দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ বালুচর স্যান্ডি কে ‘দখলে নিল’ বেইজিং

দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত একটি বিরোধপূর্ণ বালুচর চীনের কোস্টগার্ড দখলে নিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।
এই ঘটনা ফিলিপিন্সের সঙ্গে দেশটির আঞ্চলিক বিরোধ আরও বাড়াবে বলে আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
চীনা গণমাধ্যম সিসিটিভির প্রকাশিত ছবিতে স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের বিরোধপূর্ণ প্রবালপ্রাচীর স্যান্ডি কে-তে কালো পোশাক পরা কোস্টগার্ডের চার কর্মকর্তাকে চীনের জাতীয় পতাকা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
এপ্রিলের শুরুর দিকে চীন ওই প্রবালপ্রাচীরে ‘সামুদ্রিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সার্বভৌম অধিকার প্রয়োগ করেছে’, সিসিটিভি এমনটাই জানিয়েছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
দক্ষিণ চীন সাগরের বেশকিছু দ্বীপের মালিকানা নিয়ে চীন ও ফিলিপিন্সের পাল্টাপাল্টি দাবি আছে।
রোববার পরে ফিলিপিন্সও তিনটি বালুচরে নামার কথা জানায় এবং চীনের ছবির অনুকরণে তাদের কর্মকর্তারাও একটি প্রবালপ্রাচীরে জাতীয় পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে আছে এমন একটি ছবি প্রকাশ করে।
অবশ্য ফিলিপিন্সের নিরাপত্তা বাহিনী যেসব বালুচরে নেমেছে, তার মধ্যে কোনোটি স্যান্ডি কে কিনা তা নিশ্চিত হতে পারেনি বিবিসি।
এক বিবৃতিতে ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স ওয়েস্ট ফিলিপাইন সী জানায়, তারা একটি বালুচর থেকে এক হাজার গজ দূরে চীনা কোস্টগার্ডের একটি নৌযান এবং আরও ৭টি চীনা মিলিশিয়া নৌযানের ‘অবৈধ উপস্থিতি’ দেখতে পেয়েছিল।
“পশ্চিম ফিলিপাইন সাগরে দেশের সার্বভৌমত্ব, সার্বভৌম অধিকার ও কর্তৃত্ব রক্ষায় ফিলিপাইন সরকারের অবিচল নিষ্ঠা ও দৃঢ় অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ এই অভিযান,” বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
রোববারই পরে এক বিবৃতিতে চীনা কোস্ট গার্ড জানায়, তারা তিয়েশিয়ান প্রবালপ্রাচীরে ৬ ফিলিপিনোর ‘অবৈধভাবে নামার ঘটনায় ব্যবস্থা নিয়েছে’।
স্যান্ডি কে চীনে তিয়েশিয়ান প্রবালপ্রাচীর নামে পরিচিত।
“চীনের দিক থেকে সতর্কবার্তা ও নিরুৎসাহিত করার পরও ফিলিপিন্সের ৬ জন অবৈধভাবে তিয়েশিয়ান প্রবালপ্রাচীরে নামে। চীনের কোস্টগার্ডের সদস্যরা এরপর ওই প্রবালপ্রাচীরে নামে ও তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়,” রোববার সন্ধ্যায় দেওয়া বিবৃতিতে চীনা কোস্ট গার্ডের মুখপাত্র লিউ দেজুন এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে প্যারিসভিত্তিক এক বার্তা সংস্থা।
বিবৃতিতে এ বিষয়ে আর বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি, ছয় ফিলিপিনোর পরিচয়ও জানানো হয়নি।
“ফিলিপিন্সকে অবিলম্বে এ ধরনের অবৈধ পদক্ষেপ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। এ কর্মকাণ্ড চীনের সার্বভৌমত্বকে লঙ্ঘন করেছে,” বলেছেন লিউ।
সাম্প্রতিক সময়ে চীন ও ফিলিপিন্সের মধ্যে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ ক্রমাগত বাড়তে দেখা যাচ্ছে। কথার লড়াইয়ের পাশাপাশি দুই দেশের নৌযানের মধ্যে ধাক্কা লাগার খবরও প্রায়শই আসছে।
স্যান্ডি কে বালুচরটি থিতু দ্বীপে ফিলিপিন্সের সামরিক চৌকির খুব কাছে অবস্থিত। এই দ্বীপটি পাগ-আসা নামেও পরিচিত। ওই এলাকায় চীনের গতিবিধি নজরে রাখতে ম্যানিলা এই দ্বীপটি ব্যবহার করে আসছে।
বিবিসি বলছে, চীন ২০০ বর্গমিটার আয়তনের স্যান্ডি কে স্থায়ীভাবে দখলে নিয়েছে এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, তাদের কোস্ট গার্ডের সদস্যরাও দ্বীপটি ছেড়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
হোয়াইট হাউজ বলেছে, দক্ষিণ চীন সাগরের প্রবালপ্রাচীরটি বেইজিংয়ের দখলে যাওয়ার ‘খবর সত্যি হলে তা খুবই উদ্বেগজনক’।
“এ ধরনের পদক্ষেপ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। হোয়াইট হাউজ তার অংশীদারদের সঙ্গে এ নিয়ে নিবিড় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে,” মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জেমস হিউয়িট এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।
এমন এক সময়ে চীনের এ পদক্ষেপ এলো যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপিন্স তাদের বার্ষিক যুদ্ধ পরিস্থিতি মহড়া ‘বালিকাতান মহড়া’ চালাচ্ছে।
চীন এ যৌথ মহড়াকে উসকানিমূলক অ্যাখ্যা দিয়েছে।
তবে ফিলিপিন্সের সামরিক বাহিনী বলছে, এই মহড়া তাদের জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় এবং এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশকে উদ্দেশ্য করে হচ্ছে না।
দক্ষিণ চীন সাগরে কার কতটুকু কর্তৃত্ব তা নিয়ে বিরোধ শতাব্দীপ্রাচীন, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ নিয়ে উত্তেজনা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
চীনই সাগরটির বেশিরভাগ অংশ ও দ্বীপের মালিকানা দাবি করছে, তারা সাগরটিতে কৃত্রিম দ্বীপও বানিয়েছে এবং নিয়মিত নৌ টহল চালিয়ে যাচ্ছে।
তাদের দাবি করা অনেক এলাকা ও দ্বীপ ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স ও ব্রুনাইও দাবি করছে।