ত্রাণ বন্ধে তীব্র খাদ্য সংকট: গাজার কমিউনিটি কিচেনে বেঁচে থাকার লড়াই

ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে
গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ইসরায়েলের ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার পর খাদ্য সংকটে লক্ষ লক্ষ গাজাবাসী, বিশেষ করে শিশু ও কিশোররা, সামান্য খাবারের আশায় কমিউনিটি কিচেনের দিকে ছুটছেন।
গাজা সিটির একটি কমিউনিটি কিচেনে ১০ বছর বয়সী ইউসুফ আল-নাজ্জার জানান, প্রতিদিন ভোরে একটি পুরোনো হাঁড়ি হাতে নিয়ে তিনি খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়ান। সেখানে শত শত মানুষ খাবারের জন্য ঠেলাঠেলি করে, এমনকি ছোট শিশুরা মাটিতে পড়ে যায়। যুদ্ধে বাবাকে হারানোর পর পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব এখন ইউসুফের কাঁধে। তার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন, মা ও বোনের সঙ্গে শান্তিতে একবেলা খাবার খাওয়া। তবে প্রায়শই হুড়োহুড়িতে হাঁড়ি পড়ে গেলে খাবার নষ্ট হয় এবং তাকে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়, যা ক্ষুধার কষ্টের চেয়েও বেশি যন্ত্রণাদায়ক।
এএফপির ফুটেজে গাজার কমিউনিটি কিচেনগুলোতে অসহায় শিশুদের খাবার সংগ্রহের জন্য মরিয়া চেষ্টা করতে দেখা গেছে। এমনকি এক ব্যক্তিকে ধাতব হাঁড়ি দিয়ে অন্য শিশুকে আঘাত করতেও দেখা যায়। বাস্তুচ্যুত মোহাম্মদ আবু সানাদ জানান, তিনি পাঁচ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে কেবল তার সন্তানদের জন্য এক প্লেট ভাত পাওয়ার আশা করেন। কোনো আয় না থাকায় কমিউনিটি কিচেনের খাবারই তাদের একমাত্র ভরসা।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ইতোমধ্যে তাদের শেষ খাদ্য মজুত বিতরণের কথা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই কমিউনিটি কিচেনগুলোর খাবারও শেষ হয়ে যাবে।
গাজার নুসাইরাত এলাকার বাসিন্দা ৪২ বছর বয়সী আয়েদা আবু রায়ালা জানান, তাদের কাছে কোনো আটা বা রুটি নেই এবং বাচ্চাদের খাওয়ানোর মতো কিছুই অবশিষ্ট নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে বা ঠান্ডায় দাঁড়িয়ে থেকেও অনেক সময় খাবার শেষ হয়ে যায়। বিমান হামলায় তার বাড়ি ধ্বংসের পর এখন তারা পাতলা ত্রিপলের নিচে বসবাস করছেন। একদিন তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পরও খাবার না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফেরায় তার মনে হয়েছিল, সন্তানদের কান্না দেখার চেয়ে মৃত্যুও ভালো।
বৈত লাহিয়ায় একটি দাতব্য কিচেন চালান ৫২ বছর বয়সী ফাতেন আল-মাধুন। ১৩ জন স্বেচ্ছাসেবকের সহায়তায় কাঠের আগুনে রান্না করা এই কিচেনটিতে প্রতিদিন ৫০০ জনের খাবার তৈরি হলেও ৬০০ জনের বেশি মানুষ আসেন। মাঠ থেকে আটা উধাও এবং বেকারিগুলো বন্ধ থাকায় সাধারণ সবজিও এখন দুষ্প্রাপ্য। ফলে কমিউনিটি কিচেনই এখন লাখো গাজাবাসীর একমাত্র অবলম্বন।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের বাসিন্দা আলা আবু আমিরা জানান, সামান্য দেরি হলেই খাবার পাওয়া যায় না। মানুষ ঠেলাঠেলি করে এবং পদদলিত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। তিনি এক শিশুকে গরম হাঁড়ির ছ্যাঁকায় পুড়ে যেতে দেখেছেন। কখনও আধাসিদ্ধ ভাত, কখনও বাসি মটরশুঁটি বা বিনের টিনজাত খাবার খেয়ে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
তবে এত কষ্টের পরেও রায়ালা হার মানতে নারাজ। তিনি বলেন, "আগামীকাল আরও ভোরে যাব, হয়তো একটা প্লেট ভাত পাব। আমরা শুধু সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চাই।"