পেহেলগামে হামলা: টিআরএফের দায় অস্বীকার, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক উত্তপ্ত

ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুক হামলা চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যার দায় স্বল্প পরিচিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) স্বীকার করেছে বলে প্রথমে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়। তবে পরে টিআরএফ একটি বিবৃতি দিয়ে এই হামলায় নিজেদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে, দাবি করে ভারত মিথ্যা দাবি ছড়িয়ে কাশ্মিরি প্রতিরোধ আন্দোলনকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে।
শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআরএফ জানায়:
"টিআরএফকে এই ঘটনার জন্য যেকোনোভাবে দায়ী করার বিষয়টি মিথ্যা এবং কাশ্মিরি প্রতিরোধ আন্দোলনকে কলঙ্কিত করার সাজানো একটি প্রচারের অংশ।"
টিআরএফ অভিযোগ করে, পেহেলগামে হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে একটি অনুমোদনহীন বার্তা পোস্ট করা হয়েছিল। তারা অভ্যন্তরীণ তদন্তের ভিত্তিতে দাবি করে, এটি ছিল ভারতের সাইবার অনুপ্রবেশের ফল, যা ভারতীয় গোয়েন্দাদের একটি পরিচিত ডিজিটাল কৌশল।
গত মঙ্গলবার কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক নিহত হন। এর পরপরই ভারত সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়:
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘‘সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদে’’ সহায়তার অভিযোগ আনে।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে।
উভয় দেশের মধ্যকার প্রধান স্থল সীমান্ত বন্ধ করে।
পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার এবং ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় সামরিক উপদেষ্টাকে প্রত্যাহার করে নেয়।
দিল্লি থেকে হাইকমিশনে কর্মীদের সংখ্যা কমানোরও ঘোষণা দেয়।
ভারতের দাবি, এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে।
ভারতের এই আকস্মিক সিদ্ধান্তের জবাবে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (এনএসসি) জরুরি বৈঠক করে। তারা ভারতের বিরুদ্ধে প্রায় একই ধরনের পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেয় এবং নিজেদের কূটনৈতিক নীতিতে পরিবর্তন আনার কথা জানায়।
টিআরএফ: পরিচয় ও পটভূমি
দিল্লি-ভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টাল (SATP) জানায়:
গোষ্ঠীর আত্মপ্রকাশ: ২০১৯ সালে।
সম্পর্কিত সংগঠন: পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইয়্যেবা (LET)।
কার্যক্রম: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন ফোরামে কাশ্মির রেজিস্ট্যান্স নাম ব্যবহার করে সক্রিয়তা দেখায়।
লস্কর-ই-তইয়্যেবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষিদ্ধ ঘোষিত বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। ২০০৮ সালের মুম্বাইয়ের তিন দিনব্যাপী ভয়াবহ হামলাসহ ভারত ও পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে হামলার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে এ সংগঠনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।
সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের প্রধান আজাই সাহনি মন্তব্য করেছেন:
“টিআরএফ মূলত লস্কর-ই-তইয়্যেবার একটি শাখা। পাকিস্তান যখন ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF) এর চাপের মধ্যে পড়েছিল, তখন আন্তর্জাতিক সমালোচনা এড়াতে জম্মু ও কাশ্মিরে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ ঢাকতে এ ধরনের গোষ্ঠী তৈরি করে।”