ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের দূত

ইউক্রেন সংঘাত নিষ্পত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা তুলে ধরতে শুক্রবার ক্রেমলিনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফ। একদিন আগেই সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ আগ্রাসন বন্ধে পুতিনকে সরাসরি আহ্বান জানান।
পোমস্কো থেকে এএফপি জানায়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে মধ্যস্থতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। তবে একাধিক দফা আলোচনা সত্ত্বেও ক্রেমলিনের কাছ থেকে বড় কোনো ছাড় আদায় করতে পারেননি তিনি।
২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। অল্প কিছুদিনে দেশটি দখলের পরিকল্পনা থাকলেও সংঘাত এখন রূপ নিয়েছে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে, যাতে মারা গেছে হাজার হাজার মানুষ।
রুশ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, ক্রেমলিনে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন স্টিভ উইটকফ। তারা একে অপরের সঙ্গে হেসে করমর্দন করেন এবং ইংরেজিতে কয়েকটি কথা বলেন।
বহুজাতিক সম্পদশালী এই বিনিয়োগকারী ওয়াশিংটনের শান্তি প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে পুতিনের সঙ্গে এটি ছিল তাঁর চতুর্থ বৈঠক।
সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকলে আলোচনা থেকে সরে আসার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার কিয়েভে রুশ হামলায় ১২ জন নিহত হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘ভ্লাদিমির, থামো!’ তিনি আরও লেখেন, ‘চলো এবার শান্তিচুক্তি সম্পন্ন করি!’
রাশিয়া বৃহস্পতিবার জানায়, তারা চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রস্তুত, তবে কিছু বিষয় আগে সমাধান করতে হবে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সিবিএস নিউজকে বলেন, ‘এখনও কিছু নির্দিষ্ট বিষয় আছে যা পরিমার্জন প্রয়োজন, আমরা তা নিয়েই কাজ করছি।’
চাপ ও সমঝোতা-
যুক্তরাষ্ট্র তার শান্তি পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশ না করলেও ধারণা করা হচ্ছে, তারা যুদ্ধের সম্মুখসীমা স্থবির করে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে এবং শান্তির বিনিময়ে ক্রিমিয়া রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকার বিষয়টি মেনে নেওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া।
শুক্রবার টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘ক্রিমিয়া রাশিয়ারই থাকবে। এবং জেলেনস্কি এটি বুঝে গেছেন।’
তবে ইউক্রেন বলেছে, তারা রাশিয়ার কাছে কোনো ভূখণ্ড ছাড় দেবে না এবং ক্রিমিয়ার ওপর রুশ নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
তবুও, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন যে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে কূটনৈতিক উপায়ে দখলকৃত এলাকা ফেরত আনার চেষ্টা করতে হতে পারে।
পশ্চিমা দেশগুলো পুতিনের ওপর পর্যাপ্ত ‘চাপ’ প্রয়োগ করছে না—এ অভিযোগও তুলেছেন জেলেনস্কি। শুক্রবার তিনি জানান, রাশিয়ার ছোড়া উত্তর কোরিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি বহু যন্ত্রাংশ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আগ্রাসনের শিকার কোনো দেশ কেবল একটি পক্ষের বিরুদ্ধে নয়, বরং একটি সহযোগী চক্রের বিরুদ্ধেই লড়ছে।’
‘পাঁচ অঞ্চল’ নিয়ে বিতর্ক
গত মাসে একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন পুতিন, যা জেলেনস্কি গ্রহণ করেছিলেন এবং বহুবার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
জেলেনস্কির প্রতি তীব্র সমালোচনায় সুরে ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেন, রাশিয়ার প্রধান ছাড় হবে—‘সম্পূর্ণ দেশ দখলের পরিকল্পনা থেকে সরে আসা।’
রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা দখল করে রেখেছে। ক্রিমিয়ার পাশাপাশি আরও চারটি অঞ্চল দখলের ঘোষণা দিয়েছে মস্কো।
এর আগে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উইটকফ বলেন, শান্তি চুক্তি ‘পাঁচ অঞ্চলের’ ভবিষ্যতের ওপর নির্ভর করছে। তাঁর এই বক্তব্যের কড়া জবাব দেন জেলেনস্কি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দূতকে ‘রুশ বর্ণনাভাষ্য প্রচারকারী’ বলে অভিযুক্ত করেন।
উইটকফ শুক্রবার রাশিয়ায় পৌঁছানোর সময় মস্কোর উপকণ্ঠে এক গাড়িবোমা হামলায় রাশিয়ার একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার নিহত হওয়ার খবর দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ। কিয়েভ এই হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে আগের হামলাগুলোর মতো এটিও ইউক্রেনের কাজ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১০০টির বেশি ড্রোন ছুড়েছে রাশিয়া—বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী।
রাশিয়ার এক ড্রোন হামলায় মধ্য ইউক্রেনের পাভলোগ্রাদ শহরে এক শিশুসহ অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা।