتَّابِعِيْنَ وَأَتْبَاعِهِمْ عَلَىٰ كِلَا النَّحْوَيْنِ، وَإِنَّمَا بَقِيَ الْاِخْتِلَافُ فِيْ أَفْضَلٍ مِنَ الْأَمْرَيْنِ.
‘দুটো বক্তব্যের ওপর নিরবচ্ছিন্নভাবে আমল হয়ে এসেছে সাহাবায়ে কেরাম, তাবিয়ীন ও তবয়ে তাবিয়ীনের যুগ থেকেই। তবে মতপার্থক্য শুধু এতটুকুতেই যে, এর মধ্যে কোনটি উত্তম।’[16]
রেওয়ায়েত কিভাবে এত বেশি এবং আমল কোনটির ওপর বেশি?
ঘটনা হচ্ছে, রফয়ে ইয়াদায়নের রেওয়ায়েত রফয়ে ইয়াদায়ন বর্জনের চেয়ে বেশি। এর প্রবক্তারা বলেন, অন্তত ৫০ জন সাহাবায়ে কেরাম থেকে রফয়ে ইয়াদায়নের রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে। কিন্তু এই কথাটা সঠিক নয়। কেননা এতে সেসব সাহাবীকেও গণ্য করা হয়েছে যাঁদের থেকে শুধু তাকবীরে তাহরীমার সময় রফয়ে ইয়াদায়নের কথা বর্ণিত। শাওকানী রহ -এর স্পষ্ট বক্তব্য অনুসারে সঠিক সংখ্যাটি হচ্ছে ২০।[17] আর নিয়েও বিত*র্কের সুযোগ আছে। ইমামুল আসর আল্লামা কাশ্মীরী রহ-এর গবেষণা অনুসারে অনেক আলোচনা- পর্যালোচনা শেষে ১৫ জন বা এর চেয়ে কম সাহাবীর নামই অবশিষ্ট থাকে।[18] আর রফয়ে ইয়াদায়ন ব'র্জনের স্পষ্ট রেওয়ায়েত অন্তত পাঁচটি। কিন্তু আমলের ক্ষেত্রে এর থেকে ভিন্ন। মদীনা মুনাওয়ারা যেটি অহীর অবতরণকেন্দ্র আর কুফা ইসলামের বীর সেন|নীদের ছাউনি, যেখানে ৫ শত সাহাবায়ে কেরামের বসবাসের কথা প্রমাণিত। এ দুই শহর সম্পর্কে পক্ষ-বি'প'ক্ষের সবাই স্বীকার করেন যে, কুফ|য় কেউই রফয়ে ইয়াদায়ন করতেন না।[19] আর মদীনার সংখ্য|গরিষ্ঠ রফয়ে ইয়াদায়ন করতেন না। সুতরাং ইমাম মালিক রহ. যিনি হযরত (আবদুল্লাহ) ইবনে ওমর রা-এর রেওয়ায়েতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন বাধ্য হয়েছেন যে, মদীনায় প্রচলিত আমলের প্রেক্ষাপটে রফয়ে ইয়াদায়ন ব'র্জনের মত অবলম্বনে। আর অন্যান্য ইসলামি রাজ্যে রফয়ে ইয়াদায়নকারীও ছিলেন আবার রফয়ে ইয়াদায়ন ব'র্জনকারীও ছিলেন।[20]
এমন প্রেক্ষাপটের কারণ হচ্ছে, যে আমল যত বেশি প্রচলিত হয়, সেই ব্যাপারে রেওয়ায়েতও হ্রাস পায়। কেননা পারস্পরিক প্রচলন স্বয়ংই শ'ক্তিশ|লী দলিল। এর উপস্থিতিতে রেওয়ায়েতেরও খুব একটা দরকার নেই। সুতরাং সেই কথা দ্বিধ|হীনভাবে মেনে নেওয়া উচিত যা আল্লামা ইবনে হুমাম রহ-এর বরাতে উল্লিখিত হয়েছে যে, হুযুর আকরম সা.থেকে রফয়ে ইয়াদায়নও প্রমাণিত এবং বর্জনও।
দৃষ্টিভঙ্গির মতপার্থক্য
মুজত|হিদীনে কেরাম যখন বিভিন্ন রেওয়ায়েত সম্পর্কে গবেষণা করেন তখন দুটি দৃষ্টিভঙ্গি সামনে আসে।
প্রথম দৃষ্টিভঙ্গি: কিছু (মুজতাহিদ) হযরাত মনে করেন, রফয়ে ইয়াদায়ন ক্রিয়াবাচক তাকবীর অর্থাৎ আমলী সম্মান এবং নামাজের জন্য শোভা। ইমাম শাফিয়ী রহ-কে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, রুকুতে যাওয়ার সময় রফয়ে ইয়াদায়ন করার কারণ কী? তিনি জবাবে বলেছিলেন যে,
مِثْلُ مَعْنَىٰ رَفْعِهِمَا عِنْدَ الِافْتِتَاحِ تَعْظِيمًا للهِ، وَسُنَّةً مُتَّبَعَةً يُرْجَىٰ فِيْهَا ثَوَابُ اللهِ، وَمِثْلُ رَفْعِ الْيَدَيْنِ عَلَى الصَّفَا وَالْـمَرْوَةِ وَغَيْرِهِمَا.
‘এর হেকমত সেটিই যা তাকবীরে তাহরীমার সময় রফয়ে ইয়াদায়নের। অর্থাৎ আল্লাহর সম্মান। আর এ কাজটি সুন্নত, যেখানে সওয়াবের আশা রয়েছে। যেমন সাফা-মারওয়া ও অন্যান্য স্থানে রফয়ে ইয়াদায়ন করা হয়।’[21]
হযরত সায়ীদ ইবনে জুবায়র রহ রফয়ে ইয়াদায়নের হেকমত বর্ণনা করে বলেছেন যে,
«إِنَّمَا هُوَ شَيْءٌ يُزَيِّنُ بِهِ الرَّجُلُ صَلَاتَهُ».
‘রফয়ে ইয়াদায়নের উদ্দেশ্য স্রেফ এটিই যে, এর মাধ্যমে মানুষ নিজের নামাজকে সুশোভিত করে।’[22]
যেসব (মুজত|হিদ) হযরাত এই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন তাঁরা রফয়ে ইয়াদায়নের রেওয়ায়েতকে প্রাধান্য দেন এবং এটিকে আমল হিসেবে গ্রহণ করেন।
দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গি: তা হচ্ছে, রফয়ে ইয়াদায়নের উদ্দেশ্য তাহাররুম (নিষেধ|জ্ঞা আরোপ), যেমন সালামের সময় ডানে-বামে মুখ ফেরানোর উদ্দেশ্য তাহালুল (বৈধতা স্বীকার)। সুতরাং নামাজের শুরুতে তাহাররুমে কওলী (মৌখিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ) অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমা এবং তাহাররুমে ফি’লী (কার্যকরী নিষেধাজ্ঞা আরোপ) অর্থাৎ রফয়ে ইয়াদায়নকে সমন্বিত করা হয়েছে। যাতে কথা ও আমলের মাঝে সুসাদৃশ্য হয়। এ জায়গাটা ব্যতিরেকে নামাজের ভেতর ক্রিয়াগত তাহাররুম কোনো অর্থ নেই। বরং, সেটি স্রেফ একটু নড়াচড়া মাত্র এবং নড়াচড়া নামাজের জন্য নেতিবাচক।
মুসলিম শরীফে এসেছে যে, হুযুর সা মসজিদে তশরীফ আনেন। তিনি দেখলেন যে, লোকজন নামজ পড়ছে এবং সালাম ফেরানোর সময় উভয় দিকে হাত দ্বারা ইশারা করছে। এ ব্যাপারে হযরত সা ইরশাদ করেন,
«عَلَامَ تُوْمِئُوْنَ بِأَيْدِيْكُمْ كَأَنَّهَا أَذْنَابُ خَيْلٍ شُمْسٍ؟ إِنَّمَا يَكْفِيْ أَحَدَكُمْ أَنْ يَضَعَ يَدَهُ عَلَىٰ فَخِذِهِ، ثُمَّ يُسَلِّمُ عَلَىٰ أَخِيْهِ مَنْ عَلَىٰ يَمِيْنِهِ وَشِمَالِهِ».
‘কি ব্যাপার, তোমরা পাগল| ঘোড়|র মতো হাতে এমনভাবে ইঙ্গত করছ যে! তোমাদের জন্য এটুকু যথেষ্ট যে, হাত রানের ওপর রাখবে এবং ডান-বামের ভাইদের সালাম করবে।’[23]
এছাড়া তিরমিযী শরীফের রেওয়ায়েতে নামাজের হাকীকত এই বলা হয়েছে,
«الصَّلَاةُ مَثْنَىٰ مَثْنَىٰ، تَشَهَّدُ فِيْ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ، وَتَخَشَّعُ، وَتَضَرَّعُ، وَتَمَسْكَنُ، وَتُقْنِعُ يَدَيْكَ، يَقُوْلُ: تَرْفَعُهُمَا إِلَىٰ رَبِّكَ، مُسْتَقْبِلًا بِبُطُوْنِهِمَا وَجْهَكَ، وَتَقُوْلُ: يَا رَبِّ يَا رَبِّ، وَمَنْ لَـمْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَهُوَ كَذَا وَكَذَا».
‘নামাজ দুই দুই রকআত। অর্থাৎ প্রতি দুই রকআতান্তে বৈঠক হবে, (নামাজে রয়েছে) একাগ্রতা, বিনয় প্রকাশ, আহাজারি করা ও দীনহীন হওয়া। আর তুমি তোমার দুই হাত পরওয়ারদেগারের সামনে এমনভাবে ওঠাবে যে, তালু চেহেরার দিকে হবে আর তুমি বলবে, হে আমার প্রভু, হে আমার প্রভু, যে এমনটি করল না, সে এমন এমন হবে। (অর্থাৎ অপ্রিয় বান্দা হবে এবং তার নামাজ অপূর্ণ হবে।)’[24]
এই রেওয়ায়েতে নামাজের যে হাকীকত বর্ণনা করা হয়েছে, তা একথারই দাবি রাখে যে, নামাজে বেশি বেশি ধীর-স্থিরতা বজায় রাখতে হবে। আর নামাজে বারবার হাত ওঠানো স্পষ্টতই এ উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে। যেসব (মুজত|হিদ) হযরাত এ দৃষ্টিভঙ্গি রাখেন তাঁরা রফয়ে ইয়াদায়ন ব'র্জনের রেওয়ায়েতসমূহকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
মতপার্থক্যের দ্বিতীয় কারণ
মতপার্থক্যের এক কারণ এও যে, মুজত|হিদীনের মাঝে এ ব্যাপারে মতপার্থক্য আছে যে, হুযুর আকরম সা-এর প্রথম আমল কোনটি ছিল, আর শেষ আমল কোনটি? অর্থাৎ রফয়ে ইয়াদায়ন আসল, নাকি রফয়ে ইয়াদায়ন ব'র্জন করা আসল? কিছু হযরাতের ধারণা হচ্ছে, প্রথম দিকে রফয়ে ইয়াদায়ন শুধু তাকবীরে তাহরীমার সময় ছিল। অতঃপর পর্যায়ক্রমে তা অন্যান্য স্থানেও পরিবর্ধিত হয়েছে। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ এর বিপরীত; প্রথম থেকে নামাজে প্রতি তাকবীরের সময় রফয়ে ইয়াদায়ন করা হত। পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে সেটি বিলু'প্ত করা হয় এবং শুধু তাকবীরে তাহরীমার সময় জারি থাকে। সুতরাং হুযুর আকরম সা-এর সর্বশেষ আমল ছিল রফয়ে ইয়াদায়ন ব'র্জন।
এই দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গি সর্বাধিক সঠিক বলে প্রতীয়মান। কেননা হাদীসসমূহ পর্যালোচনা করলে নিম্নবর্ণিত স্থানে রফয়ে ইয়াদায়নের উল্লেখ পাওয়া যায়:
শুধু তাকবীরে তাহরীমার সময় (যেমন- ইবনে মাসউদ -এর বর্ণনা)।[25] রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে ওঠার সময় (যেমন ইবনে ওমর h-এর রেওয়ায়েত)।[26]
সাজদায় যাওয়ার সময়ও (নাসায়ী শরীফ: ১/১৬৫, মালিক ইবনে হুয়ায়রিস h-এর হাদীস)।[27] উভয় সাজদার মাঝখানেও (আবু দাউদ শরীফ: ১/১০৮; নাসায়ী শরীফ: ১/১৭২, ইবনে আব্বাস h-এর হাদীস)।[28] দ্বিতীয় রাকআতের শুরুতেও (আবু দাউদ শরীফ: ১/১০৫, ওয়ায়িল ইবনে হুজর h-এর হাদীস)।[29] তৃতীয় রকআতের শুরুতেও (বুখারী শরীফ: ১/১০২, ইবনে ওমর রহ-এর হাদীস)।[30] প্রতিটি উঁচুনিচু হওয়ার ক্ষেত্রে (عِنْدَ كُلِّ خَفْضٍ وَرَفْعٍ, ইবনে মাজাহ: পৃ. ৬২, উমায়র ইবনে হাবীব h-এর হাদীস, তাঁর ভাষ্য হচ্ছে, «يَرْفَعُ يَدَيْهِ مَعَ كُلِّ تَكْبِيرٍْ»)।[31]
রফয়ে ইয়াদায়নের এসব জায়গার কথা হাদীসের কিতাবসমূহে উল্লিখিত আছে।
কিন্তু ইমাম শাফিয়ী রহ ও ইমাম আহমদ (ইবনে হাম্বল) রহ শুধু তিনটি জায়গায় রফয়ে ইয়াদায়নকে সুন্নত মনে করেন। অবশিষ্ট জায়গাসমূহে বিলু'প্ত বলে ধারণা করেন। অতএব বিলু'প্তিকে এসব হযরাতও স্বীকার করে নিয়েছেন। অর্থাৎ উল্লিখিত সাতটি জায়গার পাঁচ জায়গায় রফয়ে ইয়াদায়নের প্রবক্তাগণও বিলু'প্তি স্বীকার করেন। একটি জায়গা অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমার সময়ে রফয়ে ইয়াদায়নের ব্যাপারে সকলেই সর্বসম্মত যে, এর বিলু'প্তি হয়নি।
এখন মতপার্থক্য হচ্ছে শুধু দ্বিতীয় অবস্থায় অর্থাৎ রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে ওঠার সময় রফয়ে ইয়াদায়ন বলবৎ আছে নাকি বিলু'প্ত হয়েছে? দুজন ইমাম বলেন, এ দুই জায়গায় রফয়ে ইয়াদায়ন বিলু'প্ত হয়নি, বরং বলবৎ আছে। অন্য দুজন ইমাম বলেন, এই দুই জায়গায়ও রফয়ে ইয়াদায়ন বিলু'প্ত হয়ে গেছে।
আমরা যদি দৃষ্টিভঙ্গির এ মতপার্থক্য অনুধাবন করতে চাই এবং জানতে চাই যে, কোন দৃষ্টিভঙ্গিটি সঠিক? তাহলে আমাদেরকে একটি দৃষ্টান্তের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে হবে। তা হচ্ছে এই যে, একটি বিশাল প্রাসাদ সম্পর্কে আমাদের সামনে বিভিন্ন রিপোর্ট রয়েছে, (১) একটি রুমে বিদ্যুৎ আছে, (২) তিনটি রুমে বিদ্যুৎ আছে, (৩) চারটিতে, (৪) পাঁচটিতে, (৫) ছয়টিতে, (৬) সাতটিতে ও (৭) প্রতিটি রুমেই বিদ্যুৎ রয়েছে।
রিপোর্টের এ বিভিন্নতাকে দূর করার দুটিই পদ্ধতি আছে। যদি অবস্থা হয় যে, ক্রমান্বয়ে বিদ্যুৎ বাড়ানো হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে সর্বশেষ রিপোর্টটি গ্রহণ করতে হবে যে, প্রত্যেক রুমেই বিদ্যুৎ আছে এবং অন্যান্য রিপোর্ট সম্পর্কে বলতে হবে যে, এগুলো প্রথম দিকের রিপোর্ট, যখন ওসব রুমে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। আর যদি অবস্থা হয় ভিন্ন অর্থাৎ বিদ্যুৎ ক্রমান্বয়ে হ্রাস করা হয়েছে, তাহলে আমাদের এক রুম বিশিষ্ট রিপোর্টটি গ্রহণ করতে হবে এবং বাকিগুলোর ব্যাপারে বলতে হবে, তা প্রথম দিকের, যখন এসব রুমেও বিদ্যুৎ ছিল, কিন্তু পরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
উপর্যুক্ত দৃষ্টান্তের আলোকে যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি শুধু দুটোই হতে পারে, হয় শুধু তকবীরে তাহরীমার সময় রফয়ে ইয়াদায়ন মানতে হবে। অন্যান্য রেওয়াতে সম্পর্কে একথা বলা হবে যে, সেসব রেওয়ায়েত যদিও সহীহ, কিন্তু সেগুলো প্রথম দিকের, যা পরবর্তী সময়ে বিলু'প্ত হয়ে গেছে। অথবা প্রতিটি উঁচুনিচুতে রফয়ে ইয়াদায়নকে মেনে নিতে হবে এবং অবশিষ্ট রেওয়ায়েত সম্পর্কে একথাই বলা হবে যে, সেগুলো প্রথম দিকের, সে সময় শুধু ওইসব জায়গাতেই রফয়ে ইয়াদায়ন ছিল। মধ্যবর্তী কোনো রেওয়ায়েত গ্রহণের যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নেই।
ইমাম আবু হানিফা রহ ও ইমাম মালিক রহ মনে করেন, রফয়ে ইয়াদায়ন ক্রমান্বয়ে সমাপ্ত করা হয়েছে। শেষে শুধু একটি জায়গায়ে বজায় রয়েছে। তাঁদের এ অনুভব এ কারণেই গ্রহণযোগ্য যে, অন্য দুজন ইমামও সাধারণভাবে বিলুপ্তিকে স্বীকার করেছেন।
ইমাম শাফিয়ী রহ ও ইমাম আহমদ (ইবনে হাম্বল) রহ-এর দৃষ্টিভঙ্গি এই কারণে গ্রহণযোগ্য নয় যে, তারা একদিকে বিলু'প্তিকে স্বীকার করেন, অন্য দিকে সর্বশেষ রেওয়ায়েকেওও মানছেন না, বরং মধ্যবর্তী একটি রেওয়ায়েত গ্রহণ করছেন। আর এটি কোনোভাবেই যুক্তিসংগত হতে পারে না।
বিলোপের আরও একটি স্পষ্ট প্রমাণ
রেওয়ায়েতসমূহের পর্যালোচনা থেকে একথা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, প্রথম দিকে নামাজে অনেক কিছুই বৈধ ছিল, যা পরবর্তী কালে বি'লুপ্তি করা হয়েছে। আবু দাউদ শরফে হযরত মুআয রা-এর একটি রেওয়ায়েত আছে, যাতে নামাজের তিনটি পরিবর্তনের উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে…
একটি হচ্ছে, প্রথম দিকে মাসবুক[32] যখন আসত, তখন কোনো নামাজিকে জিজ্ঞাসা করে নিত যে, নামাজ কয় রকআত হয়েছে? অতঃপর তারা ছুটে যাওয়া রকআতগুলো আদায় করে পরবর্তী রকআতে শরীক হত।
এভাবে প্রথম দিকে নামাজে সালামের জবাব দেওয়া জায়েয ছিল। অতঃপর যখন কুরআন করীমের এ আয়াত: وَقُوْمُوْا لِلّٰهِ قٰنِتِيْنَ۰۰۲۳۸ (আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও)[33] নাযিল হয় তখন নামাজে কথা বলা নি'ষি'দ্ধ করা হয়।
একভাবে প্রথম দিকে নামাজ চলাকালীন ইশারায় সালামের জবাব দেওয়া জায়েয ছিল। মসজিদে যিরারের ঘটনায় যখন হুযুর আকরম সা কুবার মসজিদে তাশরীফ নিয়েছিলেন তখন কুবাবাসীর যারাই আসতেন হুযুর সা-কে সালাম করতেন। তিনি নামাজে পড়ার সময় ইশারায় তাঁদেরকে সালামের জবাব দিতেন।
এভাবে মুসলিম শরীফে[34]র বরাতে যে রেয়ায়েতটি উল্লেখ করা হয়েছে তা থেকে এবং অন্যান্য বেওয়ায়েত থেকে জানা যায় যে, প্রথম দিকে শুধু তাকবীরে তাহরীমার সময়ই রফয়ে ইয়াদায়ন করা হত না, বরং সালামের সময়ও রফয়ে ইয়াদায়ন করা হত। যার ওপর হুযুর আকরম সা নিষেধ|রোপ করেন এবং উম্মত এ ব্যাপারে একমত যে, সালামের সময় রফয়ে ইয়াদায়ন বি'লুপ্ত হয়ে গেছে।
মুসলিম শরীফেরই উপর্যুক্ত রেওয়ায়েতের ওপর সাথেই হযরত জাবির ইবনে সামুরা রা-এর আরও একটি রেওয়ায়েত রয়েছে, যাতে হুযুর সা সালাম ছাড়াও অন্যান্য জায়গায় রফয়ে ইয়াদায়ন করার ব্যাপারে নিষেধ|জ্ঞা জারি করেছেন এবং নামাজে ধীরস্থিরতা বজায় রাখতে বলেছেন। সেই রেওয়ায়েতটি হচ্ছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ؛ قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ، فَقَالَ: «مَا لِيْ أَرَاكُمْ رَافِعِيْ أَيْدِيْكُمْ كَأَنَّهَا أَذْنَابُ خَيْلٍ شُمْسٍ؟ اسْكُنُوْا فِي الصَّلَاةِ».
‘হযরত জাবির ইবনে সামুরা রা বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সা আমাদের কাছে তাশরীফ আনেন এবং ইরশাদ করেন, ‘কি ব্যাপার! তোমাদেরকে হাত ওঠাতে দেখছি, পাগলা ঘোড়ার লেজ নাড়ানোর মতো? নামাজে ধীরতা অবলম্বন করো।”[35]
এ রেওয়ায়েতটি পূর্ববর্তী রেওয়ায়েত থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইমাম নববী রহ-এর হাদীসদুটোকে একই বলে গণ্য করা সঠিক হয়নি। এ হাদীসে যে রফয়ে ইয়াদায়নের আলোচনা রয়েছে, তা সালাম ছাড়া অন্যান্য জায়গায় করা রফয়ে ইয়াদায়নের। এর ওপরই হুযুর নিষেধ|জ্ঞ| আরোপ করেছেন এবং ধীরতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘নামাজে ধীরতা অবলম্বন করো’-এর প্রকৃত অর্থ এটিই।
যদি ধরেও নিই, ঘটনাদুটো একই, সালামের সময়ে রফয়ে ইয়াদায়নকে অন্যান্য জায়গার রফয়ে ইয়াদায়নের ওপর কিয়াস করা যেতে পারে। কেননা যখন সালামের সময়ের রফয়ে ইয়াদায়ন নামাজের জন্য নেতিবাচক ও ধীরস্থিরতার ন'ষ্ট'ক|রী হয় তাহলে অন্যান্য জায়গায় রফয়ে ইয়াদায়নের অবস্থাও এমনই হবে। সুতরাং সবগুলোর হুকুম তো একই হবে। কাজেই এ রেওয়ায়েতটি ছাড়াও অন্যান্য প্রমাণ বিলোপের স্পষ্ট দলিল।
সর্বদা রফয়ে ইয়াদায়নের কোনো দলিল নেই
সবসময় রফয়ে ইয়াদায়ন করা কোনো হাদীস থেকে প্রমাণিত নয় অর্থাৎ হুযুর আকরম সা সর্বদা রফয়ে ইয়াদায়ন করেছেন এর কোনো প্রমাণ নেই, বরং খুব সম্ভব তিনি সজোরে আমীন বলার মতো কদাচিৎ রফয়ে ইয়াদায়ন করে থাকবেন। সুতরাং হযরত (শায়খুল হিন্দ) জবাবে সর্বদা রফয়ে ইয়াদায়ন করার দলিল তলব করছেন। কেননা সেটি ছাড়া দাবি প্রমাণিত হতে পারে না।
[متن ادلۂ کاملہ]
دفعۂ اول: آپ ہم سے رَفْعِ یَدَیْن نہ کرنے کی حدیثِ صحیح مُتَّفَقْ علیہ مانگتے ہیں، جو در باۂ عدمِ رفع، نَصِّ[36])) صریح بھی ہو، ہم آپ سے دوامِ رفعِ یَدَیْن کی نَصِّ صریح مُتَّفَقْ علیہ کے طالب ہیں، اگر ہو تو لائیے اور دس کے بدلے بیس لے جائیے، ورنہ کچھ تو شرما ئیے۔
‘প্রথম দফা: আপনারা আমাদের কাছে রফয়ে ইয়াদায়ন না করার ব্যাপারে সহীহ মুত্তাফাক আলাইহি হাদীস দাবি করেছেন এবং রফয়ে ইয়াদায়ন বিষয়ে নসসে সরীহও হবে। আমরা আপনাদের সমীপে সবসময় রফয়ে ইয়াদায়ন করার পক্ষে নসসে সরীহ মুত্তাফাকুন আলাইহি হাদীস দাবি করছি। যদি থাকে, উপস্থাপন করুন এবং দশের বদলে ২০ নিয়ে যান। নতুবা একটু হলেও লজ্জিত হোন।’
রফয়ে ইয়াদায়ন শেষ আমল হওয়ারও কোনো দলিল নেই
একই সঙ্গে একথারও কোনো প্রমাণ নেই যে, রফয়ে ইয়াদায়ন হুযুর সা-এর সর্বশেষ আমল ছিল এবং রফয়ে ইয়াদায়ন বর্জন করার আমল ছিল প্রথম দিকের। যদি এমন কোনো দলিল হলে তবেই বলা যেত যে, প্রথমে রফয়ে ইয়াদায়ন ছিল না, পরে পরিবর্ধিত হয়েছে। হযরত (শায়খুল হিন্দ) u প্রতিপক্ষের কাছে রফয়ে ইয়াদায়ন সর্বশেষ আমল হওয়ার দলিল তলব করেছেন। যা আজ পর্যন্ত কেউ পেশ করতে পারেনি। কিয়ামত পর্যন্ত কেউ পেশ করতে পারবে না।
؏ صلائے عام ہے یا رانِ نکتہ دان کے لئے۔
‘সাধারণ আবেদন জ্ঞানী বন্ধুদের জন্য।’[37]
আর দলিলে অবকাশ রয়েছে যে, নসসে সরীহ ও মুত্তাফাক আলায়হি হাদীসের প্রয়োজন নেই, প্রণিধানযোগ্য বর্ণনা যদিও সেটি হাসান লি-গায়রিহি স্তরের হয় একথা প্রমাণ করুন।
[متن ادلۂ کاملہ]
اور یہ بھی نہ ہو تو آپ آخری وقت نبوی ﷺ ہی میں کسی نَصّ سے آپؐ کا رفعِ یدین کرنا ثابت کیجئے، اور دس کی جگہ بیس لیجئے، اور نہ ہو سکے تو پھر کسی کے سامنے مُنہ نہ کیجئے! زیادہ وُسْعَت چاہئے تو ہم صحیح کی بھی قید نہیں لگاتے، چہ جائے کہ مُتَّفَقْ عَلَیْہ ہو۔
‘আর এতে যদি না হয়, তবে আপনি নবীজী সা-এর শেষ সময়ে কোনো স্পষ্ট নস দ্বারা রফয়ে ইয়াদায়ন প্রমাণ করুন। আর সেক্ষেত্রে দশের জায়গায় বিশ নিয়ে যান। আর না পারলে কারো সামনে মুখ দেখাবেন না! আরও সুবিধা চান? তাহলে সহীহ হওয়ার শর্ত করছি না, মুত্তাফাক আলায়হি তো নয়ই।’
হাদীসের অনুসারী কারা?
যখন রফয়ে ইয়াদায়ন না সবসময়ের আমল হওয়া প্রমাণিত, না সর্বশেষ আমল হওয়া প্রমাণিত। আর রফয়ে ইয়াদায়ন বিলুপ্ত হওয়ার দলিল বিদ্যমান তখন বিলু'প্ত হাদীসের ওপর আমলকারীরা কি হাদীসের অনুসারী হবে, নাকি বিলোপকারী ও আমলযোগ্য হাদীসের ওপর আমলকারীরা সুন্নতে নববীর অনুসারী হবে?
[متن ادلۂ کاملہ]
اگر اِس پر بھی آپ سے کچھ نہ بَنْ آئے تو پھر آپ ہی فرمائیں کہ اب مُتَّبِعِ حدیث وسنت کون ہے؟ آپ یا ہم؟
‘যদি এর ওপর আপনার পক্ষে করা সম্ভব না হয়, তাহলে আপনারাই বলুন যে, হাদীস ও সুন্নতের অনুসারী কে? আপনি না আমরা?’
হাদীসসমূহে পারস্পরিক কোনো বিরোধ নেই
যেসব ব্যক্তি একথা মনে করেন যে, রফয়ে ইয়াদায়নের বিষয়ে রেওয়ায়েতসমূহ পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ, তাদের এই ধারণ সঠিক নয়। বিরোধ সেই পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে যখন অগ্র-পশ্চাৎ ও বিলে|পকারী ও বি'লু'প্ত ইত্যাদি প্রমাণিত না হয়। আর রফয়ে ইয়াদায়ন ও রফয়ে ইয়াদায়ন বর্জনে শক্তিশালী দলিল ও বিভিন্ন বিশুদ্ধ রেওয়ায়েতসমূহ দ্বারা অগ্র-পশ্চাৎ ও বিলোপকারী ও বি'লু'প্ত সুনির্দিষ্ট, যেমনটি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। অতএব যেসব হযরাত রেওয়ায়েতের সংখ্যাধিক্যের কারণে বা সনদের বলিষ্ঠতার জন্য রফয়ে ইয়াদায়নের রেওয়ায়েতসমূহের অগ্রাধিকার দেন তারা শুধুই নিজস্ব মতের পুজো করেন। তাদেরকে হাদীসের অনুসারী বলা যায় না। আর যেসব ব্যক্তি রফয়ে ইয়াদায়ন ব'র্জনের রেওয়ায়েতসমূহের ওপর আমল করেন, তাঁরা বিলে|পকারী রেওয়ায়েতসমূহের ওপর আমল করেন এবং বিলুপ্তি বিভিন্ন রেওয়ায়েত, পারস্পরিক আমল ও শক্তিশালী দলিলে প্রমাণিত। কাজেই এতে কোনো মতের দখল ব্যতিরেকে হাদীসের ওপর আমল করার মতো। যার থেকে উত্তম আর কোনো পথ হতে পারে না।
[متن ادلۂ کاملہ]
در صورتیکہ دوامِ رفع، اور آخر وقت میں رفع کسی حدیث سے ثابت نہ ہوا، تو بقاؤ نسخِ رفع سے احادیثِ رفع ساکت ہوں گی، اور اس سبب سے احادیثِ نسخ وترک، رفع کے مُعارِض نہ ہوں گی، جو آپ کو یہ گنجائش ملے کہ احادیثِ رفع کو احادیث ترک پر ترجیح دنے کے واسطے آمادہ ہوں۔
مگر اِس صورت میں حنفی مُتِّبِعِ حدیث ہوں گے، اور آپ اپنی رائے کے تابع، اور اتنی بات آپ بھی جانتے ہوں گے کہ احادیثِ ترکِ رفع بہر حال آپ کی رائے نارسا اور اجتہادِ ناروا سے کہیں بہتر ہیں۔
‘এ অবস্থায় সবসময় রফয়ে ইয়াদায়ন এবং শেষ সময়ে রফয়ে ইয়াদায়ন কোনো হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। কাজেই অন্যান্য জায়গায় রফয়ে ইয়াদায়ন বিলুপ্তি থেকে রফয়ে ইয়াদায়নের হাদীস স্থগিত হবে। আর এ কারণে বিলু-প্তি ও ব-র্জনের হাদীসসমূহ রফয়ে ইয়াদায়নের (হাদীসসমূহের) বিরোধী হবে না। যাতে আপনি এই সুবিধা পান যে, রফয়ে ইয়াদায়নের হাদীসমূহকে বর্জনের হাদীসসমূহের ওপর প্রাধান্য দেওয়ার জন্য আগ্রহী হয়েছেন।
কিন্তু এ অবস্থায় হানাফীরা হাদীসের অনুসারী হবেন এবং আপনি নিজস্ব মতের পূজ|রি। আর এটুকু কথা আপনিও হয়তো জানেন যে, রফয়ে ইয়াদায়ন বর্জনের হাদীসসমূহ মনগড়া মত ও অসংগত গবেষণা থেকে অনেক উত্তম।’
একটি সন্দেহের অপনোদন
যদি কারো এ সন্দেহ হয় যে, রফয়ে ইয়াদায়ন বর্জনের অর্থ রফয়ে ইয়াদায়নের অনস্তিত্ব (রফয়ে ইয়াদায়ন না করা)। আর অনস্তিত্ব অস্তিত্ব থেকে পূর্ববর্তী সময়ের হয়। অতএব রফয়ে ইয়াদায়ন না করা পূর্ববর্তী আমল হবে এবং রফয়ে ইয়াদায়ন করা পরবর্তী আমল হবে।
তাহলে এর জবাব হচ্ছে, ‘বর্জন’ অর্থ ‘ক্রিয়ার অস্বীক|র’ করা নয়। বরং এখানে বর্জনের অর্থ হচ্ছে, একটি আমল যা পূর্বে প্রচলিত ছিল, পরবর্তী সময়ে সেটি স্থগিত করা হয়েছে। অতএব রফয়ে ইয়াদায়ন বর্জনের হাদীসসমূহ স্বয়ং বিলু'প্তির সবচেয়ে বড় দলিল। যার পর অন্য কোনো দলিলের প্রয়োজন পড়ে না।
[متن ادلۂ کاملہ]
مگر یہ یاد رہے کہ «ترک» اُن احادیث میں بمعنیٰ «عدمِ فعل» نہیں ہے، بلکہ موقوفی بعد رواج مراد ہے، جس سے نسخِ رفع عَیَاں ہے۔
‘তবে স্মরণ রাখতে হবে যে, উপর্যুক্ত হাদীসসমূহে ‘বর্জন’ মানে ‘ক্রিয়ার অস্বীক|র’ নয়, বরং প্রচলনের পর স্থগিত করাই উদ্দেশ্য। যার দ্বারা রফয়ে ইয়াদায়নের বিলু-প্তি সুষ্পষ্ট।’
অনুবাদক: লেখক, গবেষক ও পীর সাহেব বায়তুশ শরফ, চট্টগ্রাম
[1] ইবনে আবিদীন, রদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার, দারুল ফিকর লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’, বয়রুত, লেবনান (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৪১২ হি. = ১৯৯২ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ৫০৬
[2] আদ-দারদীর, আশ-শারহুস সাগীর, দারুল মাআরিফ, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ৩২৩-৩২৪
[3] আবদুর রহমান আল-জযীরী, আল-ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবাআ, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৪২৩ হি. = ২০০৩ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ২২৬
[4] আশ-শাফিয়ী, উম্ম, দারুল মা’রিফা লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১০ হি. = ১৯৯০ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ১2৬
[5] আন-নাওয়াওয়ী, আল-মাজমূ’ শারহুল মুহাযযাব, দারুল ফিকর লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’, বয়রুত, লেবনান, খ. ৩, পৃ. ৩৯৯
[6] আশ-শাফিয়ী, উম্ম, খ. ১, পৃ. ১2৬
[7] আন-নাওয়াওয়ী, আল-মাজমূ’ শারহুল মুহাযযাব, খ. ৩, পৃ. ৪৪৮
[8] আবদুর রহমান আল-জযীরী, আল-ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবাআ, খ. ১, পৃ. ২২৬
[9] আল-বুখারী, আস-সহীহ, দারু তওকিন নাজাত লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২২ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ১৪৮, হাদীস: ৭৩৬
[10] (ক) যফর আহমদ উসমানী, ই’লাউস সুনান, দারুল ফিকর লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২১ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ৮২৫-৮২৬, হাদীস: ৮১৫; (খ) আত-তিরমিযী, আস-সুনান, মুস্তফা মুস্তফা আল-বাবী আল-হালাবী অ্যান্ড সন্স লাইব্রেরি অ্যান্ড প্রিন্টিং কোম্পানি, কায়রো, মিসর (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৩৯৫ হি. = ১৯৭৫ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ৪০, হাদীস: ২৫৭; (গ) আন-নাসায়ী, আল-মুজতাবা মিনাস সুনান, মাকতাবুল মাতবুআত আল-ইসলামিয়া, হলব, সিরিয়া (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৪০৬ হি. = ১৯৮৬ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ১৯৫, হাদীস: ১০৫৮
[11] আত-তিরমিযী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ৪১, হাদীস: ২৫৭
[12] (ক) ইবনে হাজর আল-আসকলানী, আত-তালখীসুল হবীর ফী তাখরীজি আহাদীসির রাফিয়ী আল-কবীর, দারুল কুতুব আল-?
মূল: শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহ.
তাসহীল ও তারতীব
শায়খুল হাদীস মুফতি সাইদ আহমদ পালনপুরী (রহ.)
মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আমীন পালনপুরী
মুসলিম বাংলা